দেশ জুড়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে অবশেষে মেমন-বিতর্কে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন সলমন খান। শনিবার গভীর রাতে সলমন খানের কয়েকটি টুইট নিয়ে সরগরম হয় বলিউড-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের তোয়াক্কা না করেই ইয়াকুব মেমনের ফাঁসি নিয়ে নিজের ‘রায়’ জাহির করেন বলিউড সুপারস্টার সলমন খান। আর, রবিবার তা নিয়েই দেশ জুড়ে বিতর্কের ঝড় উঠে। সলমনের হয়ে অনেকে সাফাই দিলেও কার্যত তাঁর সপক্ষে দা়ঁড়াননি কেউই। এ বার সেই তালিকায় যোগ হয় বিজেপি সাংসদ কিরিত সোমাইয়ার নাম। মেমন-বিতর্কে সলমনকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি করেন তিনি। এ দিন মুম্বইয়ে তাঁর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি যুব মোর্চার কর্মী-সমর্থকেরা। এর আগে ইয়াকুবকে নির্দোষ বলে দাবি করলেও এ দিন সন্ধ্যায় টুইটে সলমনের দাবি, “ইয়াকুব নির্দোষ, সে কথা কখনই বলিনি।” দেশের বিচার ব্যবস্থার উপরে তাঁর সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন বলিউড অভিনেতা।
১৯৯৩ সালে মুম্বইয়ে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের অন্যতম চক্রী ইয়াকুব মেমনের ফাঁসি রদের পক্ষে সওয়াল করা ছাড়াও শনিবারের গভীর রাতের টুইটে কার্যত তাকে নির্দোষ বলে রায় দেন সলমন। শুধু তাই নয়, কাঠগড়ায় দাঁড় করান ইয়াকুবের ভাই তথা ওই মামলার আর এক অন্যতম চক্রী টাইগার মেমনকে। টাইগারকে ‘কাপুরুষ’ বলে টুইট করেন তিনি। শুধু তাই নয়, ইয়াকুবকে ফাঁসি দিলে তাতে মানবতাকেই হত্যা করা হবে বলেও মন্তব্য করেন বজরঙ্গি ভাইজান।
মুম্বই বিস্ফোরণের ঘটনার ২২ বছর পর ওই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত ইয়াকুবকে ফাঁসির সাজা দেয় সুপ্রিম কোর্ট। আগামী ৩০ জুলাই নাগপুর সেন্ট্রাল জেলে তার ফাঁসির আদেশ কার্যকর করা হবে। তা নিয়ে আগেই সরব হয় সিপিএম। তাদের মতে, বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন উন্নত দেশে মৃত্যদণ্ডের মতো কঠোর সাজা উঠে গিয়েছে। চিনের মতো কমিউনিস্ট দেশেও এর হার কমে আসছে। তা ছাড়া, ইয়াকুব মুম্বই বিস্ফোরনের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকলেও আত্মসমর্পণ করেছে। শুধু তাই নয়, তার কাছে এ বিষয়ে আরও তথ্য রয়েছে। তা সত্ত্বেও তাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হচ্ছে।
সিপিএম এর বিরোধিতা করলেও প্রকাশ্যে এ ভাবে ইয়াকুবের সপক্ষে মুখ খোলেননি দলীয় নেতৃত্বের কেউই। কিন্তু, ইয়াকুবের পক্ষ নিয়ে টুইটে নজিরবিহীন ভাবে নিজের মতপ্রকাশ করেন সলমন। পলাতক টাইগারকেই দোষী বলে টুইট করেন তিনি। এমনকী, পাকিস্তানে টাইগার আত্মগোপন করে থাকলে তাকে ফেরানোর জন্য পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকেও টুইটারেই আর্জি জানান তিনি।
সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি, দেশ জুড়ে এই নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হওয়ার পর সলমনের বাড়ির বাইরে নিরাপত্তা জোরদার করে মুম্বই পুলিশ। অভিনেতার কঠোর সমালোচনা করেন ১৯৯৩ মুম্বই বিস্ফোরণ মামলার বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি উজ্জ্বল নিকম। সংবাদমাধ্যমে ওই আইনজীবী জানিয়েছেন, এই ধরনের মন্তব্যে সরাসরি আদালত অবমাননার দায়ে পড়বেন সলমন। তাঁর প্রশ্ন, “এমন করা হচ্ছে যেন ইয়াকুব নির্দোষ। সলমনের কাছে এ নিয়ে কী প্রমাণ আছে?”
আর, কী বলছেন সলমন খানের বাবা তথা বলিউড চিত্রনাট্যকার সেলিম খান? ছেলের মন্তব্যের বিরুদ্ধে গিয়ে সেলিম খান জানিয়েছেন, সলমন এমন টুইট না করলেই ভাল করতো। বিষয়টি নিয়ে ছেলের সঙ্গে যে তিনি একমত নন, তা-ও জানিয়েছেন সেলিম। এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয় বলেই তা নিয়ে মন্তব্য করা থেকে সলমনের বিরত থাকা উচিত বলে মত সেলিমের। এমনকী, ইয়াকুব নিয়ে ছেলের কোনও ধারণা নেই বলেও সাফাই দিয়েছেন তিনি। এ মন্তব্যকে সিরিয়াস ভাবে না নেওয়ার জন্য আবেদনও করেছেন সেলিম।
তবে এ ইস্যুতেই যে সক্রিয় হতে চলেছে বিজেপি, তার ইঙ্গিত মিলেছে। সোমবার বিষয়টি লোকসভায় ওঠানো হবে হবে বলে এ দিন জানিয়েছেন সোমাইয়া। এক ধাপ এগিয়ে সোমাইয়ার টুইট, “দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ সলমনের।”
পথ-দুর্ঘটনায় ফুটপাতবাসীকে অনিচ্ছাকৃত ভাবে হত্যা মামলায় সলমনের সপক্ষে মুখ খুললেও এ বার আর তাঁর পাশে দাঁড়াননি গায়ক অভিজিৎ। সলমনের এ ধরনের ‘অর্থহীন’ টুইটকে সমর্থন করেন না বলে জানিয়েছেন গায়ক। শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরের জিজ্ঞাসা, “সলমন কি দেশের বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলছেন?”
বিজেপি-র মুখপাত্র সাইনা এনসি-র দাবি, হিংসার বিরুদ্ধে সরকারের প্রচেষ্টার উল্টো পথে হেঁটে এ ধরনের মন্তব্য করেছেন সলমন।
এ দিন সন্ধ্যায় সলমনের টুইটে আপাতত বিতর্কের ঝড় কিছুটা হলেও স্তিমিত বলে মত অনেকের।
সলমনের নয়া টুইট