শ্রীনগরে গ্রেনেড হানা, রাশ শিথিল মোবাইলে

সরকারি মুখপাত্র রোহিত কানসাল এ দিন সাংবাদিকদের জানান, কাশ্মীরের ১০টি জেলাতেই সোমবার বিকেল থেকে পোস্টপেড মোবাইলের সব লাইন খুলে দেওয়া হবে।

Advertisement

সাবির ইবন ইউসুফ

শ্রীনগর শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:২৭
Share:

বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শনে পুলিশ। শনিবার শ্রীনগরে। পিটিআই

ভূস্বর্গের দরজা আবার পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়ার তিন দিন পর পোস্টপেড মোবাইলে নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করল কেন্দ্র। সোমবার বিকেল থেকে পোস্টপেড মোবাইল ফের চালু হবে বলে শনিবার জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে যাওয়ার অনুরোধও জানানো হয়েছে নাগরিকদের। তবে আজ বিকেলেই খাস শ্রীনগরে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় আহত হয়েছেন সাত জন। পরিস্থিতি ফের থমথমে।

Advertisement

সরকারি মুখপাত্র রোহিত কানসাল এ দিন সাংবাদিকদের জানান, কাশ্মীরের ১০টি জেলাতেই সোমবার বিকেল থেকে পোস্টপেড মোবাইলের সব লাইন খুলে দেওয়া হবে। পর্যটকরা বিনা বাধায় পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। কাশ্মীরে অবশ্য মাত্র ৪০ লক্ষ মানুষের পোস্টপেড মোবাইল রয়েছে। বিত্তশালী, ব্যবসায়ীরাই মূলত তা ব্যবহার করেন। ফলে এই ঘোষণায় আমজনতার কতটা সুরাহা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। সেই সঙ্গে পর্যটক এবং ব্যবসায়ীরা কোনও ভাবে জঙ্গি শাসানির মুখে পড়লে দ্রুত কর্তৃপক্ষকে তা জানানোর কথাও বলেছেন কানসাল। তাঁর আশঙ্কা সত্যি করে এ দিনই গ্রেনেড হামলা ঘটে গিয়েছে শহরে।

আজ বিকেলে শ্রীনগরের হরি সিংহ হাই স্ট্রিটে পসরাওয়ালাদের লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়ে পালিয়ে যায় জঙ্গিরা। এক মহিলা-সহ সাত জন আহত হন। আহতদের এসএমএইচএস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, বাইক-আরোহী দুই যুবকের ছোড়া ওই গ্রেনেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে একটি নর্দমার মধ্যে ফাটে। নয়তো আরও বড় ক্ষয়ক্ষতি হতে পারত। মাছবিক্রেতা মাল্লা বেগম বলছিলেন, ‘‘সব ঠিকই চলছিল। হঠাৎ একটা বাইক এসে কী যে হয়ে গেল! ভাগ্যিস নর্দমায় ফাটল ওটা!’’ নিমেষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ আর আধাসামরিক বাহিনীতে ছয়লাপ পুরো এলাকা।

Advertisement

লক্ষণীয় হল, ৫ অগস্ট সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করা এবং জম্মু-কাশ্মীরকে নিয়ন্ত্রণের ঘেরাটোপে মুড়ে দেওয়ার পর থেকে এ ধরনের আক্রমণ আগেও কয়েক বার হয়েছে। অগস্ট মাসে শ্রীনগরের পারিমপোরা এলাকায় জঙ্গিদের হাতে নিহত হন এক দোকানি। অনন্তনাগে জঙ্গিদের গ্রেনেড নিশানা করে দোকানিদের। অনন্তনাগেই ৫ অক্টোবর গ্রেনেডের ঘায়ে এক পুলিশ এবং এক সাংবাদিক-সহ ১২ জন আহত হন। কিন্তু দোকানবাজারে আক্রমণ দৃশ্যতই সংখ্যায় বেশি। অনেকের মতে, দোকানবাজার খোলা, বিক্রিবাটা হওয়া মানে জীবনযাত্রা কিছুটা স্বাভাবিক হওয়া। সেটা জঙ্গিরা চায় না। এ দিনের আক্রমণস্থলে গত তিন মাস পসরা নিয়ে বসেছেন অনেকেই। লালচকের পোলভিউয়ে রবিবারের বাজার প্রয়োজনে খোলা থেকেছে সপ্তাহভর। গত সপ্তাহেই পুলওয়ামায় ‘আফগান তালিবান’ নামে পোস্টার ফেলে লোকজনকে দোকান না খুলতে, অফিসে না যেতে, ছেলেমেয়েদের স্কুলে না পাঠাতে বলা হয়েছে।

অন্য দিকে প্রশাসনের কাছে চ্যালেঞ্জ হল, ধীরে ধীরে উপত্যকার স্বাভাবিক ছন্দ ফিরিয়ে দেওয়া। সে কারণেই পর্যটনে ছাড়পত্র, মোবাইলে আংশিক ছাড়। এই অবস্থায় নতুন করে জঙ্গি নাশকতা হলে সেই কাজটা কঠিন হবে। পাশাপাশি বিরোধীদের একাংশ বলছেন, জঙ্গি সক্রিয়তার এই সব ঘটনা সরকার কাজে লাগাবে কড়াকড়ির ব্যাপারেও। এ দিন মোবাইলে ছাড় সংক্রান্ত সরকারি বিবৃতিতে যেমন সবিস্তার বলা হয়েছে যে, কাশ্মীরকে জঙ্গিদের হাত থেকে রক্ষা করতেই, মানুষকে বাঁচাতেই ৬৭ দিন ধরে তাঁদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি যে ‘স্বাভাবিক’ নয়, তা এত দিনে কার্যত স্বীকার করে গত কাল প্রশাসনের তরফে বিজ্ঞাপন দিয়ে সাধারণ মানুষের উদ্দেশে বলা হয়েছিল, ‘‘৭০ বছর ধরে কাশ্মীরকে ধোঁকা দেওয়া হয়েছে। জঙ্গি নেতারা নিজেদের সন্তানকে বিদেশে পড়তে পাঠায় আর স্থানীয় কিশোরদের হাতে তুলে দেয় পাথর। এখনও তারা সেই একই হুমকি, গা জোয়ারি চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষ কি তা সহ্য করবেন?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন