বড়জোর দশ হাত দূরে কুপিয়ে, পুড়িয়ে মারা হচ্ছে একটা মানুষকে। মরণযন্ত্রণায় কানফাটানো চিৎকার করছেন মালদহের মহম্মদ আফরাজুল। গোটাটাই ধরে রাখছে ক্যামেরা। মোবাইল ক্যামেরাই হবে হয়তো। জলজ্যান্ত একটা খুন রেকর্ড করতে করতে এক বারও কাঁপছে না ক্যামেরা ধরা হাতটা।
কে তুলছে সেই ভিডিও? পেশাদার কোনও ক্যামেরাম্যান? নাকি আফরাজুলের খুনি— লাল জামা-সাদা প্যান্ট পরা শম্ভুলালের কোনও সঙ্গী? চিত্রগ্রাহক কি সংখ্যালঘু-বিদ্বেষী, না ‘লাভ জেহাদ’ নিয়ে গলা ফাটানো কেউ?
আপাতত জানা যাচ্ছে, ভিডিওটা রেকর্ড করেছিল শম্ভুলালেরই নাবালক ভাইপো। বিশেষ সূত্র উদ্ধৃত করে তেমনই দাবি করেছে সংবাদ সংস্থা পিটিআই। বছর চোদ্দোর সেই ভাইপোর এখনও কোনও খোঁজ মিলেছে কি না, স্পষ্ট নয়। কিন্তু কী ভাবে সে গোটা সময়টায় অবিচল থেকে ওই ভিডিও রেকর্ড করল, তাকে শম্ভু রাজিই বা করিয়েছিল কী ভাবে— সেই প্রশ্ন উঠেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটা প্রথমে দেখে ‘পাকা হাতের কাজ’ বলেই ভেবেছিলেন অনেকে। ভেবেছিলেন, গোটা একটা খুনে দলই রয়েছে এর নেপথ্যে। ভিডিওয় দেখা যায়, প্রায় মসৃণ গতিতে ক্যামেরা বারবার যাতায়াত করছে দাঁড় করানো একটা স্কুটার ও তার থেকে কয়েক হাত দূরের এক গাছতলায়। আফরাজুলকে সেখানেই ফেলে মারছিল শম্ভুলাল। স্কুটার থেকেই কখনও কুড়ুল, কখনও রামদা এনে কোপাচ্ছিল ‘শিকার’কে। সব শেষে ক্ষতবিক্ষত দেহটা জ্বালাতে কেরোসিনও সে নিয়ে আসে স্কুটার থেকে। তার পর ক্যামেরার সামনে হাঁফাতে হাঁফাতে হুমকি দেয়— ‘‘লাভ জেহাদের এটাই সাজা।’’
কপালে গেরুয়া তিলক কাটা, গলায় লাল উত্তরীয় পরা শম্ভুলালের সঙ্গে কোনও হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের যোগ প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া যায়নি বলেই দাবি করেছেন রাজস্থান পুলিশের ডিজি ও পি গলহোত্র। খুনটা যেখানে হয়, জয়পুর থেকে ঘণ্টা পাঁচেকের দূরত্বের সেই রাজসমন্দ থেকে গত কালই গ্রেফতার করা হয় শম্ভুলালকে। সঙ্গে তখন ছিল তার মেয়ে। এই কিশোরীর মানসিক অসুখ রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। খুনের পরে ভিডিওতে সম্ভবত এই মেয়েটিকেই কোলের কাছে টেনে কথা বলতে দেখা গিয়েছিল শম্ভুকে।
শম্ভুর স্ত্রী সীতাদেবী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী কোনও কাজকর্ম করত না। গাঁজা খেত আর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াত। আপাতত শম্ভুকে তিন দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হলেও তার দ্রুত বিচারের নির্দেশ দিয়েছেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে। ডিজি জানিয়েছেন, কেন শম্ভু এমন নৃশংস কাণ্ড ঘটাল, তাঁরা তদন্ত করে দেখছেন। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘‘এটি বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা। বিচার শেষে আমরা ওর ফাঁসিই চাইব।’’