রাহুলের বিরুদ্ধে সরব স্মৃতি-ব্রিগেড

ভাবা হয়েছিল, খবরের কাগজ খুললেই রাজ্যে রাজ্যে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ দেখবেন। বদলে দেখা যায় ‘রেপ ইন ইন্ডিয়া’র খবর। অর্থাৎ, ভারতে ধর্ষণের খবর। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:১৯
Share:

ছবি: পিটিআই।

সংসদ হামলার বর্ষপূর্তিতে নিহতদের স্মরণ করে সবে বাড়ি গিয়েছেন রাহুল গাঁধী, সংসদে হইচই শুরু হল তাঁকে নিয়েই।

Advertisement

কারণ? গতকাল ঝাড়খণ্ডে ভোট প্রচারে গিয়ে রাহুল বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র কথা। ভাবা হয়েছিল, খবরের কাগজ খুললেই রাজ্যে রাজ্যে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ দেখবেন। বদলে দেখা যায় ‘রেপ ইন ইন্ডিয়া’র খবর। অর্থাৎ, ভারতে ধর্ষণের খবর।

নাগরিকত্ব বিল পাশের পর জ্বলছে উত্তর-পূর্ব। ভারত সফর বাতিল করছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশের মন্ত্রীরা। সংসদের শেষ দিন। বিরোধীরা মুলতুবি প্রস্তাব দিয়ে হইচই-এর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু সংসদের দুই কক্ষেই রাহুল গাঁধীর মন্তব্য নিয়ে তেড়েফুঁড়ে উঠল বিজেপি। যুক্তি, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট ডাক দিয়েছেন, ‘ভারতে এসে (সামগ্রী) তৈরি করুন’। আর রাহুল গাঁধী বললেন, ‘ভারতে এসে ধর্ষণ করুন’। স্মৃতি ইরানি, প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুর থেকে লকেট চট্টোপাধ্যায়—চেঁচিয়ে হুলস্থুল বাধালেন। একটু হাঙ্গামা হলে যে স্পিকার থামিয়ে দেন, আজ আধ ঘণ্টা তিনি নীরব রইলেন। বিজেপির একের পর এক নেতা-নেত্রী বলে চললেন, মাইক আপনা থেকেই চালু হল। অথচ বিরোধীদের মাইক ‘অন’ হল না। ‘গাঁধী পরিবারের ছেলে’র এমন ‘জঘন্য’ মন্তব্য, সব পুরুষই কি ধর্ষক বলে মনে করেন রাহুল? কত কী না বলা হল রাহুলকে। ক্ষমা চাইতে বলা হল। সাংসদ পদ কেড়ে নেওয়ার দাবি উঠল। বিকেলে নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়েও নালিশ জানালেন স্মৃতিরা। অর্থনীতি চাঙ্গা করতে সরকার কী করেছে, সে ফিরিস্তি দিতে সব থেকে বড় উত্তরটি নির্মলা সীতারামন দিলেন রাহুলকে নিয়েই।

Advertisement

বিরোধী শিবিরে ফাটল ধরাতেও চেয়েছিল বিজেপি। সুপ্রিয়া সুলে, কানিমোঝির মতো বিরোধী শিবিরের মহিলা সাংসদরা কী ভাবেন রাহুলের এই মন্তব্য নিয়ে? কানিমোঝি উল্টে বিজেপিকেই বিব্রত করলেন: ‘‘প্রধানমন্ত্রীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র সম্মান করি। কিন্তু দেশে কী হচ্ছে? রাহুল গাঁধী তো সেটিই বলেছেন। দুর্ভাগ্য, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র বদলে ধর্ষণই হচ্ছে।’’ সংসদের শেষ দিন। কিছুক্ষণের মুলতুবি করলেন স্পিকার। ছুটে এলেন রাহুল। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে এত অভিযোগ সত্ত্বেও বলতেই দেওয়া হল না রাহুলকে। গন্ডগোলের মধ্যে সংসদ শুরু হল। প্রধানমন্ত্রীও এলেন। অনির্দিষ্ট কালের জন্য মুলতুবিও হয়ে গেল অধিবেশন।

বাইরে বেরিয়েই রাহুল বললেন, ‘‘কখনও ক্ষমা চাইব না। উন্নাওয়ে বিজেপির বিধায়ক ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ। নির্যাতিতার গাড়ির দুর্ঘটনা করানো হয়েছে। নরেন্দ্র মোদী একটিও শব্দ বলেননি। মোদী-অমিত শাহ উত্তর-পূর্বকে জ্বালিয়েছেন। এখন নজর ঘোরাতে আমার বিরুদ্ধে বলছেন। আমার ফোনে ভিডিয়ো আছে, নরেন্দ্র মোদী দিল্লিকে ‘ধর্ষণ রাজধানী’ বলছেন।’’ পুরনো ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে মোদী বলতেন, কংগ্রেস শাসিত রাজ্যে ধর্ষণ বেশি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বলছেন, মহিলা নির্যাতনে কি ‘ওরা-আমরা’ হয়? পথে নামলেন কংগ্রেসের মহিলা নেত্রীরাও। সুস্মিতা দেব বললেন, ‘‘রাহুল একশো ভাগ ঠিক বলেছেন, আবার বলবেন। কুলদীপ সিংহ সেঙ্গার, চিন্ময়ানন্দের সময় বিজেপির এই মহিলা নেত্রীরা কেন চুপ ছিলেন? ধর্ষণ হলে চুপ, বিরুদ্ধে বললে হল্লা?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন