sonia gandhi

Sonia Gandhi: ‘নীরব’ মোদী ও ‘সরব’ বিক্ষুব্ধদের বার্তা সনিয়ার

বললেন, ‘নরেন্দ্র মোদীর বহু বার আওড়ানো ‘ম্যাক্সিমাম গভর্ন্যান্স, মিনিমাম গভর্নমেন্ট’-এর অর্থ হল, ফাঁপা স্লোগান, নজর ঘোরানোর কৌশল এবং মরমি স্পর্শের প্রয়োজনের সময় ‘সুবক্তা’ বলে পরিচিত প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা।’

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২২ ০৬:৪৮
Share:

চিন্তন শিবিরে সনিয়া ও রাহুল গান্ধী। শুক্রবার। পিটিআই

তথাকথিত ভাবে ‘সুবক্তা’ হিসেবে পরিচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘প্রয়োজনের সময়ে নীরবতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন সনিয়া গান্ধী। আবার একই সঙ্গে দলের অন্দরের বিক্ষুব্ধদের দলের বাইরে মুখ বন্ধ রাখার বার্তা দিলেন তিনি।

Advertisement

উদয়পুরে তাজ আরাবল্লী হোটেলের প্রাঙ্গণে সাদা কাপড়ে ঘেরা মণ্ডপে যখন কংগ্রেসের চিন্তন শিবির শুরু হচ্ছে, তখন প্রথম সারিতে সনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধীর পাশেই বসে গুলাম নবি আজ়াদ ও আনন্দ শর্মা। দলের বিক্ষুব্ধ নেতাদের জি-২৩ গোষ্ঠীর দুই প্রধান মস্তিষ্ক। এ হেন দুই নেতাকে গান্ধী পরিবারের পাশে টানতে সক্রিয় প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরাও আলাদা ভাবে তাঁদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে গেলেন।

সনিয়া গান্ধী বক্তৃতা দিতে উঠলেন। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করে শুরু করলেন। বললেন, ‘নরেন্দ্র মোদীর বহু বার আওড়ানো ‘ম্যাক্সিমাম গভর্ন্যান্স, মিনিমাম গভর্নমেন্ট’-এর অর্থ হল, ফাঁপা স্লোগান, নজর ঘোরানোর কৌশল এবং মরমি স্পর্শের প্রয়োজনের সময় ‘সুবক্তা’ বলে পরিচিত প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা।’ বক্তব্যের শেষে দলের বিক্ষুব্ধদের বার্তা দিয়ে মোদী সরকারের মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন।

Advertisement

সনিয়াকে চিঠি লিখে বিক্ষুব্ধরা অভিযোগ করেছিলেন, একের পর এক নির্বাচনের হারের পরেও কংগ্রেস শীর্ষনেতৃত্ব গা করছেন না। উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে হারের পরেও ফের সরব হয়েছিলেন তাঁরা। আজ সনিয়া বলেন, “সাম্প্রতিক নির্বাচনে ব্যর্থতা আমার অজানা নয়। জয়ের জন্য যে সংঘর্ষ করতে হবে, তা কতটা কঠিন, তা-ও আমার অজানা নয়। আমাদের কাছে মানুষের প্রত্যাশাও আমার অজ্ঞাত নয়।”

সনিয়ার বক্তৃতার পরে রাজনৈতিক, সাংগঠনিক-সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলাদা ভাবে আলোচনা শুরু হয়। সেখানে ঢোকার আগে কংগ্রেস নেতাদের মোবাইল জমা দিতে বলা হয়। সনিয়া নিজেই বুঝিয়ে দেন, বাইরে মুখ খোলা যাবে না। ভিতরের আলোচনাও বাইরে যাওয়া উচিত নয়। সনিয়া বলেন, “এখানে নিজের মনের কথা খুলে বলুন। কিন্তু বাইরে শুধু একটাই বার্তা যাওয়া দরকার— মজবুত সংগঠন, দৃঢ়প্রতিজ্ঞা ও
ঐক্যের বার্তা।”

বিক্ষুব্ধ নেতাদের অভিযোগ ছিল, দলের হাল শোধরাতে গান্ধী পরিবার সক্রিয় হচ্ছে না। সনিয়া আজ মেনে নিয়েছেন, সংগঠনে ‘অভূতপূর্ব’ সঙ্কট এসেছে। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি বিক্ষুব্ধদের উদ্দেশে দলের পাশে থাকারও বার্তা দিয়েছেন। সনিয়া বলেন, “আমি এটা জোর দিয়ে বলতে চাই যে, আমাদের পুনরুত্থান শুধু বড় রকম ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাতেই হতে পারে। আর সেই বিশাল ঐক্যবদ্ধ
প্রচেষ্টা পিছনো হবে না, পিছনো হবে না। এই চিন্তন শিবির সেই সফরেরই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”

বিক্ষুব্ধদের মধ্যে কপিল সিব্বল দাবি তুলেছিলেন, গান্ধী পরিবারের বাইরের কাউকে সভাপতি করা হোক। চিন্তন শিবিরে সিব্বল আসেননি। তবে গুলাম নবি, আনন্দ শর্মার মতো জি-২৩-র অনেকেই উদয়পুরে উপস্থিত। গুজরাত কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ নেতা হার্দিক পটেল আবার গরহাজির। নির্দল বিধায়ক হলেও গুজরাত থেকে জিগ্নেশ মেবাণী এসেছেন। সঙ্গে কানহাইয়া কুমার। সিব্বল না এলেও আর এক আইনজীবী নেতা, পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভা সাংসদ অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি এসেছেন। অধীর চৌধুরী, প্রদীপ ভট্টাচার্য ছাড়া বাংলা থেকে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ডাক পেয়েছেন দীপা দাসমুন্সি।

রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ শিবিরের বরাবরই বক্তব্য ছিল, জি-২৩-র অনেক নেতারই ক্ষোভের আসল কারণ রাজ্যসভার সাংসদ পদ বা সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ পদ না পাওয়া। সনিয়া আজ বলেছেন, “এখন ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষার থেকে সংগঠনের মঙ্গলকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পার্টি আমাদের সবাইকে অনেক কিছু দিয়েছে। এ বার তার ঋণ শোধ করার সময়। এর থেকে জরুরি আর কিছু নেই।”

সনিয়া গান্ধী আজ মোদীকে নিশানা করে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নীতি হল, দেশে পাকাপাকি ভাবে মেরুকরণ করে রেখে, মানুষকে নিরন্তর আতঙ্ক, নিরাপত্তার অভাবের মধ্যে থাকতে বাধ্য করা। যে সংখ্যালঘুরা আমাদের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তাঁদের নিশানা করা, নির্যাতন করা। ইতিহাস বিকৃত করা। জওহরলাল নেহরু-সহ কংগ্রেস নেতাদের খাটো করা। মহাত্মা গান্ধীর খুনিদের মহিমান্বিত করা।’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement