তপ্ত সংসদে মোদীর সৌজন্যে অস্বস্তিতে সনিয়া

ঘড়ির কাঁটা তখন সকাল ১১টা ছুঁইছুঁই। লোকসভার অধিবেশন শুরু হবে হবে করছে। সনিয়া গাঁধী যথারীতি তাঁর বিরোধী আসনে এসে বসেছেন। ঠিক এ রকম সময়ে লোকসভায় ঢুকলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এসেই তিনি প্রথমে এগিয়ে গেলেন উল্টো দিকে বিরোধী আসনে বসে থাকা কংগ্রেস সভানেত্রীর দিকে। হাতজোড় করে নমস্কার, জানতে চাইলেন, কেমন আছেন?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৫ ১৮:৪৭
Share:

ঘড়ির কাঁটা তখন সকাল ১১টা ছুঁইছুঁই। লোকসভার অধিবেশন শুরু হবে হবে করছে। সনিয়া গাঁধী যথারীতি তাঁর বিরোধী আসনে এসে বসেছেন। ঠিক এ রকম সময়ে লোকসভায় ঢুকলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এসেই তিনি প্রথমে এগিয়ে গেলেন উল্টো দিকে বিরোধী আসনে বসে থাকা কংগ্রেস সভানেত্রীর দিকে। হাতজোড় করে নমস্কার, জানতে চাইলেন, কেমন আছেন?

Advertisement

একটু অস্বস্তিতেই কি পড়লেন সনিয়া গাঁধী? সৌজন্য সাক্ষাৎ। কিন্তু প্রকাশ্যে। লোকসভার প্রেস গ্যালারি থেকে সব সাংবাদিকই তখন তাকিয়ে আছেন এই মুহূর্তটির দিকে যে কী জবাব দেন সনিয়া! কেউ যদি সৌজন্য দেখাতে চান তা সে যত বড় রাজনৈতিক শত্রুই হোন না কেন, এ কথা তো বলা যায় না, যেখানে পরস্পরের সমালোচনা করার কথা সেখানে কেন কেউ অন্য ব্যক্তিকে সৌজন্য দেখাচ্ছেন বা নমস্কার করছেন। এই পরিস্থিতিতে রাজনীতি ভুলে সনিয়া যদি উঠে দাঁড়িয়ে পাল্টা সৌজন্য দেখান, তা হলেও বিপদ। এই মুহূর্তে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কংগ্রেস আক্রমণাত্মক। লড়াই তুঙ্গে। তখন এই সৌজন্যের শরীরী ভাষা দেখে কংগ্রেস সাংসদেরা, এমনকী বিরোধী শিবিরের অন্য নেতারাও সংশয়ের শিকার হতে পারেন। তাঁদের সেটা পছন্দ না-ও হতে পারে।

তবে, দেখা গেল, নরেন্দ্র মোদী নমস্কারের উত্তরে আজ সনিয়া গাঁধী কোনও ভাবে দায় সেরেছেন। প্রতিনমস্কার যে ভাবে হয় সে ভাবে জানাননি। তাঁর শরীরী ভাষায় এক ধরনের অনমনীয়তা ছিল। সংসদের আজ যা আবহ ছিল তাতে সনিয়ার এ হেন আচরণে দলীয় সাংসদেরা অবশ্য বেজায় খুশি। জয়রাম রমেশের মতো নেতারা বললেন, ‘‘দুর্নীতি নিয়ে মৌনি প্রধানমন্ত্রীকে আজ আসলে নেত্রী পাত্তা দেননি। সৌজন্য ও শিষ্টাচারেরও স্থান-কাল-পাত্র থাকে।’’

Advertisement

ভারতের রাজনীতিতে সৌজন্য যতটা সৌজন্য তার চেয়ে বোধহয় রাজনীতি বেশি। আর তাই সনিয়া গাঁধীর পক্ষেও খুব বেশি উৎসাহিত হওয়ার সুযোগ ছিল না। কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বলের কথায়: ‘‘সনিয়া গাঁধী তাঁর বাহ্যিক আচরণ নিয়ে খুব সচেতন। যার অনেকটাই তিনি ইন্দিরা গাঁধীকে দেখে শিখেছেন। আর এ সবের পিছনে রাজনৈতিক অঙ্ক থেকেই যায়।’’

বাজেট অধিবেশন শুরুর আগেও প্রধান বিরোধী দলগুলির নেতাদের টেবিলে টেবিলে গিয়ে নমস্কার জানিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের অনেকেরই অভিযোগ ছিল যে প্রধানমন্ত্রী অহঙ্কারী। তিনি অন্য দলের নেতাদের বিশেষ পাত্তা দেন না। এই ধারণা ভাঙতেই সেটা ছিল মোদীর এক সচেতন প্রয়াস। আর এ বার তো পরিস্থিতি আরও আলাদা। সুষমা-বসুন্ধরাকে নিয়ে ভীষণ ভাবে অস্বস্তিতে বিজেপি নেতৃত্ব। তাই বাদল অধিবেশনের আগে সরকার অনেকটাই রক্ষণাত্মক। এ রকম একটা সময়ে প্রধানমন্ত্রী ফোন করেন সনিয়াকে। শুধু তাই নয়, সংসদ শুরু হওয়ার আগে সনিয়ার সঙ্গে আলোচনা করতে পাঠানো হয় সুষমা স্বরাজ ও বেঙ্কাইয়া নাইডুকে। কিন্তু সেগুলি প্রকাশ্যে নয়। কিন্তু সরাসরি সনিয়া গাঁধীর সামনে দাঁড়িয়ে নমস্কার বিনিময়— এটি একটি প্রকাশ্য উদ্যোগ।

সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘আসলে সৌজন্য নামক বিষয়টির সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্ততা প্রয়োজন। এটা কৃত্রিম হলে ধরা পড়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী সংসদে এসে হাঁটু গেড়ে প্রণাম করেছিলেন গণতন্ত্রের মন্দির বলে। সে তো তিনি কেশুভাই পটেলকেও পায়ে হাত দিয়ে এক সময়ে প্রণাম করেছিলেন। তার পরে কী ভাবে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন তা সকলেই জানে। সৌজন্য দেখানোর মধ্যে তাই আন্তরিকতা থাকা প্রয়োজন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সৌজন্যের রাজনীতির একাধিক নজির রেখেছেন। অসুস্থ জ্যোতি বসুকে দেখতে যাওয়া, তাঁকে শাল উপহার দেওয়া থেকে বতর্মানে অশোক ঘোষ। বিমান বসুকে ফিস ফ্রাই থেকে বাবুল সুপ্রিয়ের সঙ্গে ঝালমুড়ি— এ সবই ছিল মমতার সৌজন্যের রাজনীতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন