সুকমায় হামলায় বিস্ফোরণের তীব্রতায় মাটি থেকে দশ ফুট শূন্যে উঠে গিয়ে কার্যত দুমড়ে যায় মাইনরোধী গাড়িটি।
সামলাতে পারে মেরেকেটে ২৫ কেজি টিএনটি বিস্ফোরণের ধাক্কা। কিন্তু গত কাল সুকমার হামলায় ব্যবহার হয়েছে প্রায় ৮০ কেজি টিএনটি বিস্ফোরক। বিস্ফোরণের তীব্রতায় মাটি থেকে দশ ফুট শূন্যে উঠে গিয়ে কার্যত দুমড়ে যায় মাইনরোধী গাড়িটি। ঘটনাস্থলেই মারা যান ৯ জওয়ান। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, ছত্তীসগঢ়ের মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় মাইনরোধী গাড়ির কার্যকারিতা নিয়ে। দেশীয় প্রযুক্তিতে প্রতিরক্ষা কারখানায় বানানো ওই গাড়ির কেন এমন দশা হল সেই ব্যাখ্যা চাইছে ক্ষুব্ধ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এ পর্যন্ত অন্তত ডজনখানেক হামলা হয়েছে মাইনরোধী গাড়িতে।
২০০৫ সালে ছত্তীসগঢ়ের জঙ্গলে প্রথম মাইনরোধী গাড়ি ব্যবহার হয়েছিল। শুরু থেকেই মাওবাদীদের নিশানায় রয়েছে ওই গাড়িগুলি। সেই কারণে জব্বলপুর ও মাডেকের প্রতিরক্ষা কারখানাকে বিশেষ ভাবে শক্তপোক্ত মাইনরোধী গাড়ি বানানোর নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্র। গত কাল অন্ধ্রপ্রদেশের মাডেক কারখানায় বানানো ১১ টনের যে গাড়িটি বিস্ফোরণের মুখে পড়ে সেটির চাকার নিচে ও জওয়ানদের বসার জায়গায় যথাক্রমে ২১ কেজি ও ১৪ কেজি টিএনটি বিস্ফোরণের অভিঘাত সহ্য করার ক্ষমতা ছিল। কিন্তু ঘটনার পরে চাকাগুলি খুলে বেরিয়ে গিয়েছে ও এক্সেল ভেঙে পড়েছে। তা দেখে স্বরাষ্ট্রকর্তারা বলছেন, ক্ষমতার চেয়ে তিন গুণ বেশি বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছে। এই অভিঘাত সহ্য করার শক্তি ছিল না ওই গাড়ির। তাছাড়া মন্ত্রক সূত্র বলছে, ওই গাড়িগুলি বানানো হয়েছে মাইনের ধাক্কা সামলানোর জন্য। আইইডি বিস্ফোরণের জন্য নয়।
গোটা ঘটনার মধ্যে গোয়েন্দা ব্যর্থতার বিষয়টিও সামনে এসেছে। কিছু দিন আগেই একটি অভিযানে গিয়ে মাওবাদীদের কাছ থেকে হামলা সংক্রান্ত নথিপত্র উদ্ধার করেছিল জওয়ানেরা। তাতে কী ভাবে মাইনরোধী গাড়িগুলি কাজ করে এবং সেগুলিকে বিস্ফোরক দিয়ে ওড়াতে গেলে কী ভাবে মাইন বা আইইডি জমিতে পুঁতে রাখতে হয় সে বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ ছিল। মাওবাদীদের কাছে আধুনিক মাইনরোধী গাড়িগুলি সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য থাকা সত্ত্বেও কেন ওই গাড়িগুলি ব্যবহার করা হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে মন্ত্রকে।
মাওবাদীরা এক সময়ে মাইনরোধী গাড়িগুলিকে নিশানা করায় সেগুলিকে চলন্ত কফিন বলেছিলেন সিআরপিএফের ডিজি কে বিজয় কুমার। সূত্রের খবর, প্রাক্তন ওই ডিজি ওই গাড়ি ব্যবহারের বিপক্ষে ছিলেন। এখন গত কালের ঘটনার পরে ফের ওই গাড়ি নিয়ে এলাকা দখলে যাওয়া যুক্তিযুক্ত কিনা তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে।