ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়া। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ইয়েমেনে বন্দি ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে এ বার সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হল। বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ মামলাটি শোনার জন্য সম্মতি জানিয়েছে। আগামী ১৪ জুলাই মামলার শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। ইয়েমেন সরকার জানিয়েছেন, আগামী ১৬ জুলাই নিমিশার ফাঁসি কার্যকর হবে। অর্থাৎ, শুনানির পর হাতে থাকছে মাত্র দু’দিন। সেই সময়ের মধ্যে ইয়েমেন সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
‘সেভ নিমিশা প্রিয়া অ্যাকশন কাউন্সিল’ নামে একটি সংগঠন সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে। তাদের আবেদন, ভারত সরকার কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে ইয়েমেন থেকে নিমিশাকে মুক্ত করে আনুক। সেই ব্যাপারেই সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ চেয়ে আর্জি জানানো হয়েছিল। মামলাকারীদের বক্তব্য, শীর্ষ আদালত কেন্দ্রকে নির্দেশ দিক, যাতে তারা ইয়েমেন সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে নিমিশার মুক্তি নিশ্চিত করতে পারে। দ্রুত শুনানির আর্জিও জানানো হয়। মামলাকারীর আইনজীবী বলেন, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম আজ অথবা আগামী কালের মধ্যে শুনানি হোক। কূটনৈতিক চ্যানেলের জন্য সময়ের প্রয়োজন।’’
কেরলের পালক্কাড় জেলার বাসিন্দা নিমিশা নার্সের কাজ নিয়ে ২০০৮ সালে ইয়েমেনে গিয়েছিলেন। স্বামী টমি থমাস এবং মেয়েকে নিয়ে ইয়েমেনে থাকতেন তিনি। ২০১৪ সালে তাঁর স্বামী এবং ১১ বছরের কন্যা ভারতে ফিরে এলেও নিমিশা ইয়েমেনেই থেকে গিয়েছিলেন। ইচ্ছা ছিল নিজের ক্লিনিক খুলবেন। ওই বছরই ইয়েমেনি নাগরিক তালাল আব্দো মাহদির সঙ্গে যোগাযোগ হয় তাঁর। মাহদি তাঁকে নতুন ক্লিনিক খুলতে সাহায্য করবেন বলে আশ্বাস দেন। কারণ, আইন অনুযায়ী, ইয়েমেনে নতুন ব্যবসা শুরু করতে গেলে দেশীয় অংশীদারের দরকার ছিল নিমিশার। সেইমতো ২০১৫ সালে দু’জন মিলে নতুন ক্লিনিক খোলেন। এর পর থেকেই শুরু হয় দুই অংশীদারের মতবিরোধ।
অভিযোগ, নিমিশার টাকা এবং পাসপোর্ট মাহদি কেড়ে নিয়েছিলেন। মারধর করে নাকি নিমিশাকে মাদকসেবনেও বাধ্য করেছিলেন মাহদি। আইনি কাগজপত্রে নিমিশাকে স্ত্রী হিসাবে পরিচয় দিয়ে প্রশাসনিক সাহায্য পাওয়ার পথও প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পুলিশের দ্বারস্থ হয়েও লাভ হয়নি। বাধ্য হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই মাহদিকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দেন ওই নার্স। নিমিশার দাবি, মাহদিকে ঘুম পাড়িয়ে নিজের পাসপোর্ট পুনরুদ্ধার করাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। কিন্তু ওভারডোজ়ের কারণে মৃত্যু হয় মাহদির। এর পর হানান নামে এক সহকর্মীর সঙ্গে মিলে মাহদির দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে জলের ট্যাঙ্কে ফেলে দেন ওই নার্স। ওই মাসেই ইয়েমেন ছেড়ে পালানোর সময় ধরা পড়ে যান নিমিশা। সেই থেকে ইয়েমেনের জেলেই বন্দি রয়েছেন ভারতের যুবতী।
মাহদিকে হত্যার দায়ে ২০১৮ সালে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে ইয়েমেনের আদালত। মৃত্যুদণ্ড পান নিমিশা। এই সাত বছরে পরিবারের তরফে ৩৬ বছর বয়সি নিমিশাকে বাঁচানোর সব রকম চেষ্টা করা হয়েছে। ভারত সরকারের দ্বারস্থও হয় পরিবার। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। এমনকি ইয়েমেনের সুপ্রিম কোর্টেও সাজা মকুবের আবেদন করা হয়। গত বছর সেই আবেদন খারিজ হয়ে যায়।