‘এ সব কী চলছে দেশে!’ ক্ষুব্ধ শীর্ষ আদালত, ধাক্কা খেলেন যোগী

কার্যত তখনই বোঝা গিয়েছিল, কড়া রায় দিতে চলেছে শীর্ষ আদালত।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৯ ০৩:২৩
Share:

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। —ফাইল চিত্র।

উন্নাওয়ের ধর্ষণ ও তার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ শুনে বৃহস্পতিবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ বলেন— ‘‘এ সব কী চলছে দেশে!’’

Advertisement

কার্যত তখনই বোঝা গিয়েছিল, কড়া রায় দিতে চলেছে শীর্ষ আদালত। তার পরে একের পর এক নির্দেশ, যা উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকার ও বিজেপির মুখ পুড়িয়েছে। তিন বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়— ধর্ষণ এবং ট্রাক চাপা দিয়ে নিগৃহীতাকে সপরিবার হত্যার চেষ্টার পাঁচটি মামলাই শুক্রবার থেকে উত্তরপ্রদেশের বাইরে দিল্লির তিসহাজারি (পশ্চিম) জেলা বিচারক ধর্মেশ শর্মার আদালতে চলবে। প্রতিদিন শুনানি করে ৪৫ দিনের মধ্যে সব মামলার রায় দেওয়া চাই। হত্যার চেষ্টার ঘটনার তদন্ত সাত দিনে শেষ করতে হবে সিবিআইকে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিগৃহীতাকে ২৫ লক্ষ টাকা অন্তর্বর্তী ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং তাঁকে ও তাঁর আইনজীবীর সুরক্ষায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে।

এর মধ্যেই বিরোধীদের চাপে বিজেপির ‘তরফে’ মৌখিক জানানো হয়, বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু রাত পর্যন্ত তার কোনও লিখিত নির্দেশ প্রকাশ্যে আসেনি।

Advertisement

রক্ষী: উন্নাওয়ে নির্যাতিতার বাড়ির বাইরে পুলিশি পাহারা। বৃহস্পতিবার। ছবি: রয়টার্স।

সরকারের পক্ষে এ দিন সওয়াল করতে গিয়ে বিচারপতিদের কড়া প্রশ্নের মুখে পড়েতে হয়েছে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে। কিন্তু প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি দীপক গুপ্ত এবং বিচারপতি অনিরুদ্ধ বোসের বেঞ্চ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রশ্ন করে জেনে নেয় ধর্ষণের অভিযোগ এবং তার পর দিন পুলিশি হেফাজতে নিগৃহীতার বাবার মৃত্যু, কাকাকে গ্রেফতার থেকে রবিবার তাঁদের গাড়িতে ট্রাকের ধাক্কা পর্যন্ত। নিগৃহীতাকে ধর্ষণের মামলাগুলির কী অবস্থা, প্রশ্ন করেন বিচারপতি গগৈ। সলিসিটর জেনারেল জানান, শুনানি চলছে। প্রধান বিচারপতি বলেন, ৪৫ দিনের মধ্যে সেগুলি শেষ করতে হবে। মামলাগুলি দিল্লির আদালতে স্থানান্তর করা হল। প্রতিদিন শুনানি হবে।

এর পরে বিচারপতিরা সলিসিটর জেনারেলের কাছে জানতে চান, বেলা ১২টার মধ্যে সিবিআইয়ের কোনও অফিসারকে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছিল। তিনি আসেননি কেন? মেহতা জবাবে বলেন, তদন্তকারীরা উত্তরপ্রদেশে থাকায় আসতে পারেননি। তড়িঘড়ি বিমানের টিকিট পাওয়াটাও সমস্যা। বিচারপতি গগৈ বলেন— মামলা সম্পর্কে জানেন, এমন কোনও অফিসার কেন আসেননি? বেলা ২টোর মধ্যে তাঁদের কাউকে আসতেই হবে। এর কিছু ক্ষণ পরে সিবিআইয়ের জয়েন্ট ডিরেক্টর সম্পত মীনা আদালতে হাজিরা দেন। প্রধান বিচারপতি জানতে চান, ট্রাক চাপা দেওয়ার ঘটনার তদন্ত শেষ করতে কত দিন লাগবে? সলিসিটর জেনারেল জানান, মাসখানেক তো লাগবেই। প্রধান বিচারপতি বলেন, এত সময় দেওয়া যাবে না। সাত দিনে তদন্ত শেষ করে ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে চার্জশিট জমা দিতে হবে।

শীর্ষ আদালত যাতে নিগৃহীতার চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলাটি গ্রহণ করে, সে বিষয়ে বুধবারই প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলেন আদালত বান্ধব, বরিষ্ঠ আইনজীবী ভি গিরি। এ দিন তিনি বলেন, কোনও সুরক্ষা ছাড়া নিগৃহীতা এবং তাঁর আইনজীবী মহেন্দ্র সিংহ হাসপাতালে রয়েছেন। সেখানে নিগৃহীতার মা ছাড়া কেউ নেই, যিনি নিজে মামলার আবেদনকারীও। অর্থকষ্টেও রয়েছেন তাঁরা। এর পরে আদালত নির্দেশ দেয়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিগৃহীতার পরিবারকে সাহায্য করতে হবে, তাঁদের সুরক্ষায় সিআরপি-ও মোতায়েন করতে হবে। নিগৃহীতার লেখা চিঠি কেন তাঁর হাতে আসেনি, সে বিষয়েও সুপ্রিম কোর্টের সেক্রেটারি জেনারেলকে রিপোর্ট দিতে বলেন বিচারপতি গগৈ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন