(বাঁ দিকে) রাশিয়ান মহিলা ভিক্টোরিয়া বসু এবং তাঁর স্বামী চন্দননগরের সৈকত বসু (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
দিল্লি পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে শিশুকে নিয়ে কী ভাবে দেশ ছাড়লেন রাশিয়ান মহিলা? কেন বাবার অভিযোগ পেয়েই পদক্ষেপ করল না পুলিশ? শুক্রবার প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি সূর্য কান্তের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, পাঁচ বছরের ওই শিশুকে শীর্ষ আদালতের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার জন্য দায়ী দিল্লি পুলিশের গাফিলতি। মা এবং সন্তানকে খোঁজার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে মস্কোয় ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। ওই রাশিয়ান মহিলার বিরুদ্ধে লুক-আউট নোটিস জারি করার জন্য ইন্টারপোলের সাহায্য চাইতে বলা হয়েছে।
কেন্দ্র এবং দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে কঠোর নির্দেশের হুঁশিয়ারি দিয়েছে শীর্ষ আদালত। বিচারপতি কান্তের মন্তব্য, ‘‘এই বৈবাহিক বিভ্রাট এবং শিশুর হেফাজতের মামলা আমাদের এখানে বিচারাধীন ছিল। আমরা বাবা বা মা, কাউকেই এখনও শিশুর হেফাজত দিইনি। শিশুটিকে সুপ্রিম কোর্টের হেফাজত থেকেই ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’’ দিল্লি পুলিশের যে সমস্ত আধিকারিক এর জন্য দায়ী, তাঁদের কাউকে রেয়াত করা হবে না, জানিয়েছেন বিচারপতি।
চন্দননগরের বাসিন্দা সৈকত বসু রাশিয়ান মহিলা ভিক্টোরিয়াকে বিয়ে করেছিলেন। ২০২০ সালে তাঁদের সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু সংসারে নানা অশান্তির কারণে একটা সময়ের পর স্বামী-স্ত্রী আলাদা থাকতে শুরু করেন। দীর্ঘ দিন ধরেই ছেলের হেফাজত নিয়ে বাবা এবং মায়ের আইনি লড়াই চলছিল। আদালতের নির্দেশে তিন দিন ছেলেকে নিজের কাছে রাখার অনুমতি পেয়েছিলেন রাশিয়ান মহিলা। সপ্তাহের বাকি দিনগুলিতে শিশুর তার বাবার কাছে থাকার কথা ছিল। অভিযোগ, ৭ জুলাই স্কুলের সময়ের পর থেকে শিশু বা তার মায়ের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। যে করেই হোক, ওই মহিলাকে খুঁজে বার করার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু পরে জানা যায়, তিনি দেশ ছেড়েছেন।
আদালতে শুক্রবার দিল্লি পুলিশ যে স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, রাশিয়ান মহিলা প্রথমে দিল্লি থেকে ট্যাক্সিতে বিহারের নারকাটিয়াগঞ্জ রেলস্টেশনে পৌঁছোন গত ৮ জুলাই। সেখান থেকে নেপালে চলে যান। সেখান থেকে ১২ জুলাই যান সংযুক্ত আরব আমিরশাহির শারজায়। আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলি যাত্রীদের সম্বন্ধে কোনও তথ্য দিতে চাইছে না বলেও আদালতে জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, অপরাধ সংক্রান্ত কোনও মামলায় নিরাপত্তার অজুহাত দিতে পারে না বিমান সংস্থা। তাদের পর্যবেক্ষণ, এটি শুধু আদালত অবমাননার মামলা নয়। ওই শিশুর পাসপোর্ট আদালতে জমা ছিল। তার পরেও তাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে এটি ফৌজদারি জালিয়াতির মামলাও বটে। ১০ দিন পর আবার এই মামলা শুনবে শীর্ষ আদালত।