(বাঁ দিকে) পুত্র নবিদ আক্রম এবং পিতা সাজিদ আক্রম (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
এর আগে জল্পনা ছিল, অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডি সমুদ্রসৈকতে এলোপাথাড়ি গুলি চালানো দুই বন্দুকবাজ পাকিস্তানি। তদন্তে নেমে এ বার জানা গেল সম্পর্কে পিতা-পুত্র দুই আততায়ীর আসল পরিচয়! মঙ্গলবার বিকেলে তেলঙ্গানা পুলিশ সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছে, সিডনিতে পুলিশের গুলিতে নিহত বন্দুকবাজ সাজিদ আক্রম (৫০) আদতে ভারতীয় ছিলেন।
তেলঙ্গানা পুলিশের ডিজি জানিয়েছেন, সাজিদের পরিবার তেলঙ্গানার হায়দরাবাদের বাসিন্দা ছিল। সেখানেই জন্মান সাজিদ। হায়দরাবাদের কলেজ থেকে বাণিজ্য বিষয়ে স্নাতক হন। তার পর ১৯৯৮ সালে ছাত্র ভিসায় পাড়ি দেন অস্ট্রেলিয়ায়। গত তিন দশক ধরে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করা সত্ত্বেও ভারতীয় নাগরিকত্ব ছাড়েননি সাজিদ। অস্ট্রেলিয়ায় থাকাকালীন ভেনেরা গ্রোসো নামে ইতালির এক মহিলাকে বিয়ে করেন তিনি। স্ত্রী ধর্মে ক্রিশ্চান হওয়ায় সেই থেকেই সাজিদের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয় তাঁর পরিবার।
অস্ট্রেলিয়ায় দুই সন্তান হয় ওই দম্পতির। নবিদ ছাড়াও এক কন্যাসন্তান হয় তাঁদের। ভারতীয় বংশোদ্ভূত হলেও জন্মসূত্রে দুই সন্তানই অস্ট্রেলিয় নাগরিকত্ব পান। হায়দরাবাদ নিবাসী পরিবারের সঙ্গে তাঁদের বিশেষ যোগাযোগ ছিল না। ২০১৭ সালে পিতার শেষকৃত্যেও যাননি সাজিদ। ২০২২ সালে বিশেষ প্রয়োজনে একবার দেশে ফেরেন। তবে সেই শেষ। তার পর আর ভারতে যাননি তাঁরা কেউই।
তদন্তকারীরা মঙ্গলবার জানতে পারেন, সিডনিতে যাওয়ার আগে গত মাসে ফিলিপিন্স ভ্রমণে গিয়েছিলেন সাজিদ ও তাঁর পুত্র। তা-ও আবার ভারতীয় পাসপোর্টে! এর পরেই শুরু হয় জল্পনা, তবে কি ভারতীয় নাগরিক ছিলেন তাঁরা? ফিলিপিন্সের অভিবাসন দফতরও জানিয়ে দেয়, সিডনির বন্ডি সৈকতে ১৫ খুনে অভিযুক্ত সাজিদ ও নবিদ গত ১ নভেম্বর ভারতীয় পাসপোর্টেই ফিলিপিন্সে ঢুকেছিলেন। সম্ভবত ‘সামরিক প্রশিক্ষণ’ নিতে সে দেশে গিয়েছিলেন তাঁরা। এর পরেই ঘুরে যায় তদন্তের মোড়। জানা যায়, গোটা নভেম্বর মাসটা ফিলিপিন্সেই কাটিয়েছিলেন বাবা-ছেলে। দেশ ছেড়়েছিলেন ২৮ নভেম্বর। দাভাও থেকে ম্যানিলাগামী বিমানে চেপে রওনা দিয়েছিলেন অন্তিম গন্তব্য সিডনির উদ্দেশে।
রবিবার দুপুরে বন্ডি সৈকতে সিডনির ইহুদি গোষ্ঠীর হানুকা উৎসব চলছিল। আগ্নেয়াস্ত্র সমেত সেখানে পৌঁছে যান পিতা-পুত্র। তার পর এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে দেন। মাত্র ১০ মিনিটের সেই হামলায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়। পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সাজিদের। নবিদও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া, আরও ২৫ জন এখনও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ছ’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।