Jammu and Kashmir Terror Attack

এক জন পর্যটকদের মাথায় গুলি করেন, এক জন বন্দুক ছিনিয়ে নিতে গিয়ে ঝাঁঝরা! এক পহেলগাঁওয়ে দুই আদিলের গল্প

জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জন্ম দুই আদিলের। একজন রক্ষক। আর একজন ঘাতক। এক জন পর্যটকদের বাঁচাতে গিয়ে শহিদ হয়েছেন। আর এক জন পর্যটকদের হত্যা করে এখনও ফেরার।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:২৯
Share:

(বাঁ দিকে) পর্যটকদের বাঁচাতে গিয়ে জঙ্গিদের গুলিতে নিহত সইদ আদিল হুসেন শাহ। পর্যটকদের উপর হামলাকারী আদিল হুসেন ঠোকর (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

এক উপত্যকা। সেই মাটি থেকে উঠে আসেন দুই ধরনের আদিল। একজন নিষ্পাপ পর্যটকদের বেছে বেছে মাথায় গুলি করেন। আর একজন সেই পর্যটকদের বাঁচাতেই বন্দুকের নলের সামনে নিজে গিয়ে দাঁড়ান। চান বন্দুক ছিনিয়ে নিতে। জঙ্গির গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় তাঁর বুক। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে একটি পরিবারের।

Advertisement

‘শহিদ’ আদিল

জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকা। সেখানে প্রতি দিন টাট্টু ঘোড়া নিয়ে বেরোতেন সইদ আদিল হুসেন শাহ। পর্যটকদের ঘোড়ায় চড়িয়ে যে রোজগার হত, তা দিয়েই চলত চার জনের সংসার। আদিলের মাথার উপরে ছিলেন বৃদ্ধ মা-বাবা। ছিল ছোট বোনের দায়িত্ব। কিন্তু জঙ্গিদের দেখে পরিবারের কথা ভাবেননি আদিল। জঙ্গিদের লক্ষ্য ছিলেন বাইরে থেকে যাওয়া পর্যটকেরা। আদিল স্থানীয় বাসিন্দা। অনায়াসে তিনি বেঁচে যেতে পারতেন। কিন্তু নিজের প্রাণ, পরিবারের ভবিষ্যতের চেয়ে পর্যটকদের বাঁচানোকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছিলেন তিনি। পহেলগাঁওয়ের ছোট্ট বাড়িটিতে কান্নার রোল থামছে না।

Advertisement


২২ এপ্রিল পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার সময়ে বৈসরনেই ছিলেন আদিল। এক জঙ্গির সামনে গিয়ে তাঁর কাছ থেকে বন্দুক কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় তাঁর দেহ। বুকে এবং গলায় একাধিক গুলি লেগেছে তাঁর। আদিলের বাবা ছেলেকে ‘শহিদ’ বলে উল্লেখ করেছেন। শোকে মুহ্যমান মা। ধরা গলায় তিনি বলেন, ‘‘সকালে ছেলে কাজে বেরিয়েছিল। আর ফিরে এল না! অন্যদের বাঁচাতে গিয়ে নিজের প্রাণটা দিয়ে দিল। বাড়ির একমাত্র রোজগেরে সদস্য ছিল ও। আমার স্বামী অসুস্থ। ও ওষুধ এনে দিত। দিনে ৩০০ টাকা রোজগার করত। তা দিয়ে আমরা সংসার চালাতাম। এখন কে আমাদের খাবার জোগাবে? ওষুধ কিনব কী ভাবে?’’

আদিলের বোন বলেন, ‘‘সে দিন দাদার শরীরটা ভাল ছিল না। বলছিল, কাজ শেষ করে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবে। পরের দিন আর কাজে যাবে না। একটা দিন বিশ্রাম নেবে। কিন্তু ও মরেই গেল! আমরা জানি না কে ওকে মেরেছে। শুনেছি, বন্দুক ছিনিয়ে নিতে গিয়ে ও গুলি খেয়েছে। বুকে তিনটি গুলি, গলায় একটি গুলি লেগেছে।’’

আদিলের শেষকৃত্যে এসেছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ। দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষ তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বাড়ির সামনে জড়ো হয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আদিলের পরিবারের দায়িত্ব নেবে সরকার।

জঙ্গি আদিল

পহেলগাঁওয়ে হামলার পর যে জঙ্গিদের চিহ্নিত করে ছবি প্রকাশ করেছে স্থানীয় প্রশাসন, তাদের এক জনের নামও আদিল। সে আদিল হুসেন ঠোকর। হামলাকারীদের মধ্যে দু’জন স্থানীয় বাসিন্দা বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। আদিল তাদের মধ্যেই এক জন। গত তিন দিন ধরে উপত্যকায় হন্যে হয়ে তাকে খুঁজছে পুলিশ।

শ্রীনগরের ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিজবেহেরার গুর্‌রে গ্রামের বাসিন্দা এই আদিল। তাকে ধরা যায়নি। তবে শুক্রবার সকালে তার বাড়ি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বিস্ফোরণে। জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালে আদিল এক বার পাকিস্তানে গিয়েছিল। গত বছর আবার উপত্যকায় ফিরে আসে। অভিযোগ, তখন থেকেই সে লশকর-এ-ত্যায়বার স্থানীয় ‘গাইড’ বা পথপ্রদর্শক হিসাবে কাজ করছিল। জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ আদিলের ছবি প্রকাশ করে জানিয়েছে, তার খোঁজ দিতে পারলে ২০ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। পহেলগাঁও-সহ অনন্তনাগের বিস্তীর্ণ এলাকায় তল্লাশি অভিযান চলছে। আদিলের সঙ্গে আরও এক স্থানীয় যুবক পহেলগাঁও হামলায় যুক্ত ছিল বলে অভিযোগ। তাকেও এখনও ধরা যায়নি। তবে শুক্রবার সেই আসিফ শেখের বাড়িও বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

পহেলগাঁও হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২৫ জনই ভারতীয়, এক জন নেপালি নাগরিক। তবে আদিল ছাড়া বাকি সকলেই ছিলেন পর্যটক। একই পহেলগাঁওয়ের মাটি থেকে উঠে এসেছেন এই দুই আদিল। এক জন রক্ষক, এক জন ঘাতক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement