সাফল্য পেতে যে পরিশ্রমের বিকল্প নেই সেটা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন এঁরা। প্রতিবন্ধকতার পাহাড় ডিঙিয়ে পৌঁছেছেন সাফল্যের সিঁড়িতে। কখনও শরীরের সঙ্গে যুঝে, কখনও বা আর্থিক অনটনকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থীকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছেন। শোনা যাক এমনই কয়েকজন সফল আইএএস ও আইপিএস অফিসারের কঠিন লড়াইয়ের গল্প।
হাসান সাফিন: বাবার শ্রমিকের কাজ। মা রুটি তৈরি করে তার পড়ার খরচ জোগান। কিন্তু,আইএএস হওয়ার স্বপ্ন ছাড়েননি গুজরাতের প্রত্যন্ত গ্রামের হাসান। এ ভাবেই একদিন নজরে পড়ে যান এক স্থানীয় ব্যবসায়ীর। তাঁর অর্থ সাহায্যেই দু’বছর দিল্লিতে থেকে পড়াশনা করে ২০১৭ সালে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ৫৭০তম স্থান দখল করেন হাসান।
জয়ন্ত মানকালে: দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন প্রায় ৭৫ শতাংশ। বাবার পেনশনের টাকায় কোনও রকমে পড়া চালিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন জয়ন্ত। স্বপ্ন দেখতেন আইএএস হওয়ার। টিভি, রেডিওয় সংসদের ডিবেট শুনেই প্রস্ততি চালিয়েছেন। আচার বেচে পাশে দাঁড়িয়েছেন মা, দিদি। ২০১৪ সালে সিভিল সার্ভিসে ৯২৩ র্যাঙ্ক করে এখন ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিসে কর্মরত জয়ন্ত।
তপস্যা পরিহার: এও আর এক ‘কোনি’র গল্প। দারিদ্রের সঙ্গে প্রতি দিন লড়াই করে এগিয়ে যাওয়ার গল্প। যে গল্পের শেষে গরিব চাষির একমাত্র মেয়ে হয়ে ওঠে আইএএস অফিসার। মধ্যপ্রদেশের জোয়া গ্রামের বছর পঁচিশের আইনের ছাত্রী তপস্যা চলতি বছরেই সিভিল এভিয়েশনের ৯৯০ জন বাছাই প্রার্থীর মধ্যে ২৩তম স্থান পেয়েছেন।
শিবগুরু প্রভাকরণ: বাবা মাদকাসক্ত, কোনও মতে সংসার চালান মা, দিদি। দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করতে করতেই ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন তাঞ্জাভুরের প্রভাকরণ। মোবাইলের দোকানে পার্ট টাইম কাজ করে মাস্টার্সেও ৯০ শতাংশ নম্বর পান তিনি। তারপর শুরু হয় আইএএসের জন্য লড়াই। ২০১৭ সালে সিভিল সার্ভিসের ১০১তম স্থান পেয়ে প্রভাকরণ এখন একজন সফল আইএএস অফিসার।
কুলদীপ দ্বিবেদী: লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তা রক্ষীর কাজ করে ছেলে কুলদীপকে পড়াশোনা করিয়েছেন সূর্যকান্ত দ্বিবেদী। দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে দিনরাত এক করে ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি চালিয়েছেন কুলদীপ। প্রথম দু’বার সাফল্য আসেনি। শিকে ছেঁড়ে তৃতীয়বারের চেষ্টায়। ২০১৫ সালে গোটা দেশে ২৪২তম স্থান পেয়ে কুলদীপ এখন একজন সফল আইপিএস অফিসার।
আনসার শেখ: তীব্র খরায় বুক শুকিয়ে কাঠ মরাঠাওয়াড়ার। তার মধ্যে জালনা জেলা যেন আরও শুকনো। পিছিয়ে পড়া এই জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম শেলগাঁও থেকে উঠে আসা বছর একুশের তরুণ আনসার ২০১৬ সালে ইউপিএসসিতে গোটা দেশে ৩৬১তম হন। রিক্সাচালক বাবার ছেলে আনসার এখন আইপিএস। পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য কাজ করতে চান তিনি।
উন্মুল খের: বিরল রোগে ১৪ বছরে হাড় ভেঙেছে ১৬ বার। অস্ত্রোপচার হয়েছে আট বার। হাঁটাচলা করতেও সমস্যা হয়। কিন্তু, লড়াই থেকে সরে আসেননি দিল্লির মেয়ে উন্মুল। পড়া ও চিকিত্সার খরচ জোগাতে টিউশনি করেছেন। সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে আঠাশ বছরের লড়াকু তরুণী ২০১৭ সালে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় গোটা দেশের মধ্যে ৪২০তম স্থান দখল করেন।