Bipin rawat

Bipin Rawat: আঙ্কলের ফোন পেয়েই ছুটে গিয়ে টিভি চালাই, বললেন রাওয়তের দেহরক্ষী সতপালের স্ত্রী

ঘটনার অভিঘাত কাটিয়ে উঠতে পারেনি দার্জিলিঙে রাই পরিবার। ফোনে মন্দিরা জানালেন, বাড়ির সব কিছু সামলে উঠতে সময় লাগবে। শোকাহত ছোট মেয়ে।

Advertisement

সারমিন বেগম

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২১ ১৫:৫৩
Share:

হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন সেনা সর্বাধিনায়ক বিপিন রাওয়তের দেহরক্ষী সতপাল রাই। ডান দিকে তাঁর শোকস্তব্ধ স্ত্রী। নিজস্ব চিত্র।

দূরে রোদঝলমলে কাঞ্চনজঙ্ঘা। এমন দৃশ্য দেখার জন্য হাজার হাজার মাইল দূর থেকে এখানে আসেন পর্যটকেরা। এখানে বাড়ি যাঁদের, এই দৃশ্য তাঁদের কাছে অবশ্য নতুন নয়। নতুন এই সকালটা। যে সকাল শীত-প্রারম্ভে সূর্যের আলোতেও বিবর্ণ। বাড়ির কর্তা সতপাল রাই ছিলেন সেনা সর্বাধিনায়ক বিপিন রাওয়তের দেহরক্ষী। বুধবার হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। দার্জিলিঙের তাকদায় সতপালের বাড়ি থেকে ডুকরে ডুকরে কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। পাড়ার লোকের ভিড়েও থমথমে আবহাওয়া।

Advertisement

সতপাল রাই -এর দার্জিলিঙের বাড়ি। নিজস্ব চিত্র। নিজস্ব চিত্র

গত ১০ বছর ধরে রাওয়তের সঙ্গেই থাকতেন হাবিলদার সতপাল। সেনাবাহিনীতে কর্মরত সতপালের ছেলে বিকাল রাই বর্তমানে দিল্লিতে। সতপলের স্ত্রী, মেয়ে এবং মা তাকদার বাড়িতে।
বাড়িতে এক মাসের ছুটি কাটিয়ে ২২ নভেম্বর সতপাল ফিরে গিয়েছিলেন দিল্লির কর্মস্থলে। বুধবার সকালে ওয়েলিংটনে রওনা হওয়ার আগে সকাল ৮.৩০ নাগাদ বাড়িতে ফোন করে স্ত্রী মন্দিরার সঙ্গে কথা বলেন। কথা হয়েছিল দিল্লিতে কর্মরত ছেলে বিকালের সঙ্গেও। তারপরই দুপুর নাগাদ এক পরিচিত ফোন করে কপ্টার দুর্ঘটনার খবর দেন মন্দিরাকে। কান্না জড়ানো গলায় মন্দিরা বলছিলেন, “আঙ্কল ফোন করে বলার পরই আমি ছুটে গিয়ে টিভি চালাই। দুর্ঘটনার খবর দেখার সঙ্গে সঙ্গেই আমি ওর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। কিন্তু কিছুতেই আর ফোনে পেলাম না।’’

Advertisement

মা, স্ত্রী এক ছেলে এবং মেয়েকে নিয়ে ছিল সতপালের সংসার। বছর ২২-এর বিকাল গত দেড় বছর ধরে দিল্লিতে বাবার সঙ্গে একই পল্টনে কাজ করছেন। তবে, সতপালের দুর্ঘটনা সংক্রান্ত কোনও কথা বলার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাবধানী-সংযমী বিকাল। বৃহস্পতিবার রাতে বা শুক্রবার দার্জিলিঙের বাড়ি ফেরার ইচ্ছা রয়েছে বিকালের। তবে এখনও বাড়ি ফেরার জন্য কাগজে কলমে অনুমোদন পাওয়া যায়নি বলে জানালেন। দিল্লি থেকে ফোনে বললেন, “গত ১০ বছর ধরে সিডিএস স্যারের সঙ্গে থাকতেন বাবা। তবে এখন আবেগপ্রবণ হয়ে যাওয়ার সময় নয়। এর থেকে বেশি কিছু বলতে পারব না।” বাবাকে দেখেই সেনাবাহিনীতে আসার সিদ্ধান্ত কি না জানতে চাইলেও বিকালের সেই একই উত্তর, ‘‘এই সব বিষয়ে এখন কিছু বলা যাবে না।”

ঘটনার অভিঘাত কাটিয়ে উঠতে পারেনি দার্জিলিঙে রাই পরিবার। বাড়ির সামনে পড়শিদের ভিড়। নিজস্ব চিত্র।

অন্য দিকে, ঘটনার অভিঘাত কাটিয়ে উঠতে পারেনি দার্জিলিঙে রাই পরিবার। থমথমে গলায় ফোনে মন্দিরা জানালেন বাড়ির সব কিছু সামলে উঠতে সময় লাগবে। ছোট মেয়েও শোকাহত। ছেলে বিকাল কি বাবাকে দেখেই সেনাবাহিনীতে যোগ দেন? মায়ের কাছে জানতে চাইলে, মন্দিরা বললেন, “ও তো লুকিয়ে চাকরির পরীক্ষা দিয়েছিল। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে বাড়ির কাউকে কিছু জানায়নি। সব শেষে মেডিক্যাল পরীক্ষার সময় বাড়িতে জানায়। বাবার পল্টনেই আছে ছেলে।”

আরও পড়ুন:

বুধবার দেশের প্রতিরক্ষা প্রধানের কপ্টার ভেঙে পড়ার পর থেকেই সব টিভি চ্যানেলই নীলগিরির জঙ্গল থেকে সরাসরি সব ছবি বাড়িবাড়ি পৌঁছে দিয়েছে। দেশবাসী রুশ কপ্টার ভেঙে পড়ার কারণ, প্রতিরক্ষা প্রধানের মৃত্যু নিয়ে আলোচনা করেছে। কিন্তু দার্জিলিঙের তাকদায় রাই পরিবার সেই ছবিতে কোথাও সতপালকে দেখা যায় কি না খুঁজেছে। অবশেষে সন্ধে ৬টা নাগাদ সরকারি ভাবে রাই পরিবারকে সতপালের মৃত্যুর খবর জানানো হয়।
দার্জিলিং গেলে তাকদাতে বেড়াতে যাবেন হয়তো কেউ। পাহাড়ি রাস্তার বাঁকে দেখা মিলবে এই বাড়িটির। ক’জনের মনে থাকবে এই বাড়িরই গৃহকর্তার অকাল প্রয়াণ হয়েছিল বহুদূরে কুন্নুরের জঙ্গলে এক কপ্টার দুর্ঘটনায়?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন