Plane Crash in Ahmedabad

জ্বালানির সুইচ নিজে থেকে বন্ধ হতে পারে? অতীতে বার দুয়েক যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার ওই বিমানটিতেই!

প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে ককপিটে পাইলটদের মধ্যেকার একটি কথোপকথন প্রকাশ করা হয়েছে। তার পর থেকে জল্পনা, বিমান রানওয়ে ছাড়ার পর জ্বালানির সুইচ কী ভাবে বন্ধ হল।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২৫ ১২:১৩
Share:

এয়ার ইন্ডিয়ার এআই১৭১ বিমান রানওয়ে ছাড়ার পর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল জ্বালানির সুইচ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

অহমদাবাদে দুর্ঘটনাগ্রস্ত এয়ার ইন্ডিয়ার এআই১৭১ বিমানটিতে রক্ষণাবেক্ষণগত কোনও ত্রুটি ছিল না, তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানিয়ে দিয়েছে এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএআইবি)। প্রাথমিক ভাবে যান্ত্রিক ত্রুটির সম্ভাবনার কথাও জোর দিয়ে বলা হয়নি। কিন্তু অতীতে এই বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটির নজির রয়েছে। অন্তত দু’টি বড় ত্রুটি ঘটেছিল এই নির্দিষ্ট বোয়িং ড্রিমলাইনারটিতেই। এক বার সেই ত্রুটির কারণে উড়ান বাতিল করে দিতে হয়। অন্য বার বিমানটির জরুরি অবতরণ করাতে বাধ্য হন পাইলট। তদন্তকারীরা এই দুই ঘটনাও খতিয়ে দেখছেন। ১২ জুনের দুর্ঘটনার সঙ্গে তেমন কোনও যান্ত্রিক ত্রুটির সম্পর্ক থাকতে পারে কি না, দেখা হচ্ছে। কোনও সম্ভাবনাই আপাতত উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। তদন্তের সঙ্গে যুক্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আধিকারিককে উল্লেখ করে এই তথ্য জানিয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

Advertisement

এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে প্রধান পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন সুমিত সবরওয়াল (৫৬)। তাঁর সহকারী হিসাবে ছিলেন কো-পাইলট ক্লাইভ কুন্দর (৩২)। প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে ককপিটে তাঁদের মধ্যেকার একটি কথোপকথন প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে এক জনকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘কেন তুমি বন্ধ করে দিলে (জ্বালানির সুইচ)?’’ অন্য জন তার উত্তরে বলেন, ‘‘আমি কিছু বন্ধ করিনি।’’ কোন পাইলট কোন কথাটি বলেছেন, রিপোর্টে তা চিহ্নিত করা হয়নি। তবে জ্বালানির সুইচ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণেই ওই বিমানের ইঞ্জিন দু’টি বন্ধ হয়ে যায়। সামনের বহুতলে ধাক্কা খেয়ে ভেঙে পড়ে বিমান। এখন প্রশ্ন, জ্বালানির সুইচ কী ভাবে বন্ধ হল?

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিমানের জ্বালানির সুইচ সাধারণ অবস্থায় নিজে থেকে বন্ধ হয়ে যেতে পারে না। পাইলটেরাই ওই সুইচ ব্যবহার করেন। রানওয়ে ছাড়ার আগে সুইচ চালু করে ইঞ্জিনে জ্বালানি পৌঁছে দেওয়া হয়। অবতরণের সময়ে সুইচটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় কোনও পাইলটও বিমান রানওয়ে ছাড়ার পর জ্বালানির সুইচ বন্ধ করবেন না। এ ক্ষেত্রে শেষ মুহূর্তে যান্ত্রিক ত্রুটির সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দিতে পারছেন না তদন্তকারীরা। তাঁরা দেখছেন, কোনও ত্রুটির কারণে জ্বালানির সুইচটি নিজে থেকে বন্ধ হয়ে গিয়ে থাকতে পারে কি না। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে ওই আধিকারিক বলেছেন, ‘‘জ্বালানির সুইচে কোনও অনিয়ন্ত্রিত গতিবিধি হয়েছিল কি না, তদন্তে তা দেখা হচ্ছে।’’

Advertisement

২০২৪ সালের ডিসেম্বরের একদিন অহমদাবাদ থেকে লন্ডন গ্যাটউইকের উদ্দেশে যাত্রা শুরুর আগে এয়ার ইন্ডিয়ার এই এআই১৭১ উড়ানে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়েছিল। সেটি ছিল বিদ্যুৎ সরবরাহ সংক্রান্ত সমস্যা। তৎক্ষণাৎ সমস্যার সমাধান খুঁজে পাননি কর্তৃপক্ষ। ফলে উড়ান বাতিল করে দিতে হয় সে দিনের মতো। পরের দিন অহমদাবাদ থেকে লন্ডন গ্যাটউইকে যায় বিমানটি। এ ছাড়া, ২০১৫ সালে এই বিমানটিই কেবিন এয়ার কমপ্রেসর (সিএসি) সার্জের কারণে মাঝ-আকাশে সমস্যায় পড়েছিল। সে বার কোনও রকমে বিমানটির জরুরি অবতরণ করাতে পেরেছিলেন পাইলট। যান্ত্রিক ত্রুটির এই ইতিহাস ঘেঁটে দেখছেন তদন্তকারীরা।

যে দিন বোয়িংয়ের এই বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে, তার কয়েক ঘণ্টা আগে দিল্লি থেকে অন্য এক পাইলট ওই বিমানটিই উড়িয়ে এনেছিলেন। তিনি একটি যান্ত্রিক ত্রুটির কথা নথিবদ্ধ করেছিলেন, যার নাম ‘স্টেবিলাইজ়ার পজ়িশন ট্রান্সডুসার ডিফেক্ট’। স্টেবিলাইজ়ার পজ়িশন ট্রান্সডুসার একটি সেন্সর, যা বিমানের সামনের দিকের নাকের অংশের ওঠা-নামা নিয়ন্ত্রণ করে এবং সেই সংক্রান্ত তথ্য বৈদ্যুতিন সঙ্কেতে ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেমে পাঠিয়ে দেয়। এতে পাইলটদের কথোপকথনে সুবিধা হয়। দিল্লি থেকে বিমান উড়িয়ে আনার পর পাইলট এই সংক্রান্ত সমস্যার কথা জানালে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকেরা তা খতিয়ে দেখেন। বোয়িংয়ের নিয়ম মেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেন। তার পরেও রানওয়ে ছাড়ার ৩২ সেকেন্ডের মধ্যে বিমানটি ভেঙে পড়ে। আধিকারিকের কথায়, ‘‘এই যান্ত্রিক ত্রুটি খুব গুরুতর। এর ফলে বিমান নিয়ন্ত্রণে ভুল বার্তা যেতে পারে। অযাচিত ভাবে জ্বালানি বন্ধও হয়ে যেতে পারে। তবে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে দুর্ঘটনা স্টেবিলাইজ়ার পজ়িশন ট্রান্সডুসার-এ ত্রুটির কারণে হয়নি। তা থেকে একাধিক সেন্সর ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিল কি না, আমরা সেটা দেখছি।’’

ককপিটের কথোপকথন বিশ্লেষণ করে দুর্ঘটনার নেপথ্যে পাইলটের ভূমিকা জোরালো বলে মনে করছেন মার্কিন তদন্তকারীরা। মার্কিন সংবাদমাধ্যমে সেই সংক্রান্ত একাধিক রিপোর্টও প্রকাশিত হয়েছে। তাঁদের দাবি, কোনও পাইলট ইচ্ছাকৃত ভাবে এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন। ক্যাপ্টেন সুমিতের মানসিক অবসাদের দিকেও কেউ কেউ ইঙ্গিত করছেন। দাবি, ফার্স্ট অফিসার ক্লাইভ বিমান নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। তিনিই জানতে চান, জ্বালানির সুইচ কেন বন্ধ করা হল? সুমিত উত্তরে জানান, তিনি কিছু করেননি। এই সময়ে সুমিত অত্যন্ত শান্ত ছিলেন বলেও রিপোর্টে দাবি। তবে ভারতীয় তদন্তকারী সংস্থা এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার বিদেশি সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টগুলি উল্লেখ করে এএআইবি জানিয়েছে, এখনও তদন্ত চলছে। কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার সময় আসেনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement