এয়ার ইন্ডিয়ার দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের দুই পাইলট। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
এয়ার ইন্ডিয়ার দুর্ঘটনাগ্রস্ত সেই বিমানের ককপিটের কথোপকথন অবশেষে প্রকাশ্যে এল। দুই পাইলটের মধ্যে জ্বালানি নিয়ে কথা হয়েছিল। বিমান দুর্ঘটনার তদন্তকারী সংস্থা এয়ারক্র্যাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএআইবি) শনিবার তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। ১৫ পাতার সেই রিপোর্টেই রয়েছে দুই পাইলটের শেষ মুহূর্তের কথোপকথন।
গত ১২ জুন গুজরাতের অহমদাবাদে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার এআই১৭১ বিমান। বোয়িং সংস্থার সেই ড্রিমলাইনার বিমান রানওয়ে ছাড়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ভেঙে পড়ে। মৃত্যু হয় ২৬০ জনের। বিমানটি অহমদাবাদ থেকে লন্ডনের অদূরে গ্যাটউইকের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল। দুর্ঘটনার এক মাসের মাথায় প্রকাশ্যে এল তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট।
বিমানটি যেখানে ভেঙে পড়েছিল, সেখান থেকেই উদ্ধার করা হয়েছিল দু’টি ব্ল্যাক বক্স। তার মধ্যে একটি ছিল ককপিট ভয়েস রেকর্ডার। দুর্ঘটনার মুহূর্তে ককপিটে পাইলটদের মধ্যে কী কথা হচ্ছে, তা এই যন্ত্রে রেকর্ড হয়। তার তথ্য উদ্ধার করে জানা গিয়েছে, বিমান ওড়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দু’টি ইঞ্জিনই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জ্বালানির সুইচ ‘রান’ (চালু) থেকে ‘কাটঅফ’ (বন্ধ)-এ চলে এসেছিল। এই সময়ে এক পাইলট অন্য পাইলটকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘কেন তুমি বন্ধ (জ্বালানি) করে দিলে?’’ অন্য জন উত্তর দেন, ‘‘আমি কিছু বন্ধ করিনি।’’
তদন্ত-রিপোর্ট অনুযায়ী, ইঞ্জিন-১ এবং ইঞ্জিন-২ রানওয়ে ছাড়ার পরেই বন্ধ হয়ে যায়। বিমানটি যখন গতি নিয়ে নিয়েছে, ঠিক সেই সময়ে দু’টি ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ইঞ্জিনে জ্বালানি পৌঁছোচ্ছিল না। মুহূর্তের মধ্যে বিমানের গতি এবং উচ্চতা কমতে থাকে। পাইলটেরা সেই মুহূর্তে দু’টি জ্বালানির সুইচই আবার ‘কাটঅফ’ থেকে ‘রান’-এ নিয়ে এসেছিলেন। ইঞ্জিন চালু করার মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। ইঞ্জিন-২ সাময়িক ভাবে স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরেওছিল। কিন্তু ইঞ্জিন-১ আর চালু করা যায়নি। পাওয়া যায়নি ‘থ্রাস্ট’।
১৫ পাতার তদন্ত রিপোর্টে পাখির ধাক্কার কোনও উল্লেখ নেই। বিমানের উড়ান-পথে কোনও পাখি ছিল না বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। তেমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বিমানটির সামনের দিকের এক্সটেন্ডেড এয়ারফ্রেম ফ্লাইট রেকর্ডার (ইএএফআর) উদ্ধার করা হয়েছে। সফল ভাবে তা ডাউনলোডও করা হয়। কিন্তু পিছনের দিকের ইএএফআর এমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে, তা থেকে কোনও তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, আপাতত যে সমস্ত তথ্য পাওয়া গিয়েছে, সেগুলি পৃথক করা হয়েছে। বোয়িং সংস্থা বা ইঞ্জিন অপারেটরদের এখনও কোনও নোটিস জারি করা হয়নি। ঠিক কী কারণে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, কেন জ্বালানির সুইচে গোলমাল হল, তা নিয়ে এখনও তদন্ত চলছে।