বাগান কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিক—দু’পক্ষের অসহিষ্ণুতায় বরাকের দু’টি চা-বাগান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সমস্যা মেটাতে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডেকেছে রাজ্য শ্রম দফতর।
গত মঙ্গলবার ‘শ্রমিক অসন্তোষ’-কে সামনে রেখে করিমগঞ্জ জেলার কালীনগর চা-বাগানে লক আউট ঘোষণা করা হয়। কিন্তু গোলমালের শুরু কী থেকে? পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, এক শ্রমিকের গরু সহকারী ম্যানেজার অমলেন্দু দাশগুপ্তর বাংলোর বাগানে ঢুকে পড়েছিল। তিনি ওই শ্রমিককে ডেকে পাঠান। তিনি এলে অমলেন্দুবাবুর সামনেই তাঁর গাড়িচালক ওই শ্রমিককে মারধর করেন। এতে বাগানে উত্তেজনা দেখা দেয়। এরপর শ’দুয়েক শ্রমিক জোট বেঁধে অমলেন্দুবাবুর বাংলোয় হানা দেন। সহকারী ম্যানেজার পালিয়ে যান। এরপরই মালিক পক্ষ বাগানে লক আউট ঘোষণা করে। অন্য দিকে, গত মঙ্গলবারই ভুবনভ্যালি চা-বাগানে শ্রমিকদের একাংশ নির্দিষ্ট সময়ের আগে কাজ ছেড়ে চলে যাওয়ায় ফিল্ড ম্যানেজার বিজয়কুমার তিওয়ারি পাঁচ জন শ্রমিককে মারধর করেন বলে অভিযোগ। এদের মধ্যে এক মহিলা শ্রমিকও ছিলেন। এতে শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে দল বেঁধে গিয়ে তিওয়ারিকে ধরে আনেন। তাঁকে মারধর করে বাগানের অফিস-ঘরে আটকে রাখেন ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। শেষ পর্যন্ত লক্ষ্মীপুরের এসডিপিও অঞ্জন পণ্ডিতের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে তিওয়ারিকে উদ্ধার করে। বৃহস্পতিবার বাগান কর্তৃপক্ষ লক আউট ঘোষণা করেন।
শ্রম দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই জায়গাতেই সঙ্কট কাটাতে তারা উদ্যোগী হয়েছেন। উভয় পক্ষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। বুধবার কালীনগর নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভুবনভ্যালির সমস্যা মেটাতে সংশ্লিষ্টদের আলোচনায় ডাকা হয়েছে। দু’টি বাগানে এ ভাবে আচমকা কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বরাক চা শ্রমিক ইউনিয়ন। সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক দীননাথ বারই বলেন, বিরোধ নিষ্পত্তি করে দ্রুত বাগানে কাজকর্ম শুরুর জন্য তাঁরা সহকারী শ্রম কমিশনারকে অনুরোধ করেছেন। পাশাপাশি, টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (টাই)-র সুরমা ভ্যালি শাখার সচিব কল্যাণ মিত্র বলেন, ‘‘কিছু শ্রমিক অত্যন্ত উগ্র। কথায় কথায় দল বেঁধে তারা হাঙ্গামা করে। দুই বাগানের সমস্যাই ওই একই ধরনের।’’ তাঁর মতে, ওই পরিস্থিতিতে লক আউট ঘোষণা করা ছাড়া অন্য উপায় ছিল না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘শৃঙ্খলা না থাকলে বাগান পরিচালনা অসম্ভব।’’ তবে শ্রম বিভাগের ডাকা বৈঠকে তাঁরা সহযোগিতার মানসিকতা নিয়েই উপস্থিত থাকবেন বলে কল্যাণবাবু জানান।