গুজরাতে বিধানসভার ভোটের মুখে উত্তরপ্রদেশের পুরভোটে ‘গেরুয়া ধ্বজা’ ওড়ালেন যোগী। ছবি: পিটিআই
ভোটের আট দিন আগেই বিজয় উৎসব অমদাবাদের রাস্তায়।
বিজেপিকে এই বেনজির সুযোগটি করে দিলেন নরেন্দ্র মোদী নন, যোগী আদিত্যনাথ। গুজরাতে বিধানসভার ভোটের মুখে উত্তরপ্রদেশের পুরভোটে ‘গেরুয়া ধ্বজা’ ওড়ালেন যোগী। গোরক্ষপুরের নিজের মঠের এলাকাতেই বিজেপিকে জেতাতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রীর কেন্দ্র বারাণসীতেও দলের একাধিপত্য ধরে রাখা যায়নি। উপমুখ্যমন্ত্রী কেশব মৌর্যের গড় ইলাহাবাদেও হার হয়েছে বিজেপির। ‘মরা হাতি’ লাখ টাকার মতোই হঠাৎই উদয় হল মায়াবতীর। তবু মোটের উপর রাজ্যজুড়ে ঝড় তুলে বিজয় উৎসবে নামল বিজেপি। নিজেদের জয়ের থেকেও বড় করে মেলে ধরল গুজরাতে নরেন্দ্র মোদীর প্রধান প্রতিপক্ষ রাহুল গাঁধীর নির্বাচনী কেন্দ্র অমেঠীতে কংগ্রেসের হারকে।
আরও পড়ুন: গুজরাতে হলটা কী
মোদী থেকে যোগী, অমিত শাহ থেকে স্মৃতি ইরানি— সবাই নেমে পড়লেন আসরে। এক সুরে রাহুলকে বিঁধলেন শ্লেষে, ‘‘যিনি অমেঠীর একটি ওয়ার্ডেও জিততে পারেন না, তিনি গুজরাতে এসে জয়ের কথা বলছেন!’’ আর খোদ মোদী বললেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে উন্নয়নের জয়। নোটবন্দি, জিএসটি নিয়ে কত অপপ্রচার হয়েছে। বিজেপি না কি জিতবে না! উত্তরপ্রদেশের হাওয়া এ বার গুজরাতেও আসছে।’’ ছাড়লেন না গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণীও। রাহুলকে সভাপতি করার প্রক্রিয়াকে ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের এক নেতা শেহজাদ পুনাওয়ালা চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। রূপাণী বললেন, ‘‘শাহজাদা এখন শেহজাদের জবাব দিন।’’
আরও পড়ুন: ধর্ষণ নিয়ে মন্তব্য, বিতর্কে কিরণ
ক’দিন আগেই গুজরাতের প্রচারে গিয়ে মোদী বলেছিলেন, ‘‘এখন তিনটি ভোট হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশে পুরভোট, গুজরাতে বিধানসভা আর কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচন। প্রথম দুটিতে বিজেপি জিতবে, তৃতীয়টিতে একটি পরিবার।’’ বিজেপি আজ সমস্বরে বলতে শুরু করল, মোদীর ভবিষ্যদ্বাণী ফলতে শুরু করেছে।
স্বাভাবিক ভাবেই গুজরাত ভোটের মুখে পুরভোটের ফল নিয়ে অস্বস্তিতে রাহুল শিবির। তবে দলের নেতাদের পাল্টা বক্তব্য, বিজেপি মিথ্যা প্রচার করছে। সনিয়া গাঁধীর কেন্দ্র রায়বরেলীতে নগর পালিকা পরিষদ সভাপতির পদে জিতেছে কংগ্রেস। আর অমেঠীতে সভাপতির পদে লড়েইনি কংগ্রেস। অমেঠীর দু’টি নগর পালিকা পর্ষদ সভাপতির মধ্যে একটিতে বিজেপি, অন্যটিতে সমাজবাদী জিতেছে। সপার সঙ্গে আগে থেকে সমঝোতা হলে এমন হাল হতো না। বিজেপির পাল্টা দাবি— হার নিশ্চিত জেনেই কংগ্রেস লড়েনি। যেখানে লড়েছে, হেরেছে। নগর পঞ্চায়েত সভাপতি পদেও দু’টিতে একটি বিজেপি, অন্যটিতে নির্দলের জয় হয়েছে। কংগ্রেস সাফ।
উত্তরপ্রদেশের জয়কে গোটাটাই এখন গুজরাতমুখী করতে চাইছে বিজেপি। যোগী আজ ২০১৯ সালের ডঙ্কাও বাজিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু বিজেপির কাছে আশঙ্কার বিষয় দু’টি। যে মায়াবতীকে অনেকে বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছিলেন, পুরভোটে মূলত দলিত-সংখ্যালঘু অঙ্কে তিনিই আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছেন। আর আগের দাপট না-থাকলেও ভোটের ক্ষত মিটিয়ে অখিলেশও খারাপ ফল করেননি। সেই তুলনায় কংগ্রেসই অনেকটা পিছিয়ে। কংগ্রেস নেতারা বলছেন, এ তো নিছক পুরভোট। পরের লোকসভায় তিন দল এক ছাতার তলায় এলেই বিরোধী ঝড়ে উড়ে যাবেন মোদী।