বোয়িংয়ের বিমানের জ্বালানির সুইচই কি দুর্ঘটনার কারণ? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
বোয়িংয়ের বিমানে জ্বালানির সুইচ নিয়ে মুখ খুলল আমেরিকার ফেডেরাল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ)। অহমদাবাদের বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত-রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর তারা এ নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। পৃথক ভাবে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বিমান নির্মাতা সংস্থা বোয়িংও। উভয়েরই বক্তব্য, বিমানে জ্বালানির সুইচে ‘লকিং সিস্টেম’ অসুরক্ষিত নয়। তাতে বিপদের সম্ভাবনা নেই। ফলে এই সুইচের সংস্কার সংক্রান্ত কোনও নির্দেশিকাও দেওয়া হচ্ছে না। এফএএ-র বিজ্ঞপ্তি এসেছে অহমদাবাদের দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টটি প্রকাশ্যে আসার পর। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এই সংক্রান্ত নথি খতিয়ে দেখেছে।
বিমান নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে বিজ্ঞপ্তিতে এফএএ বলেছে, ‘‘যদিও বোয়িংয়ের বিভিন্ন মডেলে জ্বালানি নিয়ন্ত্রণের সুইচ এবং তার ‘লকিং’ পদ্ধতি একই ধরনের, একে ‘অসুরক্ষিত’ বলে মনে করছে না এফএএ। যে পরিস্থিতিতে আমরা ‘এয়ারওয়র্দিনেস ডিরেক্টিভ’ জারি করি, বোয়িংয়ের কোনও মডেলেই তা তৈরি হয়নি। ৭৮৭ মডেলেও নয়।’’ উল্লেখ্য, অহমদাবাদে যে বিমানটি ভেঙে পড়েছিল, সেটি বোয়িংয়ের ৭৮৭ মডেলের ছিল।
এফএএ-র এই বিজ্ঞপ্তি উল্লেখ করে বিভিন্ন বিমান সংস্থাগুলির কাছে পৃথক বার্তা পাঠিয়েছে বোয়িং। বলা হয়েছে, জ্বালানির সুইচের ‘লকিং সিস্টেমে’ কোনও বদলের প্রয়োজন নেই।
গত ১২ জুন অহমদাবাদ থেকে লন্ডনের অদূরে গ্যাটউইকের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল বোয়িং সংস্থার এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান এআই১৭১। রানওয়ে ছাড়ার ৩২ সেকেন্ডের মধ্যে সেটি সামনের বহুতলে ধাক্কা খেয়ে ভেঙে পড়ে। বিমানের ২৪২ জনের মধ্যে ২৪১ জন-সহ মোট ২৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে এই ঘটনায়। এক মাসের মাথায় প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে ভারতের এয়ারক্র্যাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএআইবি)। তাতে প্রাথমিক ভাবে জ্বালানির সুইচে সমস্যাকেই দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে দেখানো হয়। বিমানটির ককপিটে শেষ মুহূর্তে দুই পাইলটের মধ্যে যে কথাবার্তা হয়েছিল, রিপোর্টে তা প্রকাশ করা হয়েছে। এক পাইলটের উদ্দেশে অপরকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘কেন তুমি বন্ধ (জ্বালানির সুইচ) করে দিলে?’’ তখন অন্য জন উত্তর দেন, ‘‘আমি কিছু বন্ধ করিনি।’’
জ্বালানির সুইচ ‘রান’ থেকে ‘কাটঅফ’-এ পৌঁছে গিয়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার ওই বিমান রানওয়ে ছাড়ার পরেই। এর ফলে ইঞ্জিনে জ্বালানি পৌঁছোনো বন্ধ হয়ে যায়। এক সেকেন্ডের ব্যবধানে দু’টি ইঞ্জিনই বন্ধ হয়ে যায়। সময় থাকতে থাকতে তা আর চালানো যায়নি। এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর আমেরিকার এফএএ-র সাত বছর আগের একটি সতর্কবার্তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এফএএ বোয়িং ৭৩৭ জেটগুলি নিয়ে একটি উপদেশাবলি (অ্যাডভাইজ়রি) জারি করেছিল। স্পেশ্যাল এয়ারওয়র্দিনেস ইনফরমেশন বুলেটিন (এসএআইবি)-এ বলা হয়েছিল, বোয়িং ৭৩৭-এর কিছু বিমানে জ্বালানি নিয়ন্ত্রণকারী সুইচ ত্রুটিপূর্ণ ভাবে লাগানো হয়েছে। তাতে ‘লকিং ফিচার’ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে। তবে এটি সাধারণ একটি উপদেশাবলি ছিল। এর ফলে বোয়িংয়ের নির্দিষ্ট ওই বিমানগুলিকে ‘অসুরক্ষিত’ বলে দেগে দেওয়া হয়নি।
সাধারণত বিমানের কোনও ত্রুটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে এয়ারওয়র্দিনেস ডিরেক্টিভ্স জারি করে থাকে এফএএ। তাতে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ওই ত্রুটি সংশোধনে আইনত বাধ্য থাকে। এ ক্ষেত্রে তেমন কিছু করা হয়নি। ফলে এয়ার ইন্ডিয়ার জন্যেও এই পরামর্শ মেনে বিমানের জ্বালানির সুইচ পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে কোনও আইনগত বাধ্যবাধকতা ছিল না। তবে সতর্কবার্তাকে গুরুত্ব দিলে ১২ জুনের বিমানটিতে জ্বালানির সমস্যা না-ও দেখা দিতে পারত বলে দাবি করছিলেন অনেকে। তার মাঝেই এফএএ থেকে আবার এল জ্বালানির সুইচ সংক্রান্ত বিবৃতি।