Advertisement
E-Paper

বোয়িং বিমানে জ্বালানির সুইচ ‘লক’ করা নেই, ৭ বছর আগেই সতর্ক করেছিল মার্কিন সংস্থা, গুরুত্ব দেয়নি এয়ার ইন্ডিয়া?

শনিবার অহমদাবাদের বিমান দুর্ঘটনার এক মাসের মাথায় প্রাথমিক তদন্ত-রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তদন্তকারী সংস্থা। তা থেকে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, বিমানের জ্বালানির সুইচের স্থান পরিবর্তনই দুর্ঘটনার মূল কারণ।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৫ ১২:৫৬
এয়ার ইন্ডিয়ার দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানে জ্বালানির সুইচে গোলমাল ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান।

এয়ার ইন্ডিয়ার দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানে জ্বালানির সুইচে গোলমাল ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

বোয়িং সংস্থার কিছু বিমানে জ্বালানির সুইচে ত্রুটি রয়েছে। সাত বছর আগেই তা নিয়ে সতর্কবার্তা শুনিয়ে রেখেছিল আমেরিকার ফেডেরাল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ)। কিন্তু তার ভিত্তিতে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি এয়ার ইন্ডিয়ার তরফে। গত ১২ জুন যে বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে, সেটিও বোয়িংয়ের ওই ধরনের বিমান ছিল বলে জানানো হয়েছে। অনেকেই বলছেন, বিমান সংস্থা আরও কিছুটা সতর্ক হলে, পরামর্শ মেনে চললে এত বড় দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।

শনিবার অহমদাবাদের বিমান দুর্ঘটনার এক মাসের মাথায় প্রাথমিক তদন্ত-রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তদন্তকারী সংস্থা এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএআইবি)। তা থেকে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, বিমানের জ্বালানির সুইচের স্থান পরিবর্তনই দুর্ঘটনার মূল কারণ। বিমান রানওয়ে ছাড়ার পরেই জ্বালানির সুইচ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফলে ইঞ্জিনগুলিতে জ্বালানি সরবরাহও থেমে যায়। বিকল ইঞ্জিন নিয়ে মাঝ-আকাশে আর ভেসে থাকতে পারেনি এয়ার ইন্ডিয়ার এআই১৭১।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এফএএ বোয়িং ৭৩৭ জেটগুলি নিয়ে একটি উপদেশাবলি (অ্যাডভাইজ়রি) জারি করেছিল। স্পেশ্যাল এয়ারওর্দিনেস ইনফরমেশন বুলেটিন (এসএআইবি)-এ বলা হয়েছিল, বোয়িং ৭৩৭-এর কিছু বিমানে জ্বালানি নিয়ন্ত্রণকারী সুইচ ত্রুটিপূর্ণ ভাবে লাগানো হয়েছে। তাতে ‘লকিং ফিচার’ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে। তবে এটি সাধারণ একটি উপদেশাবলি ছিল। এর ফলে বোয়িংয়ের নির্দিষ্ট ওই বিমানগুলিকে ‘অসুরক্ষিত’ বলে দেগে দেওয়া হয়নি। সাধারণত বিমানের কোনও ত্রুটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে এয়ারওর্দিনেস ডিরেক্টিভ্‌স জারি করে থাকে এফএএ। তাতে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ওই ত্রুটি সংশোধনে আইনত বাধ্য থাকে। এ ক্ষেত্রে তেমন কিছু করা হয়নি। ফলে এয়ার ইন্ডিয়ার জন্যেও এই পরামর্শ মেনে বিমানের জ্বালানির সুইচ পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে কোনও আইনগত বাধ্যবাধকতা ছিল না। তবে সতর্কবার্তাকে গুরুত্ব দিলে ১২ জুনের বিমানটিতে জ্বালানির সমস্যা না-ও দেখা দিতে পারত বলে দাবি অনেকের।

বোয়িং ৭৩৭ জেটের সুইচ ডিজ়াইনই ৭৮৭-৮ জেটে ব্যবহার করা হয়েছিল। এই বিমান অহমদাবাদে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এফএএ সুইচের ত্রুটির পরিদর্শন প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু সে বিষয়ে বিমান সংস্থা কোনও পদক্ষেপ করেনি।

জ্বালানির সুইচ সাধারণত বিমান রানওয়ে ছাড়ার আগে এবং অবতরণের সময়ে রানওয়ে ছোঁয়ার পরে ব্যবহার করেন পাইলটেরা। এর মাধ্যমে ইঞ্জিনে জ্বালানি পৌঁছোয়। মাঝ-আকাশে কোনও আপৎকালীন পরিস্থিতি তৈরি হলেও এই সুইচের মাধ্যমে জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন পাইলটেরা। এ ক্ষেত্রে তেমন কোনও পরিস্থিতি আসেনি। বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, ভুল করে কোনও পাইলটের পক্ষে জ্বালানির সুইচ বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব নয়। বিশেষত, যখন বিমানটি সবে রানওয়ে ছেড়েছে।

তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, বিমান ওড়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দু’টি ইঞ্জিনই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জ্বালানির সুইচ ‘রান’ (চালু) থেকে ‘কাটঅফ’ (বন্ধ)-এ চলে এসেছিল। এই সময়ে এক পাইলট অন্য পাইলটকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘কেন তুমি বন্ধ (জ্বালানি) করে দিলে?’’ অন্য জন উত্তর দেন, ‘‘আমি কিছু বন্ধ করিনি।’’ মুহূর্তের মধ্যে বিমানের গতি এবং উচ্চতা কমতে থাকে। পাইলটেরা সেই মুহূর্তে দু’টি জ্বালানির সুইচই আবার ‘কাটঅফ’ থেকে ‘রান’-এ নিয়ে এসেছিলেন। ইঞ্জিন চালু করার মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। ইঞ্জিন-২ সাময়িক ভাবে স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরেওছিল। কিন্তু ইঞ্জিন-১ আর চালু করা যায়নি। এই দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানে ছিলেন গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি-সহ ২৪২ জন। এক জন মাত্র যাত্রী বেঁচে গিয়েছেন। সরকারি হিসাবে মৃত্যু হয়েছে মোট ২৬০ জনের।

Plane Crash Gujarat Plane Crash Ahmedabad
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy