(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
আবার ‘ব্রিকস্’-কে ১০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর হুঁশিয়ারি দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার (স্থানীয় সময় অনুযায়ী) তিনি আরও তীব্র ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, খুব শীঘ্রই ‘ব্রিকস্’-এর সদস্য দেশগুলিকে ১০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে! তাঁর দাবি, আমেরিকার ক্ষতি করার উদ্দেশ্য নিয়েই তৈরি হয়েছে ‘ব্রিকস্’। সেই উদ্দেশ্য সফল হতে দেবেন না তিনি! প্রশ্ন উঠছে, এই পরিস্থিতিতে ভারত কী করবে। কারণ, ‘ব্রিকস্’-এর অন্যতম সদস্য ভারত। উল্লেখ্য, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে আমেরিকার। তবে এখনও তা চূড়ান্ত হয়নি। যদিও ট্রাম্প আশাবাদী, খুব তাড়াতাড়ি এই নিয়ে ঘোষণা হয়ে যাবে। বাণিজ্যচুক্তি হলেও কি ভারতকে ১০ শতাংশ শুল্ক গুনতে হবে না কি অন্যপথে হবে সমাধান? ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির পর আবার এক বার সেই প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে নানা মহলে।
হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প আবার এক বার ‘ব্রিকস্’ নিয়ে মুখ খোলেন। তিনি ‘ব্রিকস্’ জোটকে আমেরিকার স্বার্থের পরিপন্থী বলে মনে করছেন। শুধু তা-ই নয়, ট্রাম্পের কণ্ঠে শোনা গেল ‘খেলা হবে’ বার্তাও। তিনি বলেন, ‘‘যদি তারা ব্রিকস্-এ থাকে তবে অবশ্যই তাদের ১০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। আমাদের ক্ষতি করা, ডলারের অবক্ষয় ঘটানোর জন্য ব্রিকস্ তৈরি হয়েছিল।’’ তার পরেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের হুঁশিয়ারি, ‘‘যদি তারা (ব্রিকস্ সদস্যেরা) সেই খেলা খেলতে চায়, আমিও খেলতে প্রস্তুত!’’ তাঁর স্পষ্ট বার্তা, ‘‘কেউ যদি ডলারের চ্যালেঞ্জ করতে চায়, তবে তাদের মূল্য চোকাতে হবে।’’
উল্লেখ্য, ‘ব্রিক্স’-এর প্রাথমিক সদস্য দেশগুলির মধ্যে ভারত ছাড়াও রয়েছে চিন, রাশিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। এ ছাড়াও পরে এই জোটে যোগ দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ইরান, ইথিওপিয়া, মিশর এবং ইন্দোনেশিয়া। গত রবিবার ব্রাজ়িলের রিও ডি জেনেইরো শহরে ‘ব্রিক্স’ সম্মেলন আয়োজিত হয়। সেখানে বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। ওই সম্মেলন শেষে ৩১ পাতার একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে ‘ব্রিক্স’। ওই বিবৃতিতে ১৩ জুন থেকে ইরানের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া সামরিক অভিযানের নিন্দা জানানো হয়। যদিও আমেরিকা বা ইজ়রায়েলের নামের উল্লেখ ছিল না সেখানে। বিবৃতিতে উঠে এসেছে শুল্কের প্রসঙ্গও। ‘ব্রিক্স’ জানিয়েছিল, বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞামূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ, তা সে নির্বিচারে শুল্ক বৃদ্ধি করাই হোক বা অন্য কোনও ঘোষণা— এগুলি বিশ্ব বাণিজ্যকে আরও পিছিয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রেও সরাসরি কোনও দেশের নামোল্লেখ ছিল না। আমেরিকার নাম না করা হলেও শুল্ক নিয়ে এই বার্তা যে ট্রাম্পকেই, তা স্পষ্ট। তার পরেই আসে ট্রাম্পের শুল্ক-হুঁশিয়ারি।
আমেরিকায় দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্প ভারত-সহ একাধিক দেশের উপর বাড়তি শুল্ক ঘোষণা করেছিলেন। ভারতের উপর চাপানো হয়েছে ২৬ শতাংশ কর। তার পর এই শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত তিন মাস স্থগিত রাখা হয়। যে সময়সীমা শেষ হচ্ছে বুধবার ৯ জুলাই। এই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন দেশ আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা চালিয়েছে। কয়েকটি দেশের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি চূড়ান্তও হয়ে গিয়েছে। কথা চলছে নয়াদিল্লির সঙ্গেও। তবে এখনও ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তি চূড়ান্ত হয়নি। তার মধ্যেই ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়ে দেয়, যে সব দেশের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি হবে না, তাদের নতুন হারে আমদানি শুল্ক দিতে হবে। ১ অগস্ট থেকে তা কার্যকর হবে। কোন দেশকে কত শুল্ক দিতে হবে, তা চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেবে ট্রাম্প প্রশাসন। ইতিমধ্যেই জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া-সহ ১২ দেশের কাছে ট্রাম্পের শুল্ক-চিঠি পৌঁছে গিয়েছে। তার মাঝেই ‘ব্রিক্স’ নিয়ে বাড়তি শুল্কের কথা আবার বললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।