বিস্ফোরণস্থল। ছবি: পিটিআই।
শুধু এনায়েতপুর নয়। মালদহের মানিকচক এলাকার প্রতি ঘর থেকেই কেউ না কেউ কাজ করেন উত্তরপ্রদেশের ভাদোহি জেলার বিভিন্ন গ্রামে। শুধু রোতাহা গ্রাম নয়, ওই চত্বরের পর পর গ্রামে চলে কার্পেট বোনার কাজ। সেই কাজ করতেই এ রাজ্য থেকে উত্তরপ্রদেশে ফি বছর কাজ করতে যান কয়েক হাজার মানুষ।
এনায়েতপুরের অনেকেই এর আগে রোতাহার কাড়িয়ার মনসুরির কার্পেট কারখানায় কাজ করে এসেছেন। তাঁদেরই একজন শাহজাহান মোল্লা, কয়েক সপ্তাহ আগেই এনায়েতপুরে ফিরেছেন। তাঁর কথায় মনসুরির একতলা বাড়ির সামনে একটা দোকান আছে। বাড়ির ভিতর পিছন দিকে কার্পেটের কারখানা। এনায়েতপুর তল্লাটের সবাই দাবি করেন যে তাঁরা ওখানে কার্পেট বুনতেই যান। তার প্রমাণও ছড়িয়ে ছিটিয়ে গ্রাম জুড়ে। কাজ শিখে এসে অনেকেই নিজের গ্রামেও কার্পেট বানাচ্ছেন। তারও চিহ্ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে।
অথচ হিসাবটা মেলে না একেবারেই। কারণ শনিবারের বিস্ফোরণের পর উত্তরপ্রদেশ পুলিশের দাবি, কার্পেটের কারখানার আড়ালে বেআইনি ভাবে বাজি তৈরি করা হচ্ছিল মনসুরির বাড়িতে। প্রচুর পরিমান বিস্ফোরক মজুত করে রাখা ছিল সেখানে। আর তার জেরেই বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পর ওই একতলা বাড়ির অধিকাংশটাই যেমন ধ্বসে পড়েছে, তেমনি আশেপাশের অন্তত তিনটি বাড়িরও ভয়ানক ক্ষতি হয়েছে। আর তাই ভাদোহির বিস্ফোরণ ঘিরে দানা বাঁধছে রহস্য।
আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশে কার্পেট ফ্যাক্টরিতে বিস্ফোরণ, মৃত ১১-র মধ্যে ৯ জনই এ রাজ্যের
রোতাহার বাসিন্দাদের বয়ান অনুযায়ী, শনিবার দুপুর ১১টা ৪০মিনিট নাগাদ বিকট বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনেন তাঁরা। ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখেন, গোটা বাড়িটাই প্রায় ভেঙে পড়েছে। বিস্ফোরণের অভিঘাত এতটাই বেশি ছিল যে, ভিতরে থাকা কাড়িয়ার মনসুরির দুই ছেলে ইরফান এবং আবিদ-সহ মালদহের ন’জন শ্রমিকের দেহ অনেকটা দূর পর্যন্ত ছিটকে গিয়েছে। কয়েক জনের দেহ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। ঘটনাস্থলে শীর্ষ পুলিশ কর্তারা পৌঁছন, সঙ্গে ছিলেন এনডিআরএফের জওয়ানরা। শনিবারই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বিস্ফোরণ স্থল থেকে যে নমুনা সংগ্রহ করেন।
আরও পড়ুন: ‘পাকিস্তান একটা পরমাণু বোমা ফেললে ভারত ২০টা ফেলে ধ্বংস করবে’: পারভেজ মুশারফ
ভাদোহির জেলাশাসক রাজেন্দ্র প্রসাদ বলেন,‘‘ প্রাথমিক তদন্ত থেকে স্পষ্ট, কোনও ধরনের লাইসেন্স ছাড়াই বেআইনি ভাবে বাজি তৈরি করা হচ্ছিল। আর বাজির জন্য মজুত বিস্ফোরক থেকেই এত বড় বিস্ফোরণ।’’ স্থানীয়রাও পুলিশকে জানিয়েছেন যে কাড়িয়ার মনসুরি প্রায় ১০ বছর ধরে ওই বাড়িতে বাজি বানাচ্ছে এবং ওই এলাকার সবাই মনসুরির বাড়ি থেকেই বাজি কেনেন।
মির্জাপুরের রে়ঞ্জ ডিআইজি পীযূষ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘প্রচুর পরিমাণ বারুদ ওই বাড়িতে মজুত ছিল। তাই এ রকম ভয়ঙ্কর অভিঘাত।’’ পুলিশ সূত্রে খবর, শুধু বাজি তৈরির জন্যই ওই বাড়িতে এত বারুদ মজুত করা হয়েছিল কি না, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন তদন্তকারীরাও। আর তার সঙ্গে রহস্য বাড়িয়েছে এনায়েতপুর এবং মানিকচকের বাসিন্দাদের বয়ান, যাঁরা বলছেন ওখানে তাঁরা কার্পেট বুনতেই যেতেন, বাজির তাঁরা বিন্দুবিসর্গ জানেন না।