Uttarakhand Bidding Controversy

উত্তরাখণ্ডের পর্যটন প্রকল্পে দরপত্র এবং বরাত নিয়ে বিতর্ক, শোরগোল

উত্তরাখণ্ডের ওই পর্যটন প্রকল্পে এই নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর প্রতিবেদনটিতে। এই সংক্রান্ত আর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দরপত্র জমা দিয়ে বরাত পাওয়া সংস্থাটির আয় মাত্র এক বছরে আট গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৮:১৬
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

মসূরীর কাছে জর্জ এভারেস্টের নামাঙ্কিত পর্যটন প্রকল্প দেখভাল করতে ইচ্ছুক সংস্থাগুলির কাছে দরপত্র চেয়েছিল উত্তরাখণ্ড সরকার। তিনটি সংস্থা দরপত্র জমা দেয়। সর্বোচ্চ টাকা দিতে সম্মত হওয়া সংস্থাকে পর্যটনকেন্দ্রের দায়িত্বও দেওয়া হয়। ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর অন্তর্তদন্তমূলক প্রতিবেদন অনুসারে, ওই তিনটি সংস্থারই মালিক রামদেব ঘনিষ্ঠ এবং আয়ুর্বেদ সংস্থা ‘পতঞ্জলি’-র কর্তা আচার্য বালকৃষ্ণ। নিয়ম অনুযায়ী, একই ব্যক্তির মালিকানাধীন একাধিক সংস্থা দরপত্র জমা দিতে পারে না। কিন্তু উত্তরাখণ্ডের ওই পর্যটন প্রকল্পে এই নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর এই সংক্রান্ত আর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দরপত্র জমা দিয়ে বরাত পাওয়া সংস্থাটির আয় মাত্র এক বছরে আট গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

Advertisement

মসূরীর কাছে হিমালয়ের কোলে জর্জ এভারেস্ট এস্টেট ১৪২ একরের একটি জায়গা। ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এই জায়গাটির পরিকাঠামোগত উন্নয়ন করে উত্তরাখণ্ড সরকার। সেখানে তৈরি করা হয় পার্কিং লট, হেলিপ্যাড, পাঁচটি কাঠের বাড়ি, একটি ক্যাফেটেরিয়া, দু’টি সংগ্রহশালা এবং একটি মানমন্দির। এই জায়গায় পর্যটকদের আরও বেশি আকৃষ্ট করতে আগ্রহী সংস্থাগুলিকে দেখভালের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় উত্তরাখণ্ডের পর্যটন উন্নয়ন বোর্ড (ইউটিডিবি)। তিনটি সংস্থা দরপত্র জমা দেয়। সেগুলি হল ‘রাজাস অ্যারোস্পোর্টস অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চারস প্রাইভেট লিমিটেড’, ‘ভারুয়া অ্যাগ্রি সায়েন্স প্রাইভেট লিমিটেড’ এবং ‘প্রকৃতি অর্গানিকস ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড’। ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, উপরিউক্ত শেষ দু’টি সংস্থায় বালকৃষ্ণের ৯৯ শতাংশের বেশি অংশীদারি রয়েছে। আর যে সংস্থা কাজের বরাত পেয়েছে, ‘রাজাস অ্যারোস্পোর্টস অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চারস প্রাইভেট লিমিটেড’-এ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে বালকৃষ্ণের ৬৯.৪৩ শতাংশ অংশীদারি রয়েছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, ‘রাজাস অ্যারোস্পোর্টস’ তৈরি হয় ২০১৩ সালে। কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকে জমা পড়া নথি অনুসারে, এই সংস্থার মূল লক্ষ্য হল, পর্যটকদের বিভিন্ন অ্যাডভে়ঞ্চার স্পোর্টস উপভোগ করার সুযোগ করে দেওয়া। শুরুতে সংস্থাটির মালিক হিসাবে গাজ়িয়াবাদের বাসিন্দা, দুই ভাই ময়াঙ্ক সাইনি এবং মণীশ সাইনির নাম নথিভুক্ত ছিল। ২০১৮ সালে এই সংস্থার অংশীদার হন বালকৃষ্ণ। প্রতিবেদন অনুসারে, ওই সংস্থায় বালকৃষ্ণের একারই ১৮.৭৫ শতাংশ অংশীদারি রয়েছে। বালকৃষ্ণের অংশীদারি রয়েছে, এমন ছ’টি সংস্থা মিলিয়ে ওই পতঞ্জলি-কর্তার অংশীদারির পরিমাণ ৬৯.৪৩ শতাংশ। ‘রাজাস অ্যারোস্পোর্টস’ সংস্থায় অংশীদারি রয়েছে দরপত্র জমা দেওয়া বাকি দুই সংস্থা ‘ভারুয়া অ্যাগ্রি সায়েন্স প্রাইভেট লিমিটেড’ এবং ‘প্রকৃতি অর্গানিকস ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড’-এরও।

Advertisement

২০২৩ সালের ২১ জুলাই আনুষ্ঠানিক ভাবে উত্তরাখণ্ডের ওই পর্যটনকেন্দ্রের দায়িত্ব হাতে পায় ‘রাজাস অ্যারোস্পোর্টস’। প্রথমে পরীক্ষামূলক ভাবে কাজ করার জন্য সংস্থাটিকে এক বছরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। পরে চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে ১৫ বছর করা হয়। চুক্তি অনুসারে উত্তরাখণ্ড সরকারের পরিকাঠামো ব্যবহার করার জন্য বছরে এক কোটি টাকা দেবে সংস্থাটি। প্রতি বছর তিন শতাংশ হারে টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। প্রতিবেদন অনুসারে, ওই পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে সংস্থার লাভও। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে সংস্থার বার্ষিক আয় ছিল ১ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে তা বেড়ে হয়েছে ৯ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা।

বরাত পাওয়া সংস্থার লাভ কোথায়, তা-ও উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। দু’ঘণ্টার জন্য চারচাকা গাড়়ি পার্কিং করতে নেওয়া হয় ২০০ টাকা। ওই একই সময়ে দু’চাকা গাড়ির জন্য নেওয়া হয় ১০০ টাকা। হেলিকপ্টারে এয়ার সাফারির ভাড়া প্রতি ৫-৭ মিনিটের জন্য ৫০০০ টাকা। একই মালিকের তিন সংস্থার দরপত্র জমা দেওয়া নিয়ে উত্তরাখণ্ডের পর্যটন দফতরের অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম শাখার সহকারী ডিরেক্টর অমিত লোহানি ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-কে বলেন, “যে কেউ দরপত্র জমা দিতে পারতেন। এক জন ব্যক্তির অন্য সংস্থাতেও অংশীদারি থাকতে পারে। এটা কোনও অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়।” উত্তরাখণ্ডের পর্যটন উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত সিইও অশ্বিনী পুন্ডির বলেন, “আমরা সংস্থাগুলির অতীত খুঁড়তে যাব না। দরপত্রে সর্বোচ্চ দরের প্রস্তাব দেওয়া সংস্থাকেই নিশ্চয়ই আপনারা কাজের বরাত দেবেন। এখানে মূল বিষয় একটিই। তা হল, সংস্থাটিকে বৈধ এবং বিধিসম্মত হতে হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement