(বাঁ দিকে) উদ্ধার হওয়া সেই গাড়ি, প্রবীণ মিত্তল (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
হরিয়ানার পঞ্চকুলায় মিত্তল পরিবারের সাত জনের মৃত্যুতে পরতে পরতে রহস্য। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছিল, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন প্রবীণ মিত্তলেরা। কিন্তু পুলিশি তদন্ত অন্য কথা বলছে। এক তদন্তকারী জানিয়েছেন, মিত্তলেরা কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যাননি। বরং ওই পরিবারের সদস্যেরা আত্মহত্যার জন্য একটি জায়গা বেছেছিলেন, কিন্তু শেষ মুহূর্তে কোনও কারণে সেই ঠিকানা বদলে ফেলেছিলেন তাঁরা। কিন্তু কেন ঠিকানা বদলাতে হল, সেই উত্তর খুঁজছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, মিত্তলেরা প্রথমে পঞ্চকুলার ১২-এ সেক্টরে ডক্টর বিআর অম্বেডকর ভবনে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেক্টর ২৭-এ চলে আসেন গাড়ি নিয়ে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, সাকেত্রিতে ভাড়াবাড়ি থেকে সোমবার সকালে বেরিয়ে যান মিত্তলেরা। তার পর তাঁরা অম্বেডকর ভবনে দু’টি ঘর বুক করেন।
তদন্তকারী এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমাদের সন্দেহ অম্বেডকর ভবনেই প্রথমে আত্মহত্যার পরিকল্পনা ছিল মিত্তলদের। কিন্তু সেই পরিকল্পনা বদলাতে হয়েছিল। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে অম্বেডকর ভবন ছেড়ে বেরিয়ে যান।’’ ওই তদন্তকারী আধিকারিক আরও জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছিল যে, সেক্টর ৫-এ এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মিত্তলেরা গিয়েছিলেন। কিন্তু আদৌ কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যাননি তাঁরা। সাকেত্রি থেকে বেরিয়ে প্রথমে অম্বেডকর ভবনে যান। তার পর সেখান থেকে সোজা সেক্টর ২৭-এ আসেন। বসতি এলাকায় গাড়ি দাঁড় করান।
প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণ বলছে, এটি খুনের ঘটনা নয়। তবুও মিত্তল পরিবারের গত ছ’মাস থেকে এক বছরের অতীত ঘেঁটে দেখা হচ্ছে। মিত্তলদের এক আত্মীয় জানিয়েছেন, প্রবীণ মিত্তল যে ব্যবসাতেই নেমেছেন, সব ক’টিতেই লোকসানের মুখ দেখেছে। ২০০৮ সাল থেকে মিত্তল পরিবারে নেমে আসে দুর্যোগ। লোহার ছাঁটের যে কারখানা ছিল, সেই ব্যবসায় ব্যাপক লোকসান হয়। নানা ভাবে ব্যবসাটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করেও পারেননি। ঋণের বোঝা বাড়তে থাকে। ব্যাঙ্কের ১৫ কোটি ঋণ শোধ করতে না পারায় সেই কারখানা বাজেয়াপ্ত হয়। তার পরই বেপাত্তা হয়ে যান প্রবীণ। পরিবারের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ রাখতেন না। সাত-আট বছর বেপাত্তা থাকার পর ২০১৪ সালে পরিবারের লোকজন জানতে পারেন প্রবীণ দেহরাদূনে রয়েছেন। তার পর পরিবারের সঙ্গে ধীরে ধীরে আবার যোগাযোগ গড়ে তোলেন। প্রবীণের তুতো ভাই জানিয়েছেন, দেহরাদূনে থাকাকালীন প্রবীণের সঙ্গে দু’এক বার দেখাও করেছেন তিনি। সেখানে প্রবীণ ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা খুলেছিলেন। ঘটনাচক্রে, সেই ব্যবসাতেও লোকসান হয়। ফলে বন্ধ করে দিতে হয়। দেহরাদূন থেকে আবার পঞ্চকুলায় চলে আসেন তাঁরা। সেখানে বাবা-মা স্ত্রী এবং সন্তানদের নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে ওঠেন। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে ভাড়াবাড়িতে চলে যান।
উল্লেখ্য, গত সোমবার প্রবীণের পরিবারের ছয় সদস্যের দেহ উদ্ধার হয় গাড়ির ভিতর থেকে। মৃত্যু হয় প্রবীণেরও।