(বাঁ দিকে) অপহরণকারী রোহিত আর্য। (ডান দিকে) এই স্টুডিয়োয় পণবন্দি করা হয়েছিল ১৭ শিশুকে। ছবি: সংগৃহীত।
মুম্বইয়ের স্টুডিয়োয় পণবন্দি শিশুদের উদ্ধার করতে গিয়ে কেন অপহরণকারীকে গুলি করতে হয়েছে, তার ব্যাখ্যা শুক্রবারই দিয়েছে পুলিশ। শিশুদের উদ্ধারকারী দলের নেতৃত্বে ছিলেন মুম্বই পুলিশের ইনস্পেক্টর অমল ওয়াঘমারে। স্টুডিয়োর ভিতরে ঢুকে কী দেখেছিলেন, সেটাই জানিয়েছেন তিনি। ওয়াঘমারে এবং আরও তিন পুলিশ অফিসার স্টুডিয়োর ভিতরে ঢুকেছিলেন।
ওয়াঘমারে জানিয়েছেন, স্টুডিয়োর যে ঘরে শিশুদের পণবন্দি করে রাখা হয়েছিল, সেই ঘরের বাইরে থেকেই পেট্রল এবং রাসায়নিকের ঝাঁঝালো গন্ধ নাকে আসছিল। তত ক্ষণে তাঁরা বুঝে গিয়েছিলেন যে, অপহরণকারী কী পরিকল্পনা করে রেখেছেন। তাই খুব শান্ত ভাবে এবং সন্তর্পণে ওই ঘরে ঢুকেছিলেন তাঁরা। ঘরের চার দিকে পেট্রল ছড়িয়ে রাখা। রাসায়নিকও ছড়ানো ছিল। ফলে একটু আগুনের ফুলকিতেই গোটা স্টুডিয়ো কয়েক মিনিটে ভস্মীভূত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
ওয়াঘমারে জানিয়েছেন, অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছিল উদ্ধারকাজ। শিশুরা ঘরের কোণে গুটিসুটি মেরে বসেছিল। তাদের থেকে কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়েছিলেন অপহরণকারী। বন্দুক তাক করা ছিল শিশুদের দিকে। পুলিশকে ঘরে ঢুকতে দেখেই হুমকি দিতে শুরু করেন তিনি। গোটা স্টুডিয়োয় আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছিলেন বার বার। ওয়াঘমারের দাবি, ওই সময় পরিস্থিতি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য ছিল শিশুদের নিরাপদে বার করতে হবে। ওদের যেন কোনও ক্ষতি না হয়।
ওয়াঘমারে জানিয়েছেন, অপহরণকারী বার বার হুমকি দিচ্ছিলেন, কেউ যদি চালাকি করার চেষ্টা করেন, তা হলে সকলকে নিয়ে তিনি মরবেন। ফলে অপহরণকারীকে বার বার নিরস্ত করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কিছুতেই তাঁকে নিরস্ত করা যাচ্ছিল না। শিশুদের দিকে বন্দুক তাক করে গুলি চালানোর হুমকি দিচ্ছিলেন বার বার। ওয়াঘমারের দাবি, ‘‘আচমকাই পুলিশের দিকে বন্দুক তাক করে গুলি চালানোর চেষ্টা করেন অপহরণকারী। পাল্টা গুলি চালায় পুলিশও। তাতেই আহত হন অপহরণকারী। পুলিশের এফআইরআরেও এই কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশ আরও জানিয়েছে, পুরো পরিকল্পনা করে এই কাজ করেছিলেন অপহরণকারী। দীর্ঘ দিন পণবন্দি বানিয়ে রাখার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। পণবন্দি শিশুদের যাতে খাবারের কোনও অসুবিধা না হয়, তার জন্য অনেক খাদ্যসামগ্রীও মজুত করেছিলেন।
ওয়াঘমারে জানিয়েছেন, স্টুডিয়োর দোতলায় শিশুদের বন্দি করে রেখেছিলেন। ওয়াঘমারে এবং তাঁর তিন সহকর্মী বাথরুমের জানলা দিয়ে স্টুডিয়োয় ঢোকেন। ওয়াঘমারে বলেন, ‘‘বাচ্চাদের কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। আমাদের দেখেই পেপার স্প্রে ছড়িয়ে দেন। তার পরই আমাদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে উদ্যত হন। তখন আমি আমার সার্ভিস পিস্তল থেকে অপহরণকারীকে লক্ষ্য করে গুলি চালাই। তাতে আহত হন তিনি। তার পরই তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।’’ প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার দুপুরে স্টুডিয়োয় ১৭ শিশুকে পণবন্দি করেন রোহিত। সাড়ে তিন ঘণ্টার টানটান মুহূর্তের পর সমস্ত শিশুকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশের গুলিতে গুরুতর জখম হয়ে মৃত্যু হয় অপহরণকারীর।