Bihar Assembly Election 2025 Results

তেজস্বীর হাতে নিস্তেজ! লালুপুত্র নিজে জিতলেও শোচনীয় ফল করল বিহারের প্রাক্তন শাসকদল

লালু এক দশক আগেই জ্যেষ্ঠপুত্র তেজপ্রতাপকে পিছনে ঠেলে তাঁর রাজনৈতিক উত্তরসূরি হিসেবে কনিষ্ঠপুত্র তেজস্বীকে বেছে নিয়েছিলেন। ২০২০ সালের বিধানসভা ভোটে তেজস্বীর নেতৃত্বে লড়ে ভাল ফল করলেও এ বার বিহারে ভরাডুবি হল আরজেডির।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৫ ১৯:২৩
Share:

তেজস্বী যাদব। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

পাঁচ বছর আগে তাঁর নেতৃত্বেই বিহারের বিধানসভা ভোটে লড়ে ‘বৃহত্তম দল’ হয়েছিল আরজেডি। এ বার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদের পুত্র সেই তেজস্বী যাদবকেই ‘মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী’ হিসেবে তুলে ধরে বিহারের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ ফলের ‘দ্বিতীয় নজির’ রাখল আরজেডি। রাজ্যের ২৪৩টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ১৪৩টিতে লড়ে তাদের প্রাপ্তি হতে চলেছে ২৫টি আসনের আশপাশে! এর আগে ২০১০ সালের বিধানসভা ভোটে ২২টি আসনে জিতেছিল লালুর দল। তার পরে এ বারই তারা সবচেয়ে কম আসন পেল। সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠল তেজস্বীর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েও। যদিও কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরে শেষ পর্যন্ত নিজের আসন রাঘোপুর ধরে রেখেছেন লালুর পুত্র।

Advertisement

লালু এক দশক আগেই জ্যেষ্ঠপুত্র তেজপ্রতাপকে পিছনের সারিতে ঠেলে তাঁর রাজনৈতিক উত্তরসূরি হিসেবে কনিষ্ঠপুত্র তেজস্বীকে বেছে নিয়েছিলেন। ২০১৫ সালে জেডিইউ এবং কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে ভোটে জেতার পরে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রীও করেছিলেন তেজস্বীকে (তেজপ্রতাপও সেই সরকারে মন্ত্রী হয়েছিলেন)। তার বছর দেড়েকের মধ্যেই লালু-পরিবারের অন্তর্বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছিল। দলের অন্দরে তাঁকে ‘কোণঠাসা’ করা হচ্ছে বলে প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছিলেন তেজপ্রতাপ। ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ’ এবং ‘পারিবারিক মূল্যবোধ ক্ষুণ্ণ’ করার কারণে গত মে মাসে তেজপ্রতাপকে দল এবং পরিবার থেকে বিতাড়িত করেন লালু। এর পর ‘জনশক্তি জনতা দল’ (জেজেডি) নামে নতুন সংগঠন গড়েন তেজপ্রতাপ। এ বারের বিধানসভা ভোটে ধারাবাহিক ভাবে নাম না-করে তাঁর বিতাড়নের জন্য তেজস্বীকেই দুষে গিয়েছেন তেজপ্রতাপ।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে লালুর কন্যা রোহিণীও এই পারিবারিক লড়াইয়ে তেজপ্রতাপের পাশে দাঁড়িয়ে নিশানা করেছিলেন তেজস্বীকে। লালু পরিবারের এই কাদা-ছোড়াছুড়ি তাঁর চিরাচরিত ‘যাদব ভোটব্যাঙ্কে’ প্রভাব ফেলেছে বলেই মনে করছেন অনেকে। ভোটে আরজেডির ভরাডুবি হলেও নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে তেজপ্রতাপের দল। বৈশালী জেলার মহুয়া আসনে লালুর জ্যেষ্ঠপুত্রের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

Advertisement

শুধু তেজপ্রতাপ নন, গত এক দশকে রঘুবংশ প্রসাদ সিংহ, আব্দুল বারি সিদ্দিকি, রামকৃপাল যাদবের মতো লালুর একদা ঘনিষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে তেজস্বীর মতবিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে। রামকৃপালের মতো নেতা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এ বার বিহারে মহাগঠবন্ধনের অন্দরে আসন ভাগাভাগি নিয়ে তেজস্বীর ‘একগুঁয়েমি’ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমনটা উঠেছিল গত লোকসভা ভোটে। কংগ্রেসের যুবনেতা কানহাইয়া কুমারের জন্য বেগুসরাই ছাড়েননি তেজস্বী। পূর্ণিয়া আসনটি কংগ্রেস নেতা পাপ্পু যাদবকে না-ছাড়ায় তিনি নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে জিতেছিলেন।

এ বারের বিধানসভা ভোটে ১১টি আসনে মহাগঠবন্ধনের সহযোগীদের ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ লড়াই হয়েছে। তার মধ্যে আরজেডির প্রার্থী ছিল সাতটিতে। সব ক’টিতেই জিতেছে এনডিএ। জোটের নেতা তেজস্বীর এমন আচরণ বিহারবাসীর কাছে ‘ভুল বার্তা’ পৌঁছেছে বলে অনেকেই মনে করছেন। যার পরিণামে ২০২০ সালে ৭৫ আসনে জেতা আরজেডির এ বার তার এক-তৃতীয়াংশ জুটতে চলেছে!

ঘটনাচক্রে, গত মাসে বিহারে ভোটঘোষণার পরেই জমির বিনিময়ে চাকরির মামলায় লালু-রাবড়ির পাশাপাশি তেজস্বীর বিরুদ্ধেও চার্জ গঠন হয়েছে দিল্লির আদালতে। প্রতারণার ওই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে সাত বছর পর্যন্ত জেল হয়। কংগ্রেসের একটি সূত্রের খবর, নতুন করে দুর্নীতির মামলা সামনে আসায় রাহুল গান্ধীরও তেজস্বীকে ‘মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী’ ঘোষণা করা নিয়ে দ্বিধা ছিল। কিন্তু আরজেডি নেতৃত্ব অনড় থাকায় শেষ ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’য় সাড়া মেলার পরেও বিধানসভা ভোটের প্রচারে তেমন ভাবে গা-ঘামাননি লোকসভার বিরোধী দলনেতা। তা ছাড়া, ভোটের প্রচারে এ বার বিহারে পরিবারপিছু এক জন সদস্যকে সরকারি চাকরি দেওয়ার মতো প্রতিশ্রুতিও আখেরে ‘বুমেরাং’ হয়েছে। ভোটের ফল বলছে, নানা ‘তথ্য-পরিসংখ্যান’ দিয়ে তেজস্বীর প্রতিশ্রুতিকে ‘অবাস্তব’ বলে প্রতিপন্ন করার যে চেষ্টা এনডিএ শিবির করেছিল, বিহারবাসী তাতেই আস্থা রেখেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement