আত্মহত্যার আগে হাতের তালুতে অভিযোগ এবং অভিযুক্তদের সম্পর্কে লিখে রেখে যান চিকিৎসক। — ফাইল চিত্র।
মহারাষ্ট্রের তরুণী চিকিৎসকের আত্মহত্যার ঘটনার তদন্তে নয়া মোড়। চিকিৎসক এবং দুই অভিযুক্তের মধ্যে কী কী কথা হয়েছিল, মৃত্যুর আগে কোথায় ছিলেন ওই চিকিৎসক— এই সব প্রশ্নের উত্তর পেলেন তদন্তকারীরা। চিকিৎসকের ফোন ঘেঁটেই যাবতীয় তথ্য পেয়েছেন তাঁরা। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, আত্মহত্যা করার আগে তাঁর বাড়িওয়ালার পুত্রের বাড়ি গিয়েছিলেন ওই তরুণী। পুজো ছিল তাঁর বাড়িতে। কিন্তু ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে বচসা হয় দু’জনের মধ্যে। তার পরেই বাড়িওয়ালার বাড়ি থেকে চলে যান হোটেলে। সেই হোটেল থেকেই উদ্ধার হয় তাঁর ঝুলন্ত দেহ।
মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলার ফলটনের একটি সরকারি হাসপাতালে কর্মরত ২৬ বছর বয়সি চিকিৎসক। বীড জেলার বাসিন্দা ওই চিকিৎসক কাজের সূত্রে সাতারায় বাড়িভাড়া করে থাকতেন। সেই বাড়ির বাড়িওয়ালার পুত্র সফ্টঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের নাম জড়িয়েছে ওই তরুণীর আত্মহত্যার ঘটনায়। আত্মহত্যার আগে নিজের হাতের তালুতে ওই সফ্টঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের নাম লিখে রেখে যান। শুধু তাঁর নাম নয়, ফলটন থানার এক ইনস্পেক্টরের (এসআই) কথাও লেখেন। তাঁর বিরুদ্ধে বার বার ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছিলেন ওই তরুণী। আর বাড়িওয়ালার পুত্রের বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ তাঁর। পুলিশ দু’জনকেই গ্রেফতার করেছে।
সাতারার পুলিশ প্রধান তুষার দোশী জানান, চিকিৎসক এবং ধৃতদের মধ্যে হওয়া কথোকপকথন উদ্ধার করা হয়েছে। গত মার্চ মাসে শেষ বার ধৃত পুলিশ অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল তাঁর। তবে ধৃত সফ্টঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাঁর। আত্মহত্যার দিন ওই ইঞ্জিনিয়ারের বাড়িতেও গিয়েছিলেন চিকিৎসক। পরে সেখান থেকে সাতারার একটি হোটেলে যান, সেখান থেকেই তাঁর দেহ উদ্ধার হয়।
মহরাষ্ট্রের মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রূপালি চাকঙ্কর জানান, লক্ষ্মীপুজোর দিন ওই চিকিৎসক তাঁর বাড়িওয়ালার বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেখানে ছবি তোলা নিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে বাড়িওয়ালার পুত্রের ঝামেলা হয়। যে ছবিগুলি মোবাইলের ক্যামেরায় বন্দি করা হয়, সেগুলি ঠিকঠাক ছিল না। তরুণী ছবিগুলি ফোন থেকে মুছতে বলায়, তা নিয়ে বাড়িওয়ালার পুত্রের সঙ্গে তর্কাতর্কি হয়। তার পরেই বাড়ি ছেড়ে যান তরুণী। পরে বাড়িওয়ালা তাঁকে আবার ফিরিয়ে আনলেও বেশিক্ষণ থাকেননি তিনি। রাতে একটি হোটেলে ঘর ভাড়া করেন। আত্মহত্যার আগে বাড়িওয়ালার পুত্রকে মেসেজও করেছিলেন তিনি। জানিয়েছিলেন, চরম পদক্ষেপ করবেন। এমনকি ফোনও করেছিলেন। তবে ফোনে দু’জনের মধ্যে কী কথা হয়েছে তা জানা যায়নি এখনও। ফোনে কথোপকথনের পরেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন ওই তরুণী, অনুমান তদন্তকারীদের।
পুলিশ সূত্রে খবর, আত্মহত্যার মাস কয়েক আগে অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার এবং আরও কয়েক জন পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ তুলেছিলেন ওই তরুণী চিকিৎসক। কিন্তু সেই অভিযোগগুলিতে তেমন আমল দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। চলতি বছরের ১৯ জুন ফলটনের ডিএসপি-র কাছে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন ওই তরুণী। মেডিক্যাল অফিসারের দাবি ছিল, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বিকৃত করা, ভুয়ো ফিট সার্টিফিকেট ইত্যাদি তৈরি করে দেওয়ার জন্য পুলিশের একাংশ তাঁর উপর জোর খাটাতেন। কিন্তু ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত হয়েছে, এমন কোনও প্রমাণ মেলেনি। পাল্টা পুলিশের তরফে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়।
মহারাষ্ট্রের তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর কথায়, ‘‘মহারাষ্ট্রের মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যু চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল শাসক বিজেপির অমানবিক ও অসংবেদনশীল চেহারা।’’ তিনি এই আত্মহত্যাকে ‘প্রাতিষ্ঠানিক খুন’ বলে মন্তব্য করেন। যদিও এই আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে রাজনীতি না-করার অনুরোধ করেছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস। রাজনৈতিক দলগুলির উদ্দেশে তাঁর আবেদন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি এই ধরনের সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে বিরোধীদের রাজনীতি করা উচিত নয়।’’