আক্রান্ত মহিলা। — নিজস্ব চিত্র।
রাত গভীর। ঘুমের মধ্যেই মামণি নায়ক হাতে আচমকা হেঁচকা টান অনুভব করলেন। কোনও দুষ্টু লোক ঘরে ঢুকেছে ভেবে ঘুম চোখেই বাঁ হাতে সপাটে এক থাপ্পড়।
কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে দুষ্টু লোকটার কব্জি চেপে ধরতেই বুঝতে পারেন মোটা, লোমশ থাবাটা মানুষ নয়। রয়্যাল বেঙ্গলের।
চড় খেয়ে ততক্ষণে বাঘেরও পিলে চমকে গিয়েছে। সে ভেবেছিল চুপিসাড়ে কাঁচা ঘরে ঢুকে ছাগল নিয়ে সরে পড়বে। কিন্তু ছাগলের পাশেই যে মানুষ শুয়ে তা বুঝতে পারেনি। ছাগলের ঘাড় ভেবে কামড়ে দিয়েছে মালকিনের কনুয়েই। চড়-থাপ্পড়ে দিশেহারা কাজিরাঙার বাঘ মুখের কামড় আলগা না করে হ্যাঁচকা টানে মামণিকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু তাতেও সমস্যা। মশারির মধ্যে মামণির সঙ্গেই শুয়ে ছিল পরিবারের সদস্য সম্বরি আর মামণির তিন বছরের ছেলে। বাঘের টানে মশারি ছিঁড়ে, তাতে জড়িয়ে তিন জনেই ঘরের বাইরে। সম্বরি টেনে ধরে মামণির পা। কিন্তু বাঘের পায়ের হালকা থাপ্পড় মুখে পড়তেই সে ছিটকে যায়। ছোট্ট শিশুটি অবশ্য অক্ষতই ছিল।
কিন্তু বাচ্চার কান্না, মশারির ফাঁস, মামণির আর্তনাদ আর গালাগালি এবং ওই ছোট্ট ঘরে থাকা আরও সাতজনের পরিত্রাহি চিৎকারে শেষ পর্যন্ত ঘাবড়ে গিয়ে বাঘ মামণিকে ছেড়ে দেয়। তত ক্ষণে আশপাশের ঘর থেকেও টর্চ হাতে বেরিয়ে এসেছেন পড়শিরা।
অতএব রণে ভঙ্গ দিয়ে ফের জঙ্গলে পালায় রয়্যাল বেঙ্গল। মঙ্গলবার গভীর রাতে অসমের বোকাখাতে, কাজিরাঙার জঙ্গল ঘেঁষা গ্রামের ঘটনা। বন কর্মীরা খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে এসে মামণিকে হাসপাতালে ভর্তি করান। ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পরেও আতঙ্ক কাটেনি তাঁর। তিনি জানান, জঙ্গল থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরে কুঁড়ে ঘরের ভিতরে তাঁরা ন’জন থাকেন। একই সঙ্গে থাকে তাঁদের ছাগলগুলিও। সেই ছাগল ধরতেই অশক্ত দরমার দরজা ভেঙে ঢুকে পড়েছিল বাঘটি। পাশাপাশি সাতটি পরিবারের বাস। নেই বিদ্যুৎ।
আজ বন দফতর ও করবেট ফাউন্ডেশনের কর্তারা ওই গ্রামে গিয়ে সকলকে নিয়ে আলোচনায় বসেন। করবেটের ডেপুটি ডিরেক্টর নবীন পাণ্ডে জানান, আগামী দু’দিনের মধ্যেই ওই সাতটি পরিবারকে সৌরশক্তি চালিত আলো দেওয়া হবে। জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে বাড়বে বনকর্মীদের রাত-টহলও। লোকালয়ে ঢুকে পড়া বাঘের গতিবিধি জানতে গ্রামে ট্র্যাপ-ক্যামেরাও বসানো হবে।