(বাঁ দিকে) নিকি ভাটি। তাঁকে খুনের অভিযোগ স্বামী বিপিন ভাটির (ডান দিকে) বিরুদ্ধে। ছবি: সংগৃহীত।
কেন এ ভাবে সকলকে ফাঁকি দিয়ে ছেড়ে চলে গেলে? লোকে এখন থেকে তাঁকে হত্যাকারী বলে ডাকবে। স্ত্রীকে পুড়িয়ে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ার আগে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন উত্তরপ্রদেশের গ্রেটার নয়ডার যুবক বিপিন ভাটি। পুরো ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে প্রমাণ করায় চেষ্টা করতেই আগেভাগে সমাজমাধ্যমে বিপিন এ সব কথাই লিখেছিলেন বলে অনুমান পুলিশের।
গ্রেটার নয়ডায় পণের জন্য বধূকে পুড়িয়ে মারার ঘটনা শোরগোল ফেলে দিয়েছে। কী ভাবে মাকে তার বাবা, জেঠু, ঠাকুমা এবং দাদু মিলে খুন করেছে, পুলিশের কাছে সেই বর্ণনা দিয়েছে বিপিন এবং নিকির ছেলে। পণের ৩৬ লক্ষ টাকা না পেয়ে বৃহস্পতিবার নিকির গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যু হয় তাঁর।
স্ত্রীকে খুনের অভিযোগে শনিবারই গ্রেফতার হয়েছেন নিকির স্বামী বিপিন। তবে তাঁর পরিবারের বাকি সদস্যরা পলাতক। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতার হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে বিপিন দাবি করেন, তাঁর স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন। তার পর সমাজমাধ্যমে নিকিকে উদ্দেশ করে একটি পোস্ট করেন, ‘‘তুমি কেন এ কাজ করলেন নিকি? মনের কথা কেন আমাকে খুলে বললে না? কেন আমাদের ছেড়ে এ ভাবে চলে গেলে? এখন তো লোকে আমাকে হত্যাকারী বলে ডাকবে?’’
তার পর আরও একটি পোস্ট করে লেখেন, ‘‘তুমি চলে যাওয়ার পর থেকে আমার সঙ্গে অত্যন্ত অন্যায় হচ্ছে।’’ বিপিনের সমাজমাধ্যম অ্যাকাউন্ট ঘেঁটে তদন্তকারীরা দেখতে পান, নিকি এবং বিপিনের হাসিমুখের একটি ছবি। তাঁদের সঙ্গে ছেলেও রয়েছে। তিন জনের একটি ভিডিয়ো। আর সেই ভিডিয়োর নীচে লেখা, ‘‘আমার সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে।’’
নিকি এবং কাঞ্চন দুই বোন। কাঞ্চন বড়। নিকি ছোট। ২০১৬ সালে দু’জনেরই একই পরিবারে বিয়ে হয়েছিল। কাঞ্চনের বিয়ে হয় বিপিনের দাদা রোহিতের সঙ্গে। আর নিকির বিয়ে হয় বিপিনের সঙ্গে। নিকির দিদি কাঞ্চনের অভিযোগ, বিয়ের সময় একটি এসইউভি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের কয়েক মাস পর থেকেই পণের জন্য চাপ দেওয়া শুরু হয়। আরও একটি গাড়ি দাবি করা হয়। সেই গাড়িও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নিকি এবং তাঁর উপর অত্যাচারের মাত্রা ক্রমে বেড়েই চলেছিল। বিশেষ করে নিকিকে প্রতিনিয়ত মারধর করতেন বিপিন। ৩৬ লক্ষ টাকা দিতে হবে বলে চাপ দেওয়া শুরু করেছিলেন। কাঞ্চনের আরও অভিযোগ, বিপিন কোনও কাজ করতেন না। মাদকাসক্ত ছিলেন। বেশ কয়েক বার পঞ্চায়েতকে জানানো হয় এই অত্যাচারের কথা। কিন্তু তার পরেও নিকি এবং তাঁকে মারধর করা হত সন্তানদের সামনেই। গত ২১ অগস্ট নিকিকে বেধড়ক মারধর করেন বিপিন এবং তাঁর বাবা-মা, দাদা। ঠেকাতে গেলে তাঁকেও মারা হয় বলে অভিযোগ কাঞ্চনের। তাঁর অভিযোগ, নিকিকে চুলের মুঠি ধরে মেঝেতে ফেলে পা দিলে গলা চেপে ধরেছিলেন বিপিন। তার পর কোনও দাহ্য তরল এনে নিকির গায়ে ঢেলে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন।