হয় সূর্য নমস্কার, নয় সমুদ্রে ঝাঁপ: আদিত্যনাথ

সূর্য নমস্কার করতে না চাইলে সোজা সমুদ্রে ঝাঁপ দিন— নিদান হাঁকলেন বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথ। এমনিতেই আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে রাজপথে বসে প্রধানমন্ত্রীর আসন দেখানো নিয়ে বিতর্কের অন্ত নেই। আজ সেই আগুনে ঘি ঢাললেন গোরক্ষপুরের এই সাংসদ। ২১ জুন রাজধানী-সহ ২৫১টি শহরে বসবে যোগাসনের আসর। দিল্লির রাজপথে বসে পঁয়ত্রিশ মিনিটে পনেরোটি আসন করে দেখানোর কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী মোদীর।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

বারাণসী শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৫ ০৩:২৪
Share:

যোগী আদিত্যনাথ

সূর্য নমস্কার করতে না চাইলে সোজা সমুদ্রে ঝাঁপ দিন— নিদান হাঁকলেন বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথ। এমনিতেই আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে রাজপথে বসে প্রধানমন্ত্রীর আসন দেখানো নিয়ে বিতর্কের অন্ত নেই। আজ সেই আগুনে ঘি ঢাললেন গোরক্ষপুরের এই সাংসদ।

Advertisement

২১ জুন রাজধানী-সহ ২৫১টি শহরে বসবে যোগাসনের আসর। দিল্লির রাজপথে বসে পঁয়ত্রিশ মিনিটে পনেরোটি আসন করে দেখানোর কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী মোদীর। সরকারি সূত্রে বলা হয়েছিল, মোদীকে সঙ্গ দিতে থাকবেন বলিউডের এক ঝাঁক তারকা এবং ৪৫০০০ পড়ুয়ার বিশাল বাহিনী। তবে এ যাত্রায় আর মোদীর আসন দেখার সুযোগ হচ্ছে না দেশবাসীর। আজই এক বিবৃতিতে তা জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।

প্রধানমন্ত্রী রাজপথে না বসলেও অনুষ্ঠান ঘিরে বিতর্ক চলছেই। গোল বেধেছে যোগ দিবসের মহড়ায় পড়ুয়াদের এক বিশেষ আসন শেখানো নিয়ে। ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড’ (এআইএমপিএলবি) সাফ জানিয়েছে, সূর্য নমস্কারে সম্মতি নেই তাদের। বিজেপি জমানায় স্কুলে স্কুলে যোগাসন বাধ্যতামূলক করার চেষ্টা ও সূর্য নমস্কার শেখানোর প্রতিবাদে শীর্ষ আদালতেরও দ্বারস্থ হবে তারা।

Advertisement

কিন্তু এই আপত্তি মানতে নারাজ আরএসএস-বিজেপি। দিকে দিকে এর সমালোচনায় সরব দলের নেতা, সাংসদরা। প্রধানমন্ত্রী মোদীর নির্বাচনী কেন্দ্র বারাণসীতে দাঁড়িয়ে যেমন এ দিন হুঙ্কার ছেড়েছেন যোগী আদিত্যনাথ।

এই সাংসদের যুক্তি, ‘‘সূর্য শক্তির উৎস। কোনও গোষ্ঠী বিশেষ কে তো আর সে বেছে বেছে আলো দেয় না! তা হলে তার আসনে আপত্তির কারণটা কী?’’ আর তার পরেও যদি কেউ সূর্য নমস্কার করতে রাজি না থাকে, আদিত্যনাথের দাওয়াই— ‘‘সোজা সমুদ্রে ঝাঁপ দিন বা অন্ধকার ঘরে বন্দি রাখুন নিজেকে।’’

এ দিন প্রায় একই সুরে কথা বলেছেন আরএসএস নেতা এম জি বৈদ্য ও যোগ গুরু রামদেবও। এম জি বৈদ্যের কথায়, ‘‘যাঁরা যোগাসন ও সূর্য নমস্কার নিয়ে ছুতমার্গ করছেন, তাঁরা আসলে এক রাষ্ট্রের ধারণারই বিরোধী।’’ আর রামদেবের যুক্তি, আসনের সঙ্গে ধর্ম মেশানো অর্থহীন। নমাজে যে ভাবে বসা হয় তার সঙ্গে বজ্রাসনে বসার ফারাক কোথায়— প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

বিজেপি-আরএসএস নেতারা যতই আক্রমণ জোরদার করুন না কেন, যোগ দিবস নিয়ে এই সংঘাত মেটাতে খানিক সুর নরম করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। লখনউয়ের পথে আগামী ২১ তারিখ আসন দেখাবেন তিনি। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, এই অনুষ্ঠানে যোগদান আদৌ বাধ্যতামূলক নয়। ফলে যাঁদের ইচ্ছে হবে তাঁরাই এগিয়ে আসবেন। যদিও সব চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ সাড়া দিলেই ভাল— সাংবাদিকদের এ কথা জানাতেও ভোলেননি রাজনাথ। পাশাপাশি তিনি বলেন, সেই দিন কী কী করতে হবে তা নিয়ে সংশয় কাটাতে এক পুস্তিকাও ছাপা হয়েছে। এই অনুষ্ঠান নিয়ে ভুল বুঝেছেন দেশের কিছু মানুষ। আর তাতেই গণ্ডগোল ছড়াচ্ছে বলে মনে করেন সুষমা স্বরাজও। মঙ্গলবার তিনি বলেন, যোগ দিবসে আসার জন্য জোর করা হবে না কাউকেই।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিদেশমন্ত্রী ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করলেও বিতর্ক কিন্তু থামছে না। যোগী আদিত্যনাথের মন্তব্য গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে উস্কানি দেবে বলে মনে করছেন বিরোধী নেতারা। টুইটারে জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার কটাক্ষ, ‘‘এটা বেশ এক ঢিলে দুই পাখি মারার কায়দা। ভিন্ন মত হলেই সমুদ্রে ঝাঁপ দাও— এই নীতি মেনে চললে তো ভারতের জনসংখ্যা হু হু করে কমবে।’’

ক্ষমতায় আসার পর এক বছর পেরিয়ে গিয়েছে। অচ্ছে দিন দূরে থাক, মোদী সরকার এখনও কাজের কাজ কিছুই করে উঠতে পারেনি বলে বেশ কিছু দিন ধরেই সরব কংগ্রেস। প্রথমে স্বচ্ছ ভারত অভিযান, তার পর এখন যোগ দিবস নিয়ে মাতামাতি — এ সব করে প্রধানমন্ত্রী ‘ছেলে ভোলাতে’ চাইছেন বলে অভিযোগ তাদের। আজ আদিত্যনাথের মন্তব্যের জন্য বিজেপিকে ফের বিঁধবার সুযোগ পেয়েছে কংগ্রেস। দলের নেতা রীতা বহুগুণা জানিয়েছেন, ‘‘গোরক্ষপুরে ওই সাংসদ তো মুখ খুললেই বিষ উগড়ে দেন।’’ ভিন্ন মত হলেই নিজের ইচ্ছে চাপানোর এই প্রবণতার জন্য কেন্দ্রের সমালোচনা করেছে সমাজবাদী পার্টিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন