সরযূর ঘাটে আরতি উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের। ছবি: পিটিআই।
প্রায় ২৫ বছর আগের মামলায় ফের নতুন করে শুরু হচ্ছে বিচার। বাবরি ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সদ্য চার্জ গঠিত হয়েছে লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর যোশী, উমা ভারতীদের মতো শীর্ষ বিজেপি নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে। ঠিক তার পরের দিনই অযোধ্যার বিতর্কিত ভূমিতে হাজির হলেন বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশের ‘ফায়ারব্র্যান্ড’ মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। প্রায় ১৫ বছর পর ‘রামজন্মভূমি’ সফরে উত্তরপ্রদেশের কোনও মুখ্যমন্ত্রী। স্বাভাবিক কারণেই রাজনৈতিক ভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল যোগীর এই অযোধ্যা সফর। বিতর্কিত জমিতে পৌঁছে রামলালার অস্থায়ী মন্দিরে পুজো দিলেন যোগী। ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি তো উঠলই। মুখ্যমন্ত্রীকে সাক্ষী রেখেই ফের উঠল ‘মন্দির ওয়হিঁ বনায়েঙ্গে’ স্লোগানও।
রাম জন্মভূমি তথা বাবরি মসজিদের বিতর্কিত জমিতে সাধারণের অবাধ প্রবেশ নিষিদ্ধ। ওই জমিতে রামলালার যে অস্থায়ী মন্দির রয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পরই সে মন্দিরে পুজো দিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন যোগী। তবে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে সম্ভবত সে সময় সবুজ সঙ্কেত মেলেনি। তাই সফর বাতিল হয়। কিন্তু এ বার আর কোনও বাধা এল না। বিজেপি সূত্রের খবর, বুধবার যোগী আদিত্যনাথের অযোধ্যা সফর দলের সর্বভারতীয় নেতৃত্বের সিলমোহর নিয়েই হয়েছে।
আডবাণী, যোশী, উমাদের ষড়যন্ত্রেই ধ্বংস হয়েছিল বাবরি মসজিদ— এই অভিযোগে মঙ্গলবার চার্জ গঠিত হয়েছে। ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আর যাঁদের বিরুদ্ধে এসেছে, তাঁদের অন্যতম ধরম দাস বুধবার অযোধ্যায় যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গেই ছিলেন। অর্থাৎ, বিজেপি স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছে, বাবরি মামলায় যাঁদের অভিযুক্ত করা হল, দল সব রকম ভাবে তাঁদের পাশে দাঁড়াবে।
আডবাণী, যোশী, উমাদের বিরুদ্ধে বাবরি ধ্বংস মামলায় যে দিন চার্জ গঠন হয়েছে, ঠিক তার পরের দিনই যোগীর ‘রামজন্মভূমি’ সফরে বিশেষ রাজনৈতিক বার্তা রয়েছে। বলছেন বিশ্লেষকরা। ছবি: পিটিআই।
হনুমানগড়ি মন্দিরে পুজো দিয়ে বুধবার যোগীর অযোধ্যা সফর শুরু হয়। গোরক্ষপুর মঠের প্রধান মহন্ত আদিত্যনাথ নিজেই পুজো করেন সেখানে। তার পর তিনি পৌঁছন বিতর্কিত কাঠামো চত্বরে। মন্দিরের পুরোহিত এবং নিরাপত্তাকর্মীরা ছাড়া আর কাউকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু রামলালার মন্দিরে এ দিন আদিত্যনাথ যখন পুজো দিয়েছেন, তখন ভিতরে-বাইরে তুমুল ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি উঠেছে। একই সঙ্গে শোনা গিয়েছে অযোধ্যা ইস্যুতে বিজেপির বহু দিনের পরিচিত স্লোগান— ‘‘রামলালা হম আয়েঙ্গে / মন্দির ওয়হিঁ বনায়েঙ্গে।’’
আরও পড়ুন: গরু জাতীয় পশু হোক, কেন্দ্রকে বলল রাজস্থান হাইকোর্ট
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিজেপি এ দিন মেরুকরণের বার্তাই আরও স্পষ্ট করে দিতে চেয়েছে। প্রথমত, বাবরি ধ্বংসের অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে যিনি অভিযুক্ত, সেই ধরম দাসকে সঙ্গে নিয়েই মুখ্যমন্ত্রী এ দিন অযোধ্যা সফর করেছেন। দ্বিতীয়ত, বিতর্কিত জমিতেই মন্দির বানানো হবে বলে যখন স্লোগান চলছিল, তখন যোগীর সহাস্য মুখ বুঝিয়ে দিয়েছে, বাবরি কাণ্ডের বিচার যতই নতুন করে শুরু হোক, বিজেপি তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে অটলই থাকবে।
রামলালার মন্দিরে পুজো দেওয়ার পর যোগী সরযূর ঘাটেও পুজো দেন। পুরোহিত এবং সন্ন্যাসী পরিবৃত হয়ে হয়ে যোগী নদীর আরতি করেন। গেরুয়া পোশাক পরিহিত এক মুখ্যমন্ত্রী পুজো দিচ্ছেন রামলালার মন্দিরে— স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উৎসাহ ছিল তুঙ্গে। তবে শুধু মুখ্যমন্ত্রী যোগীর নামে নয়, অযোধ্যার বিশাল জমায়েত এ দিন সন্ন্যাসী যোগীর নামেও জয়ধ্বনি দিয়েছে। গোরক্ষপুর মঠের প্রধানের পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নেওয়ার জন্য অনেকেই নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে যোগীর দিকে এ দিন এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সঙ্গে ছিল ‘মহন্তজি-মহন্তজি’ সম্বোধন। সেই ভিড়ের উদ্দেশে যোগীর সহাস্য মাথা নাড়া আর বরাভয়ের মুদ্রা বুঝিয়ে দিয়েছে, শুধু মুখ্যমন্ত্রী সত্তা নয়, সন্ন্যাসী সত্তাটাও এখনও সমান গুরুত্বপূর্ণ তাঁর কাছে।