জঙ্গি-ঘাঁটি নিয়ে নেপালকে জানাবেন সুষমা

ভারত-বিরোধী জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে ভারত-নেপাল সীমান্ত। সেখানে গা-ঢাকা দিয়ে থাকছে আইএসআই-ঘনিষ্ঠ জঙ্গিরা। এই পথে অবাধে ঢুকছে জাল নোটও। কাঠমান্ডু গিয়ে নেপালের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় নয়াদিল্লির এই উদ্বেগের কথা তুলে ধরবেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৪ ০৩:১০
Share:

ভারত-বিরোধী জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে ভারত-নেপাল সীমান্ত। সেখানে গা-ঢাকা দিয়ে থাকছে আইএসআই-ঘনিষ্ঠ জঙ্গিরা। এই পথে অবাধে ঢুকছে জাল নোটও। কাঠমান্ডু গিয়ে নেপালের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় নয়াদিল্লির এই উদ্বেগের কথা তুলে ধরবেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।

Advertisement

চলতি সপ্তাহের শেষে দু’দিনের নেপাল সফরে যাচ্ছেন বিদেশমন্ত্রী। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, এই বছরের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীও নেপাল যাবেন। ভারত-নেপাল সম্পর্ক যথেষ্ঠ ঘনিষ্ঠ হলেও গত ১৭ বছর কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নেপালে পা রাখেননি। সে হিসেবে প্রতিবেশী কূটনীতিতে নতুন সরকারের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ সুষমার এই সফর। স্বাভাবিক ভাবেই এই সফর ঘিরে সে দেশেও প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। নরেন্দ্র মোদীর সফরের আগে এই সফরটিকে তাই যতটা সম্ভব কাজে লাগাতে চাইছে সাউথ ব্লক।

কূটনীতিকদের বক্তব্য, নেপালের ভূকৌশলগত গুরুত্ব নয়াদিল্লির কাছে যথেষ্ট। নেপালের সঙ্গে চিনের ঘনিষ্ঠতা বেড়ে চলার বিষয়টিও ভারতের মাথা-ব্যথার একটি কারণ। কিন্তু ২০০৫-এ সে দেশে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে সংসদীয় গণতন্ত্র আসার পর থেকে নানা কারণে নয়াদিল্লির নেপাল-নীতিতে কিছু শিথিলতা দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ তাঁর দশ বছরের মেয়াদে এক বারও কাঠমান্ডু সফরে যাননি। মোদী ক্ষমতায় আসার পর প্রথম বিদেশ সফরের গন্তব্য হিসাবে ভুটানকে বেছে নেন। কাঠমান্ডু চেয়েছিল, মোদী প্রথম সফরে নেপালেই আসুন। ভুটানে সংসদের যৌথ সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে ভুল করে ভুটানকে নেপালও বলে ফেলেছিলেন মোদী!

Advertisement

বিদেশ মন্ত্রক জানাচ্ছে, নেপাল সফরকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন মোদীও। ভারত-নেপাল সীমান্তে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর ঘনিষ্ঠ লস্কর ও মুজাহিদিন জঙ্গিরা ঘাঁটি গাড়ছে, এমন সুনির্দিষ্ট খবর রয়েছে ভারতের কাছে। পাশাপাশি পাকিস্তান থেকে জাল নোট আসার সব চেয়ে সহজ রুট হল নেপাল হয়ে। ভারত এবং নেপালের মধ্যে ১,৪৭,১৮১ বর্গ কিলোমিটার খোলা সীমান্ত রয়েছে। গত বছর এই সীমান্ত সংলগ্ন থেকেই ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন জঙ্গি ইয়াসিন ভটকল এবং লস্কর-ই-তইবার বোমা বিশেষজ্ঞ আব্দুল করিম তুন্ডাকে গ্রেফতার করেছিলেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষে জানানো হচ্ছে, প্রথম বৈঠকেই নেপালের নেতৃত্বকে এই সব বিষয়ে উদ্বেগ জানাবেন সুষমা।

আরও একটি বড় বিষয়ও নতুন সরকার খতিয়ে দেখছে। গত বছরের শেষে গণপরিষদ গঠনের ভোটে ভরাডুবির পরে মাওবাদীরা নেপালের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে একেবারেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। সন্ত্রাস ছেড়ে গণতন্ত্রের পথে এসে ধাক্কা খাওয়া মাওবাদীরা এখন কোন রাস্তা নেয়, সেটা একটা বিরাট ধাঁধা সকলের কাছেই। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, “জঙ্গল থেকে এক বার বেরিয়ে এসে নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার পর, আবার জঙ্গলের জীবনে ফিরে যাওয়াটা খুবই সমস্যার। জীবনযাপন পাল্টে গিয়েছে মাওবাদী ক্যাডারদের। আবার এ কথাও সত্য যে মাওবাদীরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা মেনে নিলেও, পুরোপুরি অস্ত্র সমর্পণ করেননি। সুতরাং তাদের নিয়ে মাথাব্যথা থেকেই যাচ্ছে।” ভারত মনে করে নেপালে অস্থিরতা তৈরি হলে শুধু পাকিস্তানই নয়, জঙ্গিরাও সেই অবস্থার সুযোগ নিতে চাইবে।

ভারত-বিরোধী কার্যকলাপের আখড়া হয়ে উঠবে নেপাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন