ভোটের লাইনে। সোমবার ত্রিপুরার আগরতলায়। ছবি: বাপি রায়চৌধুরী।
শুরু হয়ে গেল ষোড়শ সাধারণ নির্বাচন। ন’দফার ভোট পর্বের আজ, প্রথম দিনে ৫৪২ আসনের লোকসভার ছ’টি আসনে একেবারেই শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট গ্রহণ শেষ হল। সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া হিসেব অনুযায়ী, অসমের পাঁচটি আসনে ৭৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। অন্য দিকে, ত্রিপুরা-পশ্চিম আসনে ভোট পড়েছে ৮২ শতাংশ। তবে দুই রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার জানিয়েছেন, সব বুথের বিশদ তথ্য পেলে আগামীকাল ওই হার সামান্য বাড়তে পারে।
অসমে কয়েকটি আসনে খারাপ ইভিএম নিয়ে বিক্ষিপ্ত গোলমাল, একটি কেন্দ্রে কয়েক জন ভোটারদের সঙ্গে আধা সেনার সামান্য হাতাহাতি বাদ দিলে, অসমে প্রথম পর্যায়ের ভোট কার্যত ঘটনা-বিহীন। পাঁচটি কেন্দ্রে ৫১ জন প্রার্থীর লড়াই ছিল। ভোটার সংখ্যা ছিল ৬৪ লক্ষ। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী কমিশনের মুখপাত্র জানিয়েছেন, রাজ্যে ভোট পড়েছে গড়ে ৭৪ শতাংশ। ভোট কেন্দ্রের হিসেবে তেজপুরের গোহপুরে সর্বাধিক ও যোরহাটের আমগুড়ি-থওরায় সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে। বিকেল ৫টা পর্যন্ত তেজপুরে ৭৪ শতাংশ, লখিমপুরে ৭২.৭৬ শতাংশ, ডিব্রুগড়ে ৭২.৫৬ শতাংশ, কলিয়াবরে ৭৫.৯৪ শতাংশ ও যোরহাটে ৭৫.৬৮ শতাংশ ভোট পড়েছে।
ত্রিপুরার মুখ্য নির্বাচনী অফিসার আশুতোষ জিন্দাল জানিয়েছেন, বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিম ত্রিপুরা কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৮০ থেকে ৮২ শতাংশ। গত বারের তুলনায় এই হার কম। এখনও পর্যন্ত কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। গত লোকসভা ভোটে রাজ্যে ৮৪.৪৫ শতাংশ ভোট পড়েছিল। গত বিধানসভায় ভোটদানের হার ছিল ৯৩ শতাংশ।
তবে ত্রিপুরার নির্বাচনে বিরোধী দল, কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে নির্বাচন কমিশনের কাছে কয়েকটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কংগ্রেস প্রার্থী অরুণোদয় সাহা বলেন, ‘‘এলাকায় এলাকায় ভোটদাতাদের যে উচ্ছ্বাস দেখেছি, তা অভূতপূর্ব। আমি আশাবাদী।’’ তাঁর অভিযোগ, রাজ্যের দক্ষিণে উদয়পুর সংলগ্ন হদ্রাতে কিছু বুথে সিপিএমের সমর্থকরা কংগ্রেসের পোলিং এজেন্টদের মারধর করেছে। ছ’টি বুথে ফের ভোট গ্রহণের দাবি জানাবে কংগ্রেস। এ দিকে, তৃণমূল প্রার্থী রতন চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘শাসক দলের হুমকিতে রামনগর, বড়জলা, মান্দাই, কাঁকড়াবন-সহ কয়েকটি এলাকায় তৃণমূলের এজেন্টদের বুথ ছেড়ে চলে যেতে হয়।’’ যদিও রাজ্যের যুগ্ম মুখ্য নির্বাচনী অফিসার দেবাশিস মোদক বলেন, ‘‘এ রকম কোনও অভিযোগ এখনও পাইনি।’’
অসমে আজ ছিল আলফার প্রতিষ্ঠা দিবস। তিন দশক পরে ‘আলফা-হীন ভোট’ হল রাজ্যে। তবে, তাদের হুমকি না থাকলেও সব কেন্দ্রে সতর্কতা ছিল। প্রতিষ্ঠা দিবসে আলফা ঘাঁটিতে উৎসবের ছবি পাঠালেও, পরেশপন্থী আলফার সভাপতি অভিজিৎ অসম যে বিবৃতি দিয়েছেন, সেখানে ভোটের কোন উল্লেখও ছিল না। তবে তিনিসুকিয়ার মরাণে, আলোচনাপন্থী আলফার তিলৈ শিবিরের সদস্যরা ভোট বয়কট করেন।
রাজ্যের সহকারী মুখ্য নির্বাচনী অফিসার আর সি জৈন জানান, এখনও পর্যন্ত ৪২টি ইভিএম মেশিন বিকল হওয়ার খবর এসেছে। যোরহাটের ৩৬টি বুথে ইভিএম বদলাতে হয়। তার মধ্যে ৬টি কেন্দ্রে ভোটদান প্রক্রিয়ায় সমস্যা হয়। সেখানে ফের ভোট নেওয়া হতে পারে। কলিয়াবর কেন্দ্রের সরুপথার এলাকার সিলনিজানের একটি বুথে আধা-সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে এক মহিলা-সহ ৪ জন ভোটার জখম হন। গেলেকির জঙ্গল এলাকা নাগাল্যান্ডের মধ্যে বলে দাবি তুলে স্থানীয় বরহলা স্কুলে এক দল নাগা ভোটদানে বাধা দেয়। তবে আধা-সেনারা তাদের হঠিয়ে দেয়।