জম্মু-কাশ্মীর এবং পাকিস্তান নিয়ে দল এবং তাঁর সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করতে উদ্যোগী হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের নাম বদলে পাক-অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীর করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে এক দফা আলোচনা করেছেন মোদী। তার পরেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এ নিয়ে একটি নোট তৈরি করতে শুরু করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের মতে, এর পিছনে যুক্তি খুব স্পষ্ট। পাকিস্তান শুধু মাত্র কাশ্মীরের জমি দখল করে বসে নেই, জম্মুরও একটি বড় অংশ তাদের কব্জায়। তা ছাড়া সীমান্ত লাগোয়া জম্মুর অংশও সন্ত্রাসবাদের শিকার। ফলে শুধু মাত্র পাক-অধিকৃত কাশ্মীর কথাটি ব্যবহার করলে সমস্যার পূর্ণ চেহারা মেলে না। তাই জম্মুর নামও অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত বলে মনে করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মোদীও প্রধানমন্ত্রী হয়েই এ নিয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মেনে জম্মুতে বসবাসকারী কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উপত্যকায় ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে চান প্রধানমন্ত্রী। এই পণ্ডিতদের কী করে নিরাপত্তা দিয়ে উপত্যকায় ফিরিয়ে দেওয়া যায়, সেটি এখন খতিয়ে দেখছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
বিজেপি সূত্র বলছে, এই নাম বদলের পিছনে মোদীর অন্য কৌশলও রয়েছে। দলের এক নেতার বক্তব্য, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এক ঢিলে অনেক পাখি মারতে চাইছেন মোদী। প্রথমত, তিনি বুঝিয়ে দিতে চাইছেন, জম্মু-কাশ্মীর তাঁর অন্যতম অগ্রাধিকার। দ্বিতীয়ত, কাশ্মীরের পাশাপাশি জম্মুর নামটিও ব্যবহার করলে গোটা দুনিয়ার সামনে প্রকৃত ছবিটা তুলে ধরা যাবে। শুধু তা-ই নয়, ভবিষ্যতে এই ব্যাপারে আলোচনায় জম্মুর মানুষের মতামতও গুরুত্ব পাবে। মোদীর বার্তা, এটা শুধু মাত্র কাশ্মীরের সমস্যা নয়। ফলে সমাধান খোঁজার জন্য কাশ্মীরের পাশাপাশি জম্মুর সঙ্গেও কথা বলা প্রয়োজন।
অতীতে ভারত-পাকিস্তান শীর্ষ বৈঠক বারবার অগ্নিগর্ভ হয়েছে ‘কে-ওয়ার্ড’ বা কাশ্মীর নিয়ে। আইএসআই এবং সেনার চাপের মুখে পাকিস্তানের যে কোনও শাসক পক্ষ, এমনকী গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটে জেতা সরকারকেও বারবার কাশ্মীর প্রসঙ্গ তুলে দিল্লিকে চাপে রাখার কৌশল নিতে হয়েছে।
কিন্তু এই প্রথম, নওয়াজ শরিফের সদ্য সফরে কোনও সংঘাতের বার্তা ছিল না। এমনকী বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়ত নেতাদের সঙ্গেও দেখা করেননি শরিফ। তার পরেও উপত্যকায় শান্তি এবং দলের রাজনৈতিক এজেন্ডার কথা মাথায় রেখে কাশ্মীর নিয়ে নিজের কড়া অবস্থান স্পষ্ট করে দিতে চান তিনি।
নাম বদলের পিছনে রয়েছে জম্মু-কাশ্মীরকে একত্রিত করার প্রয়াসও। বহু বছর ধরেই জম্মু ও লাদাখের মানুষ নিজেদের উপেক্ষিত মনে করেন। লালকৃষ্ণ আডবাণী যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, তখনও তিনি লাদাখকে মূলস্রোতের সঙ্গে যুক্ত করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। এ দিনের সিদ্ধান্তের ফলে জম্মু ও কাশ্মীরের মধ্যেকার মানসিক দূরত্ব কমবে বলেই ধারণা বিজেপি নেতৃত্বের একটা বড় অংশের। তা ছাড়া এ ব্যাপারে সঙ্ঘেরও পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী দফতরের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বপ্রাপ্ত জম্মুর সাংসদ জিতেন্দ্র সিংহ যখন সংবিধানের ৩৭০ ধারা নিয়ে বিতর্কের কথা বলেছিলেন, তখন মোদী অসন্তুষ্ট হলেও সঙ্ঘ কিন্তু খুশিই হয়েছিল। কারণ, তারাও এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চায়। এবং তা গোটা দেশ জুড়ে। বিজেপি নেতারা অবশ্য বলছেন, ৩৭০ ধারা নিয়ে মোদীও আলোচনা চান। কিন্তু সরকারের জন্মলগ্নেই যাতে কোনও বিতর্কে জড়িয়ে তার গতিপথ বিভ্রান্ত না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে চান মোদী। জিতেন্দ্রর মন্তব্যে সমস্যা হতে পারে বুঝেই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন মোদী।