মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নিরাপত্তার ঠেলায় এ বার বদলের মুখে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানের রীতিনীতি!
২৬ জানুয়ারির সকালে রাষ্ট্রপতির গাড়িতেই রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে রাজপথে উপস্থিত হন আমন্ত্রিত রাষ্ট্রপ্রধানরা। কিন্তু চলতি বছরে আমন্ত্রিত অতিথি ধারে ও ভারে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে সেই জন্য বদলাতে পারে ওই নীতি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের পক্ষে তাঁর নিজস্ব গাড়িতেই অনুষ্ঠানস্থলে যাওয়াটা নিরাপদ, বলছেন সে দেশের গোয়েন্দারা। সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় নিজস্ব গাড়িতে রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে রাজপথে পৌঁছবেন। তার ঠিক পিছনে সেই গাড়িকে অনুসরণ করে রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে রাজপথে পৌঁছবে ওবামার ক্যাডিলাক।
জঙ্গি সংগঠনগুলির হিট লিস্টে সব সময়েই একেবারে উপরে নাম থাকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের। তার উপর ওবামার আসন্ন সফরে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা রয়েছে বলে ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছে মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ। এরই মধ্যে আজ ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য এসেছে যে প্রজাতন্ত্র দিবসে ইসলামিক জঙ্গি গোষ্ঠী (আই এস) মুম্বই বিমানবন্দরে হামলা চালাতে পারে। দিল্লি সংলগ্ন নয়ডা-আগরা যমুনা এক্সপ্রেস রাস্তার দু’ধারে থাকা হোটেলগুলিতে বিদেশি প্রতিনিধিদের অনেকে থাকবেন। সেখানেও হামলার ছক কষেছে পাক জঙ্গি নেতা হাফিজ সইদ। এই পরিস্থিতিতে আজ রাজধানীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে বৈঠকে বসেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই ও ভারতীয় গোয়েন্দারা। বৈঠকে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালও।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বৈঠকেই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এক গাড়িতে ওবামার আসা নিয়ে প্রশ্ন তোলে এফবিআই। তাঁদের যুক্তি, মার্কিন প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার জন্য যে ক্যাডিলাক গাড়ি (পোশাকি নাম বিস্ট) ব্যবহার হয় সেগুলি যে কোনও ধরনের হামলা থেকে প্রেসিডেন্টেকে বাঁচাতে সক্ষম। ওবামার কনভয়ে সাধারণত ছ’টি ওই ধরনের গাড়ি থাকে। জ্যামার লাগানো ওই গাড়িগুলি এমন ভাবে তৈরি যে, বড় মাপের বিস্ফোরণ বা রাসায়নিক অস্ত্রের হামলাতেও ভিতরে কোনও ক্ষতি হবে না। ওই গাড়িগুলিতে বসেই বোতাম টিপে বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে পরমাণু হামলা চালাতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এই গাড়িগুলির সঙ্গে প্রণববাবুর গাড়ির কোনও তুলনাই চলে না। তাই মার্কিন গোয়েন্দাদের পরামর্শ, রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে রাজপথ নিজের গাড়িতে করে যান ওবামা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, বিষয়টি এতই সংবেদনশীল যে ওই পরামর্শ সম্ভবত মেনে নেবে কেন্দ্র।
ওবামা দিল্লিতে আসছেন ২৪ জানুয়ারি বিকেলে। তিনি যে হোটেলে থাকবেন এক সপ্তাহ আগে থেকেই তার দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে মার্কিন গোয়েন্দাবাহিনী। ১৯ তারিখের পর থেকে সব হোটেল বুকিং বাতিল করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে তারা। ওবামা ওই হোটেল থেকে যে পথে রাজপথে যাবেন, সেই পথে এত দিন একটিও সিসিটিভি ছিল না। মার্কিন গোয়েন্দাদের মহড়ার সময় বিষয়টি নজরে আসে। তার পরে ওই রাস্তায় প্রায় আড়াইশোর কাছাকাছি হাই ডেফিনেশন ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাতে ওই রাস্তায় চলাচলকারী প্রতিটি ব্যক্তিকে আলাদা করে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়।
ওবামার সঙ্গেই আসছেন সিক্রেট সার্ভিসের প্রায় ৩০০ জনের একটি দল। অর্ধেক আসবেন ওবামার সঙ্গে। বাকিরা চলে আসবেন এক সপ্তাহ আগেই। রাজপথে খোলা রাস্তায় দু’ঘণ্টার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা সুদৃঢ় করতে তিন স্তরের সুরক্ষা বলয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রথম স্তরে থাকছেন মার্কিন গোয়েন্দা ও সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টরা। দ্বিতীয় স্তরে এনএসজি কম্যান্ডোরা। তৃতীয় স্তরে কুড়ি হাজার পুলিশ। ওবামা যে রাস্তা দিয়ে যাবেন, দু’দিন আগেই তার দু’ধারের বাড়িগুলির দখল নেবেন মার্কিন স্নাইপার ও আধাসামরিক বাহিনী। জঙ্গিরা যাতে ম্যানহোল ও নিকাশি নালাগুলিতে বিস্ফোরক না রাখতে পারে তার জন্য সেগুলিরও ভাল ভাবে পরীক্ষা করা হবে।