জল্পনা ও কৌতূহলের পারা চড়িয়েছিল কংগ্রেসই। দাবি করেছিল, বারাণসীতে এমন প্রার্থী দেবে যে নরেন্দ্র মোদীও ভয় পাবেন! অথচ শেষ পর্যন্ত স্থানীয় নেতা তথা বিধায়ক অজয় রাইকে প্রার্থী করলেন রাহুল গাঁধী। এবং তাতে বিজেপি ভয় পেল কি পেল না পরের বিষয়, কংগ্রেসের মধ্যেই বারাণসী নিয়ে উত্তেজনা যেন আজ ঝপ করে পড়ে গেল!
বস্তুত বারাণসী থেকে বিজেপি-র প্রার্থী হিসাবে মোদীর নাম ঘোষণা হওয়ার আগেই কংগ্রেস সেখানে দু’জনের নাম ভেবে রেখেছিল। অজয় রাই ও রাজেশ মিশ্র। স্বাভাবিক ভাবেই তাই প্রশ্ন উঠছে, অজয় রাইকেই যদি প্রার্থী করার ছিল, তা হলে এত নাটক কেন? আর এই প্রশ্নকেই সামনে রেখে অনেকের সন্দেহ যে, ওপর তলায় আঁতাঁত হয়েছে কংগ্রেস-বিজেপি-র। তাঁদের বক্তব্য, অমেঠী ও রায়বরেলী কেন্দ্রে রাহুল এবং সনিয়া গাঁধীর বিরুদ্ধে যথাক্রমে স্মৃতি ইরানি ও অজয় অগ্রবালকে প্রার্থী করে কংগ্রেসের লড়াই সহজ করে দিয়েছে বিজেপি। হতে পারে তারই প্রতিদানে বারাণসীর লড়াইটাও মোদীর কাছে সহজ করে দিল কংগ্রেস! নইলে অমৃতসরে অরুণ জেটলির বিরুদ্ধে পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহকে প্রার্থী করে যে সুর বেঁধে দিয়েছিলেন রাহুল, বারাণসীতে তার তাল কাটল কেন?
কংগ্রেস অবশ্য বিজেপি-র সঙ্গে এ ধরনের সমঝোতার অভিযোগ খারিজ করেছে। দলের মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারি আজ বলেন, “অজয় রাই কম ওজনদার প্রার্থী নন। তিনি বারাণসীতে দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছেন। ফলে তিনিই মোদীকে সব থেকে বেশি বেগ দিতে পারবেন।”
কিন্তু সত্যিই কি তাই! রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বারাণসীতে অজয় রাইয়ের প্রভাব রয়েছে ঠিকই। কিন্তু তা বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীকে রুখে দেওয়ার মতো কিনা সন্দেহ। গত লোকসভা ভোটে তিনি বারাণসীতে সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী হয়েছিলেন। ছিলেন তৃতীয় স্থানে।
মজার বিষয় হল, তার আগে বিজেপি-তে ছিলেন রাই। তাই কংগ্রেস দফতরে সাংবাদিক বৈঠকে আজ এ প্রশ্নও ওঠে, দলের নয়ডার প্রার্থীর মতো শেষ মুহূর্তে অজয়ও বিজেপি-তে চলে যাবেন না তো! যদিও এমন আশঙ্কা অমূলক বলে দাবি করেন কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা।
কিন্তু অজয়কে প্রার্থী করার পর কংগ্রেস নেতারা কী বলছেন? প্রসঙ্গত, বারাণসীতে মোদীর বিরুদ্ধে ওজনদার প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে রাহুল শিবির রহস্য তৈরি করার পর দিগ্বিজয় সিংহ, আনন্দ শর্মা, রশিদ অলভির মতো নেতারা সেখানে প্রার্থী হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। কংগ্রেসের মধ্যে অনেকের দাবি ছিল, রাহুল বা প্রিয়ঙ্কা সেখানে প্রার্থী হোক। তাতে শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, গোটা দেশে বিজেপি-র হাওয়া ধাক্কা খেতে পারে।
কিন্তু অজয়কে প্রার্থী করার পর সেই নেতাদের উৎসাহে আজ দৃশ্যতই ভাটা। ঘরোয়া আলোচনায় অনেকেই বলেন, হতে পারে ঝুঁকি নিতে চাইল না হাইকম্যান্ড। হয়তো বুঝতে পারছে বারাণসীতে বিজেপি-র বিরুদ্ধে ওজনদার প্রার্থী দিয়ে লাভ হবে না।