বে-লাগাম না হন মোদী, ঘুঁটি সাজাচ্ছে সঙ্ঘ

নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা তৈরি হতেই সঙ্ঘও নিজেদের ঘুঁটি সাজাতে শুরু করে দিল। রাজনাথ সিংহকে মোদী-মন্ত্রিসভায় পাঠিয়ে নিতিন গডকড়ীকে ফের বিজেপির সভাপতি করার প্রস্তাব বিবেচনা করছেন মোহন ভাগবত। সরসঙ্ঘচালক ভাগবত আসলে দ্বিমুখী কৌশল নিয়ে এগোতে চাইছেন। মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে সঙ্ঘের গুরুত্ব খাটো হতে পারে বলে আরএসএসের একাংশের মধ্যেই আশঙ্কা রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৪ ০২:৫৮
Share:

সরসঙ্ঘচালক ও তাঁর দুই ঘুঁটি রাজনাথ সিংহ ও নিতিন গডকড়ী।

নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা তৈরি হতেই সঙ্ঘও নিজেদের ঘুঁটি সাজাতে শুরু করে দিল। রাজনাথ সিংহকে মোদী-মন্ত্রিসভায় পাঠিয়ে নিতিন গডকড়ীকে ফের বিজেপির সভাপতি করার প্রস্তাব বিবেচনা করছেন মোহন ভাগবত।

Advertisement

সরসঙ্ঘচালক ভাগবত আসলে দ্বিমুখী কৌশল নিয়ে এগোতে চাইছেন। মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে সঙ্ঘের গুরুত্ব খাটো হতে পারে বলে আরএসএসের একাংশের মধ্যেই আশঙ্কা রয়েছে। সেই অবস্থায় মোদীও সতর্ক পদক্ষেপই করতে চাইছেন, যাতে কোনও ভাবেই সংঘাতের পরিবেশ তৈরি না হয়। কিন্তু সেই ধরনের কোনও পরিস্থিতি যাতে আদৌ তৈরি না হয়, তার জন্য বিজেপি সভাপতি রাজনাথকে মন্ত্রিসভায় পাঠাতে চান ভাগবত। যাতে মোদী প্রধানমন্ত্রী হলেও বিজেপির রাশ যেন গোটাটাই তাঁর হাতে চলে না যায়। সরকারের মধ্যেও সঙ্ঘ ও বিজেপির একটি সেতু থাকে।

ভাগবতের দ্বিতীয় কৌশল হল, বিজেপিকেও বকলমে নিজেদের হাতে রাখতে দলের ভার নিজের ঘনিষ্ঠ গডকড়ীর হাতে সঁপে দেওয়া। সামনের কয়েকটি বিধানসভা নির্বাচনের আগে যেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লোকসভা ভোটে মোদীর নামে দল ও সঙ্ঘের মধ্যে যে উৎসাহ তৈরি হয়েছে, সেটিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে গডকড়ীর উপরেই ভরসা রাখতে চাইছেন ভাগবত।

Advertisement

কিন্তু এ ক্ষেত্রে ফের কি বাধা হয়ে উঠবেন লালকৃষ্ণ আডবাণী? সেই আশঙ্কাটা থাকছেই। কারণ, দুর্নীতির অভিযোগ আসার পরে আডবাণীর আপত্তিতেই গডকড়ী দ্বিতীয় বার সভাপতি হতে পারেননি। এমন একটি প্রেক্ষাপটে গডকড়ী কাল গুজরাতে গিয়ে মোদীর সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন। আজ দিল্লিতে এসে আডবাণীর সঙ্গেও পাক্কা তিন ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন তিনি। গডকড়ীর বক্তব্য, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ যে ভিত্তিহীন তা আজ প্রমাণিত। আয়কর দফতরও হানা দেয়নি। তথ্য জানার অধিকার আইনের মারফত সেই তথ্যও বার করে এনেছেন তিনি। গডকড়ী বোঝাতে চাইছেন, তিনি নিষ্কলঙ্ক। তাই ভবিষ্যতে ফের সভাপতি পদে বসার সুযোগ এলে আডবাণীর মতো প্রবীণ নেতা যেন বাদ না সাধেন।

কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হতেই এ নিয়ে শোরগোল শুরু হয়ে যাওয়ায় গডকড়ী আজ সভাপতি পদ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনার কথা অস্বীকার করে যান। বলেন, “সভাপতি হওয়ার কোনও বাসনা আমার নেই। সরকার গড়লে নরেন্দ্র মোদীই স্থির করবেন, কার ভূমিকা কী হবে। সিদ্ধান্ত নেবেন রাজনাথ সিংহও।” আডবাণীর পরে রাজনাথের সঙ্গেও আজ এক দফা বৈঠক সেরে আসেন গডকড়ী। ক’দিন আগে অবশ্য রাজনাথ প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলেও তিনি মন্ত্রিসভায় যাবেন না। বরং দলের কাজই করবেন। কিন্তু তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, এমন নয় যে তিনি মন্ত্রিসভায় যেতে অনিচ্ছুক। তবে স্বরাষ্ট্র বা প্রতিরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক পেলে তবেই তিনি মন্ত্রী হতে রাজি হতে পারেন। নয়তো থাকতে চাইবেন দলের শীর্ষে।

মোদীকে নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন মুরলীমনোহর জোশীর মতো দলের প্রবীণ নেতারাও। যে কারণে ক’দিন আগে জোশী নিজে নাগপুরে গিয়ে ভাগবতের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। তাঁর আর্জি, মোদী প্রধানমন্ত্রী হলেও দলে প্রবীণদের যেন অবজ্ঞা না করা হয়। আডবাণীর ভূমিকাও কী হবে, সেটিও দেখার। বর্ষীয়ান এই নেতাদের জন্য যোজনা কমিশনের চেয়ারম্যান বা লোকসভার স্পিকারের পদ বরাদ্দ করার একটা ভাবনা দলে রয়েছে। তাতেও মোদী-বিরোধী এই প্রবীণ নেতাদের তুষ্ট রাখা যাবে কি না, সেই প্রশ্ন থাকছেই। অরুণ জেটলি, রাজনাথ ও গডকড়ী কাল গাঁধীনগরে গিয়ে মোদীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখানে এই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মোদীর ঘনিষ্ঠ নেতা অমিত শাহকে আজ প্রশ্ন করা হয়, মোদী সরকারে আডবাণীর ভূমিকা কী হবে? অমিত বলেন, “সংসদীয় বোর্ডই এর সিদ্ধান্ত নেবে।” বিজেপির অনেকেই এখন মনে করছেন, আডবাণী সংসদীয় বোর্ডের সদস্য হলেও বুথ-ফেরত সমীক্ষার পর যা পরিস্থিতি, তাতে আডবাণী-সুষমাদের তেমন প্রাসঙ্গিক বলে আর মনে করা যাচ্ছে না। একমাত্র যদি বুথ-ফেরত সমীক্ষার সঙ্গে ভোটের ফল না মেলে এবং শরিকদের উপরে নির্ভরতা বাড়ে, তা হলেই তাঁদের গুরুত্ব ফের বাড়বে।

গত নির্বাচন পর্যন্তও আডবাণীরাই ঠিক করতেন, দলে কার কী ভূমিকা হবে। এখন দলে তো বটেই, বুথ-ফেরত সমীক্ষার ফলও বলছে সরকারেও মোদী-যুগ আসছে। যদিও শেষ কথা বলবে সংখ্যা। অপেক্ষা তাই শুক্রবারের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন