নিহত পুলিশকর্মীর দেহ। আরায়।—নিজস্ব চিত্র।
আরার সিভিল কোর্ট চত্বরে লকআপের সামনে তখন সবেমাত্র একটা প্রিজন ভ্যান গিয়ে থেমেছে। সেটি থেকে নামছিল বিচারাধীন বন্দিরা। আজ ঘড়িতে তখন বেলা সাড়ে ১১টা। হঠাৎ প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দে চারপাশ কেঁপে উঠল। পুলিশ সূত্রে খবর, ধোঁয়া, বারুদের গন্ধ ছড়ালো চারপাশে। আতঙ্কে হুড়োহুড়ি শুরু হল। কিছু ক্ষণ পর দেখা যায়, কোর্ট লকআপের সামনে লুটিয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন অনেকে। আহতদের মধ্যে রয়েছেন আইনজীবীরাও। আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এক মহিলার দেহের অংশ। মৃত্যু হয়েছে এক কনস্টেবলের।
প্রথমে সবাই একে মানব-বোমার হামলা ভেবেছিলেন। কিন্তু সে আশঙ্কা ওড়ালেন রাজ্য পুলিশের কর্তারা। এডিজি (সদর) গুপ্তেশ্বর পাণ্ডে জানান, নিহত মহিলার কাছে একটি ব্যাগে বিস্ফোরক ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে। তার বয়স ৩৫-৪০ বছরের মধ্যে। পরিচয় জানা যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, কোর্ট লকআপের সামনে বসেছিল ওই মহিলা। বন্দিদের প্রিজন ভ্যান থেকে নামানোর সময় বিস্ফোরণ হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন জেলা পুলিশের কর্তা, ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। ভোজপুরের জেলাশাসক পঙ্কজ কুমার পাল জানান, বিস্ফোরণে নিহত পুলিশকর্মীর নাম অমিত কুমার (৪০)। জখম হয়েছেন ১৭ জন। তাঁদের মধ্যে তিন জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আরার বিজেপি সাংসদ রাজকুমার সিংহের বক্তব্য, অপরাধীদের পালাতে সাহায্য করতেই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিস্ফোরণের পর প্রিজন ভ্যানে থাকা সঞ্জয় উপাধ্যায় ও নন্দু শর্মা নামে দু’জন বন্দির খোঁজ মিলছে না। তারা খুনের মামলায় অভিযুক্ত। তল্লাশি চলছে। এক পুলিশকর্তা বলেছেন, “ওই মহিলার ক্ষতবিক্ষত দেহ থেকে দেশি বোমার স্প্লিনটারের টুকরো মিলেছে। পাওয়া গিয়েছে একটি মোবাইল ফোনও। তদন্তের পর সব কিছু স্পষ্ট হবে।”
আরায় বিস্ফোরণের জেরে রাজধানী পটনায় নিরাপত্তা আরও কঠোর করা হয়। এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এ দিনই দলীয় কাজে বিহারে এসেছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ।
আরার আদালতে বিস্ফোরণের ঘটনা অবশ্য প্রথম নয়। কয়েক বছর আগেও এক বার বোমা ফাটিয়ে কয়েক জন বন্দি কোর্ট চত্বর থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। সে বারও পলাতকদের মধ্যে ছিল নন্দু।
গত ডিসেম্বরে ঝাড়খণ্ডের চাইবাসায় কারারক্ষীদের চোখে লঙ্কাগুঁড়ো ছিটিয়ে পালানোর চেষ্টা করে জনাবিশেক বন্দি। তাদের মধ্যে দু’জন পুলিশের গুলিতে মারা যায়। আহত হয় তিন জন। কয়েক জন মাওবাদী জঙ্গি-সহ ১৫ বন্দি অবশ্য পালিয়ে যায়।