গত কালই অস্ট্রেলিয়ার পারথের কাছে স্টার্লিং স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ও ট্রেনের ফাঁকে বেকায়দায় আটকে গিয়েছিল এক যাত্রীর পা। নিজের ভুলে ওই দুর্ঘটনা ঘটলেও শেষ পর্যন্ত অক্ষত ছিলেন ওই যাত্রী।
এ দেশে এই ভুল হলে কিন্তু আর ছাড় নেই! নিজের অসতর্কতায় এই ধরনের দুর্ঘটনায় অঙ্গ বা প্রাণহানি ঘটলে সংশ্লিষ্ট যাত্রীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না বলে আজই সিদ্ধান্ত নিল রেল মন্ত্রক। আজ লোকসভায় রেলওয়ে বিল (২০১৪)-এ ওই সংক্রান্ত একটি সংশোধনী নিয়ে আসেন রেলমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া।
কী আছে ওই সংশোধনীতে?
এত দিন ট্রেন থেকে কোনও যাত্রী পড়ে গিয়ে আহত হলে বা মারা গেলে তাঁকে বা তাঁর পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিত রেল মন্ত্রক। কিন্তু রেল তাদের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষায় দেখেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চলন্ত ট্রেনে দুর্ঘটনার শিকার হন কলেজ পড়ুয়ারা বা উচ্ছৃঙ্খল যুবকরা। এক কামরা থেকে আর এক কামরায় যেতে গিয়ে হকারদের একটি বড় অংশও দুর্ঘটনার শিকার হন। কেউ আবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, “ওই ধরনের দুর্ঘটনায় রেলের দায় থাকে না। অথচ ক্ষতিপূরণ দিতে হয় রেলকে। ফলে ফি বছর বিপুল অর্থ খরচ হচ্ছে রেলের।” রেলের দোষে কোনও যাত্রী ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন, এমন সংখ্যা নগণ্য বলেই দাবি মন্ত্রকের।
গত কয়েক বছর ধরেই রেলের ভাঁড়ার বাড়ন্ত। তাই দায়িত্বে নিয়েই ক্ষতিপূরণ খাতে ওই বাড়তি বোঝা কমানোর সিদ্ধান্ত নেন রেলমন্ত্রী। সংশোধনী বিল অনুযায়ী, চলন্ত ট্রেন থেকে কোনও যাত্রী পড়ে গেলে, তাঁকে ক্ষতিপূরণ চাওয়ার আগে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি মোটেই নিজের অসতর্কতার জন্য ট্রেন থেকে পড়ে যাননি। অর্থাৎ, তিনি সতর্ক ছিলেন তা প্রমাণ করতেই হবে। স্পষ্ট বোঝাতে হবে, রেলের দোষেই ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবেই মিলবে ক্ষতিপূরণ। নচেৎ নয়। এটাও বলা হয়েছে, রেলের ভুলে যদি কোনও যাত্রীর অঙ্গ বা প্রাণহানি হয় তা হলে দ্রুত সেই ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেওয়া হবে।
এ ছাড়া, ফি বছর রক্ষীবিহীন লেভেল ক্রসিংয়ে দেশে কয়েকশো মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হন। যার জন্য রেলের কোনও দায় না থাকলেও, মানবিকতার খাতিরে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করতে হয় রেলকে। যার ফলে প্রচুর অর্থব্যয় হয়। ভবিষ্যতে ওই ক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা বন্ধ করার কথা ভাবা হচ্ছে।