মোঘলাই বিরিয়ানি: <br> মুঘল সম্রাটদের বদান্যতায় মোঘলাই বিরিয়ানির জন্ম হয়েছে এ দেশে। রয়্যাল টেস্ট বোধহয় একেই বলে। বিরিয়ানির <br> রাজা বলা যায় মুঘল বিরিয়ানিকে। সরু চালের ভাত, রেওয়াজি খাসি বা বিফ, <br> মন মাতাল করা গন্ধের কেওড়া আর গোলাপ জলের অপরূপ মেল বন্ধন।
হায়দরাবাদি বিরিয়ানি: <br> অউরঙ্গজেব সিংহাসনে বসে নিজা-উল-মুলককে হায়দরাবাদের নিজাম নিযুক্ত করেন। তাঁর রাঁধুনি ছিলেন <br> বিরিয়ানি রান্নায় পটু। প্রায় ৫০ রকম বিরিয়ানি বানাতে পারতেন তিনি। তবে এই বিরিয়ানির ‘ইউএসপি’ <br> ছিল বিভিন্ন ধরনের মাংস। মাছ, চিংড়ি, হরিণ, খরগোশের মাংস দিয়ে দুর্দান্ত বিরিয়ানির পদ <br> রান্না হত নিজাম মহলে। সঙ্গে থাকত মিঠে আতরের সুবাস, কেশর আর জাফরানের নিখাদ প্রেম।
কলকাতা বিরিয়ানি: <br> ১৮৫৬ সালে কলকাতায় আসলেন ওয়াজেদ আলি শাহ। যেন সঙ্গে করে নিয়ে এলেন কলকাতার প্রাণ ভোমরাকে। <br> মুঘল আর হায়দরাবাদি বিরিয়ানি থেকে একটু একটু ধার করে আর অনেকটাই <br> নিজের সৃষ্টিশীলতায় বানিয়ে ফেললেন কলকাতাইয়া বিরিয়ানি। গাওয়া ঘি আর রসালো সাদা-হলুদ <br> ভাতের সঙ্গে জুড়ে দিলেন সুসিদ্ধ হাল্কা ভাজা আলু আর ডিমকে। আর সেই নতুন বিরিয়ানির জাদুতে মজল ক্যালকেশিয়ানরা।
দিনদিগুল বিরিয়ানি: <br> চেন্নাইয়ে গেলে কিছুতেই মিস করবেন না দিনদিগুল বিরিয়ানি। কলাপাতার উপর জিরা সম্বর চাল আর ছোট <br> টুকরো করা মাংসের অপূর্ব সমাহার। সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত করবে দই আর কাঁচা পেঁয়াজ।
লখনউ বিরিয়ানি: <br> তুলনায় একটু কম মশলাযুক্ত হয় এই বিরিয়ানি। অনেকটা অওধি বিরিয়ানির স্টাইলে রান্না হয় এটি। তবে তৈরি করতে সময় <br> লাগে অনেকটা। মাংসের স্টক দিয়ে ধীরে ধীরে সিদ্ধ করা হয় লক্ষ্ণৌ বিরিয়ানি। সময় লাগে প্রায় ঘণ্টা দু’য়েক।
আর্কট বিরিয়ানি: <br> আর্কটের রাজ পরিবার থেকে এই বিরিয়ানির জন্ম। তামিলনাড়ুর ভেলোরে এই বিরিয়ানি খুবই জনপ্রিয়। সিরাগা <br> সম্বর চাল, ডালডা আর পুচাদি বলে এক ধরনের রায়তা দিয়ে তৈরি হয় এই বিরিয়ানি।
মেমোনি বিরিয়ানি: <br> গুজরাতের সিন্ধে এই বিরিয়ানির চল বেশি। সাধারণত ভেঁড়ার মাংস, ইয়োগার্ট, ভাজা পেঁয়াজ <br> আর নানান ধরনের মশলা দিয়ে তৈরি হয় এই বিরিয়ানি।
থালেসারি বিরিয়ানি: <br> মিষ্টি-নোনতা স্বাদের হয় এই বিরিয়ানি। নরম চিকেন উইঙ্গস, হালকা মশলা, কাইমা চাল, রোস্টেড কাজু, ড্রাই ফ্রুটস <br> দিয়ে তৈরি হয় এই ডিশ। মাংস আর চাল আলাদা ভাবে রান্না করে পরিবেশনের সময় মিশিয়ে দেওয়া হয়।
কামপুরী বিরিয়ানি: <br> অসমের কামপুরের জনপ্রিয় বিরিয়ানির ডিশ এটি। এক্ষেত্রে মটরশুঁটি, গাজর, আলু, হলুদ বেল পিপার্স, স্থানীয় সবজি দিয়ে <br> মাংস রান্না করা হয়। হালকা মশলা দেওয়া হয়। এরপর সুগন্ধী চালের সঙ্গে তা মেশানো হয়।
তাহারি বিরিয়ানি: <br> একমাত্র বিরিয়ানি, যা মাংস ছাড়া রান্না হয়। মহিশূরের সিংহাসনে বসে টিপু সুলতান শাকাহারি হিন্দুদের জন্য এই নতুন ধরনের <br> বিরিয়ানির আমদানি করেন। আলু, গাজর ও অন্যান্য সবজি দিয়ে তৈরি হয় তাহারি বিরিয়ানি।
বিয়ারি বিরিয়ানি: <br> এটি ম্যাঙ্গালুরু স্পেশাল বিরিয়ানি। তবে কর্নাটকের দক্ষিণের মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যেই প্রধানত <br> জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই বিরিয়ানি। এই ডিশটি তৈরির আগে সুগন্ধী চালে ঘি আর মশলা মাখিয়ে সারা রাত রেখে দেওয়া হয়। <br> পরের দিন মাংস বা সি ফুড দিয়ে তৈরি করা হয় বিয়ারি বিরিয়ানি।
সিন্ধি বিরিয়ানি: <br> একমাত্র এই বিরিয়ানিতেই সবুজ কাঁচা লঙ্কা চিরে দেওয়া হয়। আলুবখরা আর ইয়োগার্টও দেওয়া হয় সিন্ধি বিরিয়ানি তৈরিতে।
ভাটকালি বিরিয়ানি: <br> কর্নাটকের ভাটকলের স্পেশাল বিরিয়ানি এটি। ভাটকলের বিয়ের মেনুতে এই বিরিয়ানি মাস্ট। গ্রিন চিলি <br> মশলা আর পেঁয়াজ দিয়ে মাংস রান্না করে ভাঙ্গা চালের সঙ্গে মেশানো হয়।
বম্বে বিরিয়ানি: <br> অনন্য স্বাদের বম্বে বিরিয়ানিতে চিকেন-মটনের সঙ্গে থাকে ছোট করে কাটা আলুর টুকরোও।<br> হালকা মিষ্টি স্বাদের এই বিরিয়ানি খেতেও চমৎকার।
দুধ কা বিরিয়ানি: <br> হায়দরাবাদে বেড়াতে গেলে এই বিরিয়ানি মিস করবেন না। দুধের ক্রিম ব্যবহার করা হয় এই বিরিয়ানি তৈরিতে। সঙ্গে থাকে রোস্টেড নাটস।