আনন্দবাজার ডট কম আয়োজিত ‘বছরের বেস্ট’ অনুষ্ঠানের মঞ্চে বিজয়ীরা। — নিজস্ব চিত্র।
শুরুর দিন থেকেই প্রথাগত পথে হাঁটেনি আনন্দবাজার ডট কম। ছক ভেঙেই বার বার শ্রেষ্ঠত্বের অন্বেষণে ব্যস্ত থেকেছে। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেড়া ভাঙাদের সাহসেই আলোকিত হল আনন্দবাজার ডট কমের ‘বছরের বেস্ট’ সন্ধ্যা। এ বার অনুষ্ঠানের পঞ্চম বর্ষ। জুলাই মাসের এক ঝলমলে সন্ধ্যায় শহরের এক হোটেলে ‘বছরের বেস্ট’ শিরোপা পেলেন ৯ জন কৃতী বাঙালি।
শুরুতে সঙ্গীতশিল্পী উষা উত্থুপের কণ্ঠে ‘শিববন্দনা’ অনুষ্ঠানের মূল সুর বেঁধে দেয়। তাঁর কণ্ঠে উচ্চারিত মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র এগিয়ে চলার কথা বলে। কঠিন পরিস্থিতিতে মনকে অবিচল রাখার কথা বলে। আনন্দবাজার ডট কমের প্রধান সম্পাদক অভীক সরকারের বক্তব্যেও এগিয়ে চলার বার্তাই শোনা গেল। বর্তমান বাঙালি সমাজের সার্বিক অধোগতির দিকে তিনি নির্দেশ করেন। কিন্তু তার মাঝেই কিছু আলোর স্ফূলিঙ্গের অন্বেষণ থামা উচিত নয় বলেই জানান তিনি। অভীকবাবু বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করেছি দেখাতে যে, আপাতদৃষ্টিতে মনে হলেও বাঙালি সম্পূর্ণ রত্নহীন নয়। সেই বাঙালিকে বাংলার সঙ্গে পরিচয় করানোই আমাদের উদ্দেশ্য।’’
শিল্পপতি সঞ্জীব গোয়েন্কার হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন আনন্দবাজার ডট কমের প্রধান সম্পাদক অভীক সরকার। — নিজস্ব চিত্র।
সমাজের ব্যতিক্রমী চিন্তাধারার উদ্ভাবক বাঙালিদেরই ‘বছরের বেস্ট’ মঞ্চে সম্মানিত করে আসছে আনন্দবাজার ডট কম। কিন্তু বঙ্গবাসী হয়েও বঙ্গভাষী নন তিনি। ছয় প্রজন্ম ধরে পারিবারিক ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধি করেছেন। পাশাপাশি, এই বাংলার উন্নয়নেও তিনি সদানিবেদিত প্রাণ। আনন্দবাজার ডট কমের বিচারে এ বারের অন্যতম ‘বছরের বেস্ট’ শহরের উদ্যোগপতি সঞ্জীব গোয়েন্কা। ফুটবল থেকে শিল্প— তাঁর অনায়াস যাতায়াত। সঞ্চালক অনিন্দ্য জানার প্রশ্ন ছিল, ফিফা ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপে দেশের কোনও ক্লাব নেই। মোহনবাগান কি ভবিষ্যতে সেখানে খেলতে পারে? সঞ্জীব হেসে জানিয়েছেন, তিনি আশাবাদী। এই সন্ধ্যায় সঞ্জীবের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধান সম্পাদক।
শিল্পী যোগেন চৌধুরীর হাত থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন পরেশ মাইতি। — নিজস্ব চিত্র।
কাশীর ঘাট থেকে ভেনিসের গন্ডোলা— তাঁর শিল্প বাংলার ভৌগোলিক সীমা ভেঙে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে বাংলাকে করে তুলেছে বিশ্বজনীন। চিত্রকলার জগতে ব্যতিক্রমী অবদানের জন্য ‘বছরের বেস্ট’ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন চিত্রশিল্পী পরেশ মাইতি। সঞ্চালক পাওলি দামের কৌতূহল, শিল্পীর জলছবিতে নদীর পারে ভাঙা নৌকার আধিক্য কেন। পরেশের স্বভাবসিদ্ধ উত্তর, ‘‘সোজা রেখায় ছবি হয় না। বাঁকা রেখায় ছবি হয়।’’ পরেশের হাতে পুরস্কার তুলে দেন আর এক শিল্পী যোগেন চৌধুরী এবং ইআইআইএলএম কলকাতার ট্রাস্টি শিপ্রা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অভিনেত্রী তিলোত্তমা সোমের হাতে পুরস্কার তুলে দেন রুশ কনসাল জেনেরাল ম্যাক্সিম কজ়লভ এবং অভিনেত্রী জয়া আহসান। — নিজস্ব চিত্র।
নায়িকা এগিয়ে না কি অভিনেত্রী— বিতর্ক বহু যুগের। উত্তরের সন্ধানে চুলচেরা বিশ্লেষণে সাম্প্রতিক চলচ্চিত্রজগতে যাঁদের নাম উঠে আসে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম এই শহরের বাঙালি কন্যা তিলোত্তমা সোম। ‘মনসুন ওয়েডিং’ থেকে সাম্প্রতিক ‘পাতাললোক ২’ ওয়েব সিরিজ়ে যিনি স্বমহিমায় বিরাজমান, আনন্দবাজার ডট কমের বিচারে তিনি এ বারের ‘বছরের বেস্ট’। অভিনেত্রীর জীবনের বিশেষ মুহূর্তে সাক্ষী থাকতে দর্শকাসনে এই সন্ধ্যায় উপস্থিত ছিলেন তাঁর মা। তিলোত্তমার হাতে পুরস্কার তুলে দেন অভিনেত্রী জয়া আহসান এবং কলকাতায় নিযুক্ত রুশ কনসাল জেনেরাল ম্যাক্সিম কজ়লভ।
‘বছরের বেস্ট’ অনুষ্ঠানের মঞ্চে (বাঁ দিক থেকে) সুমন মুখোপাধ্যায়, অভিনন্দন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আবীর চট্টোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র।
অভিনয়ের মতো একই ভাবে টলিপাড়ায় বাংলা ছবির পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান সত্ত্বেও হাতেগোনা অন্য ধারার বাংলা ছবি এখনও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্মানিত হচ্ছে। তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবিতেই তা করে দেখিয়েছেন অভিনন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘মানিকবাবুর মেঘ’ ছবিটির জন্য তিনি পেলেন ‘বছরের বেস্ট’ সম্মান। তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন নাট্যকার ও পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায় এবং অভিনেতা আবীর চট্টোপাধ্যায়।
ভারতী মুদির হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন ঝুলন গোস্বামী। — নিজস্ব চিত্র।
নারী যেমন রাঁধে, তেমন চুলও বাঁধে। আর বাঙালি এক নারী শাড়ি পরে ফুটবলও খেলেন! ২০০৯ সাল থেকে ফুটবলকে অবলম্বন করে অজস্র তরুণীকে স্বপ্নপূরণে সাহায্য করেছেন বাঁকুড়ার ছাতনা অঞ্চলের দুমদুমির এক আদিবাসী পরিবারের বধূ ভারতী মুদি। এ বারের ‘বছরের বেস্ট’ তিনিও। সঞ্চালকের প্রশ্নের উত্তরে ভারতী জানান, নারী হিসাবে ফুটবল খেলতে গিয়ে এক সময়ে তাঁকে নানা ধরনের সামাজিক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ভারতীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন ভারতের জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক ঝুলন গোস্বামী এবং বরাহনগর আইএসআই-এর প্রথম অধিকর্তা সংঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুভাশিস বসুর হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিক। — নিজস্ব চিত্র।
ফুটবল প্রশিক্ষকের পর ফুটবলারের পালা। আনন্দবাজার ডট কম ‘বছরের বেস্ট’ হিসেবে বেছে নিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুভাষগ্রাম থেকে উঠে আসা ফুটবলার তথা ‘মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট’ ক্লাবের অধিনায়ক শুভাশিস বসুকে। তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিক এবং বাংলার ক্রিকেটার অনুষ্টুপ মজুমদার।
অধ্যাপক ঋতব্রত মুন্সীর হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন শিক্ষাবিদ মালবিকা সরকার। — নিজস্ব চিত্র।
পণ্ডিতেরা বলেছেন, সৃষ্টির আদিতে শব্দ হয়তো ছিল না, কিন্তু সংখ্যা ছিল। সংখ্যারহস্য নিয়ে তাঁর দীর্ঘ দিনের কাজের জন্য ‘বছরের বেস্ট’ পুরস্কার পেয়েছেন বরাহনগর আইএসআই-এর গণিতের অধ্যাপক ঋতব্রত মুন্সী। ঈশ্বর এবং সংখ্যা যদি অনন্ত হয়, তা হলে কি তারা কোথাও মিলে যায়? অনিন্দ্যবাবুর প্রশ্নের উত্তরে ঋতব্রতের সংক্ষিপ্ত উত্তর, ‘‘ঈশ্বর যদি থাকেন, তা হলে তাঁকেও আমরা কোনও দিন সংখ্যা দিয়েই ব্যাখ্যা করব।’’ ঋতব্রতের হাতে পুরস্কার তুলে দেন শিক্ষাবিদ মালবিকা সরকার এবং শিল্পী শ্রেয়সী চট্টোপাধ্যায়।
আনন্দশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সঙ্গীতশিল্পী অনুপম রায় এবং অভিনেতা টোটা রায়চৌধুরী। — নিজস্ব চিত্র।
ভারত এখন পোলিয়োমুক্ত দেশ। কিন্তু পোলিয়ো নির্মূল করতে আফগানিস্তানের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ বা আফ্রিকার একাধিক দেশে এখনও যে প্রতিষেধক ব্যবহার করা হয়, তার নেপথ্যে রয়েছেন বাঙালি বিজ্ঞানী আনন্দশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘বছরের বেস্ট’ পুরস্কার পেয়ে জানিয়ে দিলেন, ভবিষ্যতে কখনও দেশে ফিরলে তাঁর আদর্শ সঙ্গীত পরিচালক এআর রহমানের সঙ্গে কাজ করতে চান। তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন অভিনেতা টোটা রায়চৌধুরী এবং সঙ্গীতশিল্পী অনুপম রায়।
লেখক তিথি ভট্টাচার্যের হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন রুদ্রাংশু মুখোপাধ্যায় এবং ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী। — নিজস্ব চিত্র।
সমাজ ইতিহাসের বদলে যাওয়া রূপরেখার প্রেক্ষাপটে ভূত এবং ভয়ের নানা দিককে নিজের গবেষণায় অন্বেষণ করেছেন তিনি। তাঁর লেখা সাম্প্রতিক ‘ঘোস্টলি পাস্ট, ক্যাপিটালিস্ট প্রেজ়েন্স’ বইটির জন্য এ বারের ‘বছরের বেস্ট’ নির্বাচিত হয়েছেন আমেরিকা নিবাসী লেখক তিথি ভট্টাচার্য। তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন পরিচালক ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী এবং অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রুদ্রাংশু মুখোপাধ্যায়।