DEMENTIA

দূষণ ডেকে আনছে অকাল ডিমেনশিয়া, রোগ রুখতে এ সব মানতেই হবে

বিশ্বে সবচেয়ে মানুষের গড় আয়ু কমিয়ে দেওয়ার নেপথ্যে অন্যতম ভূমিকা পালন করে দূষণ।

Advertisement

মনীষা মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৪:৩৬
Share:

ডিমেনশিয়া রুখতে মুছতে হবে দূষণ-জুজু। ছবি: শাটারস্টক।

পারিবারিক আলোচনায় কোনও আত্মীয়কে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে হঠাৎই তাঁর চেনা নামটা ভুলতে বসছে মন। বাজারের ফর্দ হোক বা সংসারের খরচ, সহজ হিসেবও গুলিয়ে যাচ্ছে প্রায়ই। কথা অসংলগ্ন তো বটেই, সঙ্গে মনে পড়ছে বহু বছর আগের নিখুঁত ঘটনা। অথচ সকালে কী খেলেন মনে পড়ছে না কিছুতেই। প্রিয় কারও জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী এ সব মনে পড়ছে সে সব দিন পেরিয়ে যাওয়ার অনেক পরে।

Advertisement

স্মৃতি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে অসুখ। চেনা নাম ডিমেনশিয়া। আগে ধারণা ছিল প্রৌঢ় বয়সের জন্যই অপেক্ষা করে থাকে এ অসুখ। তবে, সে ভাবনায় জল ঢেলেছে আধুনিক গবেষণা। স্মৃতির খুদকুঁড়োটুকুও আসলে খেয়ে যাচ্ছে বায়ুদূষণ। তাই আর প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছনো অবধি অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। তার আগেই স্মৃতির ভাঁড়ারে কোপ বসাচ্ছে ধোঁয়া-ধুলোর কণা। বিজ্ঞান পত্রিকা ‘প্রসিডিং অব ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস’-এ বছর কয়েক আগে প্রকাশিত এমন এক রিপোর্টের সঙ্গে সহমত হয়েছেন এই শহরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও।

বায়ুদূষণে ধুঁকতে থাকা শহরের হাওয়া ক্ষতি করছে বুকের। মস্তিষ্কেরও। সাফ জানালেন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ সমর চৌধুরী। তাঁর মতে, ‘‘দূষণের প্রত্যক্ষ প্রভাবে শুধু হৃদরোগ, হাঁপানি বা সিওপিডি-ই নয়, বায়ুদূষণ তার ক্ষতি চারিদিচ্ছে মস্তিষ্কের স্নায়ুতে। শব্দ মনে রাখার হার যেমন কমছে, তেমনই মাঝ বয়স পেরলেই কমে যাচ্ছে শব্দবন্ধ ও বাক্য তৈরির স্বতঃস্ফূর্ততা।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: জরায়ুমুখের ক্যানসার আটকে দিতে পারে কিছু নিয়ম, কী ভাবে সতর্ক হবেন

ধোঁয়ার পার্টিক্যুলেট ম্যাটার খুব সূক্ষ্ম হওয়ায় তা আমাদের শ্বাসনালী দিয়ে সরাসরি ফুসফুসে পৌঁছে যেতে পারে।

সারা বিশ্বেই মানুষের গড় আয়ু কমিয়ে দেওয়ার নেপথ্যে অন্যতম ভূমিকা পালন করে দূষণ। বায়ুদূষণের সূচকে অধিকাংশ সময়েই কলকাতা পিছনে ফেলে দেয় অন্য বড় ও ব্যস্ত শহরগুলোকে। এর ফলে স্নায়ুর নিউরোনগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও মস্তিষ্কে তথ্য পৌঁছে দেওয়ার কাজে ঢিলেমি আসে। কখনও কখনও স্নায়ু এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় যে তথ্য আদানপ্রদানে আর অংশ নিতেই পারে না।

শহর হোক অথবা মফস্‌সল, প্রচুর পরিমাণে যান চলাচলের কারণে এর ধোঁয়া থেকে বেরনো নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড,পার্টিক্যুলেট ম্যাটার (পিএম), সালফার ডাই অক্সাইড এবং অন্য দূষণপদার্থ সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির সঙ্গে বিক্রিয়া করে। তৈরি হয় ওজোন গ্যাস। বিশেষত পিএম খুব সূক্ষ্ম হওয়ায় তা আমাদের শ্বাসনালী দিয়ে সরাসরি ফুসফুসে পৌঁছে যেতে পারে। এটাই জমতে জমতে সিওপিডি অর্থাৎ ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ ডেকে আনে। ফুসফুসের কাজকর্ম কমতে শুরু করে। ফুসফুসের অ্যালভিওলাই শুকিয়ে অক্সিজেনের অভাব দেখা যায় শরীরে। ফুসফুসকে যেমন শেষ করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এই দূষণ, তেমনই নিউরোনের কার্যকারিতাও কমিয়ে দিতে ওস্তাদ এই পিএম।

ডিমেনশিয়া দূরে রাখতে তাই শরীরচর্চা ও ডায়েটে পরিবর্তন আনলেই হবে না। প্রয়োজন বায়ুদূষণের কারণগুলোর হাত থেকেও নিজেদের বাঁচানো। স্মৃতির ভাণ্ডার সাজিয়ে রাখতে নজর দিতে হবে খাবার পাতেও। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, মাছের তেল, ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারদাবার তো খেতেই হবে, সঙ্গে তেল-মশলা এড়িয়ে একটু শাকপাতাও রাখতে হবে পছন্দের মেনুতে। শরীরচর্চা স্নায়ুদের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে বলে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তদের প্রয়োজনীয় ব্যায়ামের নিদান দেন চিকিৎসকরা। শুধু বাইরের ধোঁয়াই নয়, ঘরের বাতাসও নষ্ট হয় লাগামছাড়া কীটনাশক ধূপ, স্প্রে, রুম ফ্রেশনার ইত্যাদি থেকে। রান্নার ধোঁয়া, ফোড়নের ঝাঁঝ— এ সবেও দূষিত হয় ঘরের হাওয়া। তাই সমরবাবুর মতে, এ সব তো বটেই, আবার তার সঙ্গে এড়াতে হবে দূষণের জালও।

আরও পড়ুন: অটিজ়ম এড়াতে ভাল রাখুন মাকে, বলল সভা

চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে কিনুন মাস্ক

বেশ কিছু নিয়ম মেনে চললে বায়ুদূষণের প্রকোপ থেকে কিছুটা হলেও দূরে থাকা যায়। স্মৃতিশক্তি বাঁচাতে এটুকু না হয় করলেনই!

ধোঁয়া-ধুলো-দূষণ বেশি এমন জায়গায় ঘন ঘন যাতায়াত থাকলে অর্থাৎ কলকারখানা সমৃদ্ধ বা বাজার এলাকায় গেলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন। তবে সস্তা দামে বাজারচলতি মাস্ক নয়। একটু দামি ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে কিনুন মাস্ক। গাছ লাগান। বায়ুকে শুদ্ধ করে তোলার অন্যতম সেরা পদক্ষেপ। আজকাল ছোট ফ্ল্যাট বা ঘরেও বিভিন্ন বাগান করার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। কোনও অন্দরসজ্জাবিদের পরামর্শ নিতে পারেন এ ক্ষেত্রে। ঘরের ভিতর ব্যবহার করুন এয়ার পিউরিফায়ার। ধূপ-ধুনোর ধোঁয়ায় রাশ টানুন। রুম ফ্রেশনার নয়, ভরসা রাখুন টাটকা ফুল। রান্নার সময় আঁচে চাপা দিন। এতে ফোড়নের ঝাঁঝ হাওয়ায় খুব একটা মিশতে পারে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন