আলোকিত আনন্দ

সুগন্ধি ও শৌখিন মোমবাতি তৈরি করতে পারেন বাড়িতেইপ্রাচীন কাল থেকেই ভারতে রয়েছে সুগন্ধির চর্চা। ফলে ভারতবর্ষের মোমবাতিতে থাকত দারচিনি।

Advertisement

রূম্পা দাস

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share:

বছরশেষ আর বর্ষবরণের এই বিশেষ সময়টায় ভাল-মন্দয় মেশা একটা বছর কেটে যাওয়ার যেমন অনুভূতি রয়েছে, তেমনই আছে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আনন্দ। পথেঘাটে, অলিগলিতে আলোময় চারপাশ। দোকান থেকে কেনা আলো, মোমবাতির পাশাপাশিই যদি বারান্দা, খাওয়ার টেবিল, ক্রিসমাস ট্রি-র নীচটা সেজে ওঠে হাতে তৈরি মোমবাতিতে? আনন্দ আরও আলোকিত হয় বইকি।

Advertisement

ইতিহাসের সরণিতে

Advertisement

প্রাচীন কাল থেকেই ভারতে রয়েছে সুগন্ধির চর্চা। ফলে ভারতবর্ষের মোমবাতিতে থাকত দারচিনি। তার পরে নানা ঘাতপ্রতিঘাত, সামাজিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে এখনও ক্যান্ডল মেকিং ইন্ডাস্ট্রি বেড়ে চলেছে রমরমিয়ে। স্কুলের পাঠ থেকে শখ... মোমবাতি তৈরি করেন অনেকেই। কিন্তু যাঁরা একেবারেই জানেন না মোমবাতি তৈরির কায়দা, তাঁরা বানাবেন কী ভাবে?

উপকরণ নেহাতই স্বল্প

মোমবাতি তৈরি করতে যত ধরনের উপকরণ লাগে, তার মধ্যে বেশ কিছু জিনিস ব্যবহার করা যায় বারবার। যেমন স্প্যাচুলা, হিট প্রুফ কন্টেনার, ডাবল বয়লার, থার্মোমিটার ইত্যাদি। এ ছাড়া লাগে ওয়াক্স, ক্যান্ডল উইকস, সুগন্ধি তেল। এই জাতীয় উপকরণ প্রয়োজন মতো কিনতে হয় বারবার। বেসিক ক্যান্ডল তৈরি করতে এগুলিই যথেষ্ট।

বানানোর উপায়

ওয়াক্স গলানোর জন্য একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যদি গলে যাওয়া ওয়াক্সের পরিমাণ ২০০ গ্রাম চান, তা হলে কাজ শুরু করতে হবে মোটামুটি ৪০০ গ্রাম ওয়াক্স নিয়ে। কারণ গলে যাওয়ার পরে তার পরিমাণ কমে যায়। ডাবল বয়লিং মেথডে গলাতে হবে ওয়াক্স। ডাবল বয়লার না থাকলে গ্যাসে একটি বড় বাটিতে জল বসান। সেই বাটির উপরে বসান ওয়াক্সের বাটি। তবে এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন, নীচের বাটির জল যেন ওয়াক্সের বাটির তলা অবধি না পৌঁছয়। ওয়াক্স গলতে থাকলে থার্মোমিটার দিয়ে দেখে নিন যে, তার পারদ কতটা উঠছে। সয় ওয়াক্সের জন্য সাধারণত ১২০ ডিগ্রি থেকে ১৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইটই যথেষ্ট। অন্য দিকে প্যারাফিনের জন্য সাধারণত ১৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট ভাল।

ওয়াক্স গলে গেলে এসেনশিয়াল অয়েল দিতে পারেন ক’ফোঁটা। কাচের বোতল, গ্লাস বা পেপার কাপ... যার ভিতরেই মোমবাতি তৈরি করতে চান, সেখানে আগে একটি ক্যান্ডল উইক রাখুন। সুতোর অংশ গ্লাস-বোতল-কাপের বাইরে বার করে একটি চপস্টিক কিংবা পেনসিলে জড়িয়ে আড়াআড়ি ভাবে পাত্রের বেড় বরাবর রাখুন। এর ফলে মোমবাতির ভিতরের সুতো বসবে একেবারে মাঝামাঝি। ফলে মোম জ্বলতে এবং গলতে সুবিধে হবে। গলানো ওয়াক্স বাতির পাত্রে ঢেলে অপেক্ষা করুন। জমাট বেঁধে গেলেই তৈরি। তখন পেনসিল বা চপস্টিকে বাঁধা সুতোর অংশ কেটে দিতে হবে।

ওয়াক্সের রকমারি

ওয়াক্স ছাড়া মোমবাতি তৈরি করা সম্ভব নয়। তারও আছে নানা ধরন।

প্যারাফিন: বহু বছর ধরে প্যারাফিনই ব্যবহার করা হয় মোমবাতি তৈরির জন্য। দাম তুলনায় কম। আবার প্যারাফিনের সঙ্গে রং, এসেন্স মিশে যায় সহজে। প্যারাফিন আদতে পেট্রোলিয়ামের উপজাত দ্রব্য।

সয়: সয় ওয়াক্সের জনপ্রিয়তা ভীষণ বাড়ছে ইদানীং। সয়াবিনের তেল থেকে তৈরি সয় ওয়াক্সে আবার অনেক সময়ে প্যারাফিন, পাম অথবা বিজ় ওয়াক্সও মেশানো হয়।

বিজ় ওয়াক্স: মৌমাছির ওয়াক্স দিয়ে তৈরি মোমবাতি পাওয়া গিয়েছে ইজিপ্টের পিরামিডের ভিতর থেকেও। মধু তৈরির সময়ে এই ওয়াক্স বার হয়। সোনালি রঙের ওয়াক্স দেখতে সুন্দর, মিষ্টি গন্ধও থাকে। তবে মৌমাছির ওয়াক্সের দাম বেশি। সচেতন না হলে গলানোর সময়ে পুড়েও যেতে পারে।

শৌখিন ধরন

মোমবাতির সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে শৌখিনতাও। তাই শুধু ব্যবহারিক দিক নয়, বাড়ছে দেখনদারিও।

ফ্লোরাল ক্যান্ডল: ওয়াক্স গলিয়ে ঢালার সময়ে পাত্রে শুকনো পাপড়ি দিতে পারেন। গোলাপ, ল্যাভেন্ডার জাতীয় পাপড়ি, পাতা দারুণ মানায়।

ক্রেয়ন ক্যান্ডল: ক্রেয়ন পেনসিল গলিয়েও তৈরি করা যায় ক্যান্ডল। তবে তার সঙ্গে প্যারাফিন বা ওয়াক্স মিশিয়ে নেওয়া ভাল। এক ধরনের ক্রেয়ন না গলিয়ে, নানা রঙের পরতেও বাতি তৈরি করা যায়।

ওয়াক্সের মধ্যে অভ্র, ঝিনুক, কড়ি, এসেন্স, রং, নুড়ি মিশিয়েও মোমবাতি তৈরি করা যায়। আর এখান থেকেই শুরু হয় আপনার কল্পনার। সেই ইচ্ছেয় ভর করে আপনিও তৈরি করে ফেলতে পারেন হরেক রকমের শৌখিন মোমবাতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন