New GST Rates on High Fat Food

শিঙাড়া-জিলিপি নিয়ে হুঁশিয়ার করছে কেন্দ্র, অথচ কর কমছে আইসক্রিম, পাস্তার! এ কেমন সিদ্ধান্ত মোদীর?

এক দিকে যেখানে রোগের চিকিৎসার খরচ সুলভ হয়েছে, তেমনই রোগের কারণ হতে পারে এমন খাবারের দাম কমিয়ে ক্রেতাকে উৎসাহিত করা হয়েছে অস্বাস্থ্যকর খাবার কিনতে!

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:১৮
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্বেগ আর তাঁর সরকারের সিদ্ধান্ত কি মিলছে? গ্রাফিক— আনন্দবাজার ডট কম।

দিন কুড়ি আগেই লালকেল্লায় দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, দেশবাসীর কোনও ভাবেই মোটা হওয়া চলবে না! অথচ তাঁর সরকারের নতুন জিএসটি-র হার দেখলে কে বলবে সে কথা। সেখানে সেই সব খাবারে ট্যাক্স কমানো হয়েছে, যা খেলে শরীরে অস্বাস্থ্যকর মেদ জমতে পারে!

Advertisement

স্বাস্থ্য নিয়ে দেশবাসীকে প্রায়ই নানা উপদেশ দিয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রী। কখনও তিনি দেশবাসীকে তেল খাওয়া কমাতে বলেন। কখনও বলেন সুস্থ থাকতে জীবনযাত্রার ধরন বদলে ফেলতে হবে। ফিটনেস, শরীরচর্চা নিয়েও পরামর্শ দিতে শোনা যায় মোদীকে। যেমনটা তিনি বলেছিলেন গত ১৫ অগস্ট। স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় মোদী বলেছিলেন, ‘‘এ দেশের মানুষের ফিটনেস নিয়ে চিন্তা হচ্ছে আমার। কারণ, এ দেশের স্থূলত্ব ক্রমেই বেড়ে চলেছে। আর এটি দেশের সার্বিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে একটা বড় চ্যালঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই আমাদের প্রত্যেককে খেয়াল রাখতে হবে, যাতে কোনও ভাবে মোটা না হয়ে যাই।’’

দেশবাসীর স্বাস্থ্য নিয়ে মোদীর এই যে ‘চিন্তা’, তা যে নেহাত কথার কথা নয়, তা বোঝাতে কসুর রাখেনি কেন্দ্রও। মোদী যখন দেশে বাড়তে থাকা ডায়াবিটিস আর স্থূলত্ব নিয়ে কথা বলছেন, তখন কেন্দ্রীয় অয়েল অ্যান্ড ফ্যাট কন্ট্রোল বোর্ড একটি ‘হুঁশিয়ারনামা’ জারি করেছিল শিঙাড়া, জিলিপির মতো দেশজ ‘স্ন্যাকস’-এর বিরুদ্ধে। সরকারি একটি নির্দেশিকা দিয়ে বলা হয়েছিল, শিঙাড়া, জিলিপি, লাড্ডু, বড়াপাওয়ের মতো তেলে ভাজা বা মিষ্টি খাবার খাওয়ার আগে দেশবাসীর জেনে নেওয়া উচিত, তা থেকে শরীরের কী কী ক্ষতি হতে পারে। তাই দেশের সমস্ত স্কুল এবং অফিসের ক্যান্টিনে বা ক্যাফেটেরিয়ায় ওই সংক্রান্ত তথ্য প্রদর্শন করতে বলে কেন্দ্র। তা-ই যদি হবে, তবে মানুষকে একইরকম সতর্ক করা উচিত, যে কোনও মিষ্টি, ময়দাজাত খাবার বা তৈলাক্ত খাবার খাওয়া থেকে। কিন্তু নতুন জিএসটি-র হার তা বলছে না।

Advertisement

বুধবার রাতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ যে নতুন জিএসটি ঘোষণা করেছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে করের মাত্রা ১২ শতাংশ থেকে এমনকি কোনও কোনও ক্ষেত্রে ১৮ শতাংশ থেকেও কমিয়ে ৫ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে পাস্তা, ইনস্ট্যান্ট ন্যুডল, আইসক্রিম, ভুজিয়া, চিপ্‌স বা অন্যান্য প্যাকেটজাত নোনতা খাবার, চকোলেট, বিভিন্ন ধরনের সস্ এবং ফ্রোজ়েন মিট বা সংরক্ষিত মাংসের ক্ষেত্রে। যে সমস্ত খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত। শুধু তা-ই নয়, এর মধ্যে কয়েকটি কারসিনোজেনিক, অর্থাৎ ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে বলেও মনে করেন পুষ্টিবিদেরা। মনে করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’-ও।

কেউ বলতেই পারেন, মোদীর এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক। দেশের মানুষ চাইলে ওই খাবার না খেতেই পারেন। সে ক্ষেত্রে কয়েকটি দেশের সরকারের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, যারা মোদীর মতোই দেশের মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে ‘চিন্তিত’।

তালিকায় প্রথমেই রয়েছে ব্রিটেনের নাম। সেখানে যে কোনও মিষ্টি পানীয়ে নির্ধারিত সীমার বেশি চিনি থাকলেই অতিরিক্ত কর দিতে হয় প্রস্তুতকারী সংস্থাকে। একই ধরনের ট্যাক্স চালু আছে দক্ষিণ আফ্রিকাতেও। একা তারা নয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব বলছে, এই মুহূর্তে গোটা বিশ্বে ৮৫টি দেশে চিনি জাতীয় খাবার এবং পানীয়ে এই ধরনের কর বসানো রয়েছে। ট্রান্সফ্যাট বেশি আছে এমন খাবারে অতিরিক্ত কর বসিয়েছে ৬০টি দেশ। তার কারণ, মিষ্টি এবং ট্রান্সফ্যাট— উভয়ই স্থূলত্ব থেকে শুরু করে হার্টের রোগ, ডায়াবিটিস, লিভারের রোগের কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বলছে, এগুলি সরাসরি স্থূলত্ব এবং প্রদাহ বৃদ্ধি করে শরীরে। যা পরোক্ষে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে!

মোদী সরকার অবশ্য নতুন জিএসটি বিধিতে ক্যানসার-সহ বহু জটিল রোগের ওষুধের কর কমিয়েছে। কমিয়েছে রোগের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়ামের জিএসটিও। কিন্তু এক দিকে যেখানে রোগের চিকিৎসার খরচ সুলভ হয়েছে, তেমনই রোগের কারণ হতে পারে এমন খাবারের দাম কমিয়ে ক্রেতাকে উৎসাহিত করা হয়েছে অস্বাস্থ্যকর খাবার কিনতে! এই সিদ্ধান্ত এবং দেশবাসীর স্বাস্থ্য নিয়ে মোদীর উদ্বেগ একটু পরস্পরবিরোধী হয়ে গেল না কি?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement