ধনতেরসের পরিকল্পনা জানালেন (বাঁ দিক থেকে) সুদীপা চট্টোপাধ্যায়, দর্শনা বণিক, দেবলীনা কুমার, শ্বেতা ভট্টাচার্য এবং ইধিকা পাল। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
শনিবার ধনতেরস। ধনত্রয়োদশীর পুণ্য দিনে ধনলক্ষ্মী এবং ধনকুবেরের পুজো করা হয়। প্রচলিত বিশ্বাস, এই বিশেষ দিনে মূল্যবান ধাতু কিনলে ধনলক্ষ্মী আকৃষ্ট হন। তাঁর আশীর্বাদে সারা বছর গৃহস্থের সংসারে আর্থিক স্বাচ্ছল্য বজায় থাকে। তাই সোনা হোক বা রুপো— অনেকেই ধনতেরসের দিন মূল্যবান ধাতু কেনার চেষ্টা করেন। টলিপাড়ায় একাধিক তারকাও এই বিশেষ দিনে সামর্থ্য অনুযায়ী সোনা বা রুপোর গয়না কেনার চেষ্টা করেন। ধনতেরসের দিনটি কী ভাবে উদ্যাপন করেন তাঁরা?
চলতি বছরে সোনার দাম ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। শুক্রবার কলকাতায় ১০ গ্রাম গহনা সোনার দাম ছিল ১ লক্ষ ২২ হাজার ১০০ টাকা। বলা হচ্ছে, সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে হলুদ ধাতু। বক্তব্য মেনে নিয়েই অভিনেত্রী সুদীপা চট্টোপাধ্যায় জানালেন, তিনি এখন আর ধতেরসের দিন সোনা কেনেন না। বললেন, ‘‘এটা তো বাঙালিদের সংস্কৃতি নয়। তাই অল্প বয়সে সকলের দেখে আমিও সোনা কিনতাম।’’
এখন ধনতেরসের দিনটা অন্য ভাবে কাটে সুদীপার। সেখানে নানা ধরনের আচার ও রীতির আধিক্য। আগে দু’জোড়া ঝাঁটা কেনেন তিনি। তার পর যে কোনও মন্দিরে দান করে সেগুলি বাড়িতে নিয়ে আসেন। সুদীপার কথায়, ‘‘দুটো ঝাড়ু কখনও একসঙ্গে রাখতে নেই। তাই সে দুটো দুই শোয়ার ঘরে খাটের নীচে আলাদা রেখে দিই। ভাইফোঁটার পরে ব্যবহার করি।’’
সুদীপা চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
সুদীপার বাড়িতে ধনকুবেরের বিগ্রহটিকে ধনতেরসের আগের দিন বার করা হয়। ধনতেরসের দিন মা লক্ষ্মীর পায়ের কাছে একটি টাকার উপর মূর্তিটি বসিয়ে দেওয়া হয়। সঙ্গে নিবেদন করা হয় নৈবেদ্য। অভিনেত্রী বললেন,‘‘বলা হয়, এই একটি দিন ধনকুবের লক্ষ্মীর পায়ের কাছে বসে তাঁর আশীর্বাদ লাভ করেন। ধনতেরসের পরের দিন মহালক্ষ্মী পুজোর সময়ে ধনকুবেরও পুজো পান। তার পর মূর্তিটি এক বছর আলমারির মধ্যে তালাচাবি বন্ধ করে রেখে দিই।’’
সুদীপার বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়। তখন বাড়ির পরিচারিকারা ছুটি নেন না। প্রতি বছর ধনতেরসের দিন তাঁদের জন্য সাধ্যমতো সোনা বা রুপোর টাকা কেনেন সুদীপ্তা। বললেন, ‘‘স্টিলের বাসন এবং সোনা বা রুপো দেওয়া চেষ্টা করি।’’ ধনতেরস উপলক্ষে বাড়ির গোপাল এবং অন্যান্য ঠাকুরের জন্যও গয়না কেনেন সুদীপা।
নিজের জন্য সাধারণত সোনার গয়না কিনতে হলে দুর্গাপুজোর আগেই তা কিনে নেন সুদীপা। অভিনেত্রী জানালেন, ধনতেরসের সময়ে দোকানের ভিড় তাঁর স্বামীর (অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়) অপছন্দ। তবুও কোনও কোনও বছর ইচ্ছা হলে ভিড় ঠেলেই গয়নার দোকানে উপস্থিত হন দম্পতি। তবে নিজের জন্য রুপোর টাকা বা রুপোর কোনও দেবীমূর্তির বেশি কিছু কেনেন না সুদীপা।
দেবলীনা কুমার। ছবি: সংগৃহীত।
ধনতেরসের দিনে ধাতু কেনার অভ্যাস শৈশবেই তৈরি হয়েছিল বলে জানালেন অভিনেত্রী দেবলীনা কুমার। জমানো টাকা তুলে দিতেন মায়ের হাতে। মা তাঁর জন্য রুপোর টাকা কিনে দিতেন। সেই অভ্যাস এখনও বজায় রয়েছে। কিন্তু দেবলীনা জানালেন, ধনতেরসে তিনি নিজে কখনও সোনা কেনেননি। অভিনেত্রীর কথায়, ‘‘সোনার গয়না বিশেষ কোনও দিনে বাবা বা গৌরব (দেবলীনার স্বামী গৌরব চট্টোপাধ্যায়) আমাকে উপহার দিয়েছে। এখনও পর্যন্ত নিজের জন্য কখনও সোনার গয়না কিনিনি।’’
পাশাপাশি, সোনার বাজারদরের দিকেও নির্দেশ করলেন দেবলীনা। অভিনেত্রীর যুক্তি, ‘‘আগে নির্দিষ্ট কোনও একটি উৎসবের কথা মাথায় রেখে একটা সোনার গয়নার সেট কেনা যেত, এখন সেটা হয়তো সারা বছরে একটা সেটে এসে দাঁড়িয়েছে।’’ তবে মায়ের পরামর্শে এখন ধনতেরসে রান্নার বাসনপত্র কেনার অভ্যাস তৈরি করেছেন দেবলীনা। অভিনেত্রী হেসে বললেন, ‘‘গত বছর রুপোর টাকার সঙ্গে একটা হাতা কিনেছিলাম। এ বারেও কিছু একটা কিনব।’’
ইধিকা পাল। ছবি: সংগৃহীত।
দুর্গাপুজোয় মুক্তি পেয়েছে তাঁর অভিনীত ছবি ‘রঘু ডাকাত’। তাই আসন্ন কালীপুজোর মরসুম ভাল ভাবেই কাটবে বলে আশাবাদী অভিনেত্রী ইধিকা পাল। তবে অভিনেত্রী আলাদা করে ধনতেরস উদ্যাপন করেন না। ইধিকা বললেন, ‘‘আমার মা ধনতেরস পালন করেন। তা ছাড়া, পয়লা বৈশাখের দিনেও মা সোনা কেনেন।’’ নিজের জন্য কেনার পাশাপাশি মেয়ের জন্যেও আলাদা করে সোনা বা রুপোর গয়না কেনেন তিনি। ইধিকা হেসে বললেন, ‘‘আসলে মা যা কেনেন, তা আমরা দু’জনেই ব্যবহার করি। তাই সমস্যা হয় না।’’
বিয়ের পর চলতি বছরে দ্বিতীয় বার ধনতেরস পালন করবেন অভিনেত্রী দর্শনা বণিক। বিশেষ এই দিনটি বাড়ির অন্দরসজ্জা নিজের হাতে করে থাকেন তিনি। দীপাবলি আসতে খুব বেশি দেরি নেই। ধনতেরসের দিনে নানা ধরনের আলো, মাটির প্রদীপ এবং মালা দিয়ে বাড়ি সাজিয়ে তোলেন দর্শনা। চলতি বছরে স্বামী সৌরভ দাসকে সঙ্গে নিয়ে মূল্যবান ধাতু কেনার পরিকল্পনা করে ফেলেছেন দর্শনা। পাশাপাশি, সোনার বর্তমান বাজারদর দর্শনার কপালেও চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। তাই সাধ্যমতো তিনি সোনার গয়না কিনতে আগ্রহী। বললেন, ‘‘মায়ের একটা জড়োয়া হারের নকশা আমার বেশ পছন্দের। সে রকম একটা সোনার হার কিনতে চাই।’’
দর্শনা বণিক। ছবি: সংগৃহীত।
বিয়ের আগে দর্শনা তাঁর মাকে দেখেই ধনতেরস উদ্যাপন শিখেছিলেন। দর্শনা জানালেন, ধনতেরসের দিন তাঁর মা সোনার গয়নাই কিনতেন। কিন্তু অভিনেত্রী নিজে এখন সোনা এবং রুপো— উভয় ধাতুই কেনার চেষ্টা করেন। দর্শনা বললেন, ‘‘মাকে দেখেই সোনার প্রতি আমার ভালবাসা তৈরি হয়েছিল।’’ ধনতেরসে সোনা বা রুপো কেনাকে ‘নিজেকে নিজের উপহার’ হিসেবে উল্লেখ করতে ইচ্ছুক দর্শনা। তবে সৌরভ যে অভিনেত্রীর জন্মেদিনে এবং বিবাহবার্ষিকীতে তাঁকে সোনার গয়না উপহার দেন, সে কথাও জানাতে ভুললেন না অভিনেত্রী।
চলতি বছরেই সাতপাকে বাঁধা পড়েছেন অভিনেত্রী শ্বেতা ভট্টাচার্য। বিয়ের পর প্রথম ধনতেরস নিয়ে উচ্ছ্বসিত তিনি। শ্বেতা বললেন, ‘‘ছোট থেকেই মাকে দেখেছি এই দিনে সাধ্য অনুযায়ী কিছু একটা কিনে বাড়িতে নিয়ে আসতেন। সোনা না হলে রুপোর বাটি-চামচই কিনতেন। এখনও সেই রীতি চলছে।’’
শ্বেতা ভট্টাচার্য। ছবি: সংগৃহীত।
ধনতেরস উপলক্ষে সোনা বা রুপো কেনার অভ্যাস রয়েছেন শ্বেতার। চলতি বছরে অবশ্য তিনি নিজের জন্য কিন্তু কিনতে নারাজ। বললেন, ‘‘বাড়ির ঠাকুরের জন্য একটা ছোট্ট সোনার টিপ কিনব।’’ রুবেল যদি তাঁকে কিছু কিনে দেন? শ্বেতা হেসে বললেন, ‘‘ধনতেরসে আলাদা চমকের কিছু নেই। রুবেলের কাছে কোনও দিনই কিছু আবদার করি না। ও নিজে থেকেই আমাকে উপহার দেয়।’’