Saree Fashion with Susmita Chatterjee

সাজ আর শক্তির যোগ কোথায়? কালীপুজোয় তারই সন্ধানে সুস্মিতা, সাজলেন নানা কালের নারীর সাজে

সাজও শক্তির কথা বলে। কালীপুজো উপলক্ষে অভিনেত্রী সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায় সাজলেন নানা সময়ের মেয়েদের নানা ধারা মেনে। দেখালেন, সমাজে মেয়েদের অবস্থানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কী ভাবে বদলে গিয়েছে সাজের ধরন।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৫ ১৬:৫৫
Share:
০১ ১৫

কেউ বলেন কালী উগ্র, কালী ধ্বংসাত্মক। কালীর সাজও অনেকের কাছে ভয়াবহ। বাড়ির অবাধ্য মেয়েটির মতো। অথচ তাতেই লুকিয়ে শক্তি। সময়ের শক্তি, বিশ্বচালিকা শক্তি। নারীর অন্তরের সেই শক্তি নানা সময়ে প্রকাশ পেয়েছে যেমন কাজের মাধ্যমে, তেমনই আবার তা তুলে ধরার দায়িত্ব পালন করে চলেছে নারীর সাজ। সময়ের সঙ্গে বদলে বদলে গিয়েছে সাজের ধরন। বাঙালির শাড়ি-গয়না পরার কায়দাতেই এসেছে কত বদল। অভিনেত্রী সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়ের কালীপুজোর নানা সাজে উঠে এল তেমনই নানা সময়ের সাজের কথা। ভূষণে শক্তি প্রকাশের ইতিহাস।

০২ ১৫

শাড়ির কাপড় বাছাই থেকে শুরু করে শা়ড়ি পরার কায়দা, সবই পাল্টেছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। হাল আমলে মেয়েদের বাইরে যাতায়াত যেমন বেশি, তেমন বেড়েছে পশ্চিমী জীবনধারার প্রভাব। সবের সঙ্গে মানিয়েই চলছে নারীদের জীবন। ফলে শাড়ি পরলেও তাতে জীবনধারার ছাপ স্পষ্ট থাকে যেন।

Advertisement
০৩ ১৫

কিন্তু যদি ফিরে যাওয়া যায় কয়েক শতক আগে, সেখানে একই ভাবে শাড়ির সাজে নারীর শক্তি প্রকাশ পেয়েছে। দু’শতক আগে সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়েরা যখন বেনারসি শাড়ির মতো কাপড়ের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন, তখন সেই কাপড় ঘিরে তৈরি হচ্ছে নতুন গল্প। ১৮৫৬ সালে বেনারস থেকে নবাব ওয়াজিদ আলি শাহের হাত ধরে বাংলায় ঢুকছে বেনারসের কাপড়। ধনী পরিবারের মহিলাদের হাতে উঠছে সেই ভারী, জমকালো সিল্ক। তৈরি হচ্ছে শাড়ি। গায়ে চাপছে বেনারসি। সেই বেনারসির আগমনে বাংলায় তৈরি হচ্ছে নতুন ধারার সাজ।

০৪ ১৫

সুস্মিতা এখানে পরেছেন তাঞ্চই বেনারসির সঙ্গে সে সময়ের ধাঁচের গয়না। বেনারসি পরার ধরনই বলে দেয় ব্যক্তিত্বের গাম্ভীর্যের কথা।

০৫ ১৫

সে কালের সঙ্গে এ কালের ফ্যাশনে সবচেয়ে বড় ফারাকের জায়গা হল, শাড়ির ভার। এখনও যে ভারী শাড়ি পরার চল নেই, এমন নয়। কিন্তু হাল্কা শাড়ি রোজের যাপনের জন্য সুবিধাজনক। সেই ধরনের শাড়ি পরেও কী ভাবে ব্যক্তিত্ব, শক্তি প্রকাশ পেতে পারে, তা দেখায় খাদির নীল শাড়ির সঙ্গে সুতির রেজ়র কাট ব্লাউজ়। আর ছিমছাম গয়না।

০৬ ১৫

বেনারসির আগমনের আগে জমকালো শাড়ি বলতে বাংলা দেখেছে নিজেদের জামদানি, বালুচরী। কিন্তু তাতে বেনারসি সিল্কের সেই ওজন নেই। তাই নতুন সেই ধারার কাপড়ের প্রতি আলাদাই আকর্ষণ তৈরি হয়। ভারী ভারী গয়নার সঙ্গে পরা শুরু হয় বেনারসি সিল্ক।

০৭ ১৫

সুস্মিতার ব্লাউজ়ও নজর করার মতো। সে সময়ে ব্লাউজ়ের কাট ছিল অন্য রকম। সুস্মিতার পরনে এখানে ভেলভেটের ঢাকা ব্লাউজ়। পাড়ে জড়ির কাজ। এখনও কর্মক্ষেত্রে পুরুষেরা কলার দেওয়া শার্ট পরেন। কলারের যে আলাদা ওজন আছে সমাজে, তা প্রতিষ্ঠিত। ব্লাউজ়ের কলার যেমন এক ধরনের সম্ভ্রম ডেকে আনে, কলার না থাকলেও, গলা উঁচু ব্লাউজ় তার কাছাকাছি গুরুত্বই দাবি করে।

০৮ ১৫

সাজের আনুষঙ্গিক আবার তৈরি হয়েছে হায়দরাবাদি ঘরানায়। টিকলি থেকে শুরু করে চোকার, টানা কানের দুল, জড়োয়ার চুড়ি ঐতিহ্যের ইঙ্গিত দেয়।

০৯ ১৫

খেয়াল করলে দেখা যাবে, সাহিত্যেও বার বার ফিরে এসেছে সাজ ও শক্তির সম্পর্কের কাহন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ পড়লে দেখা যাবে, রোহিনীকে তিনি বেনারসি পরিয়েছিলেন যাতে সে কৃষ্ণকান্তের প্রতি নিজের অধিকার প্রকাশ করতে পারে। লোকের চোখ টানার জন্য এমন ভাবেই বেনারসির মতো ভারী শাড়ির সাজের চল হয় সে সময়ে। শিক্ষিকা, ভারতীয় বস্ত্রকলা সম্পর্কে উৎসাহী এবং ১৯ শতকের বাঙালি মেয়েদের ভ্রমণকথায় বিবর্তমান বাঙালি সমাজের গবেষক শ্রেয়সী চক্রবর্তী আবার বলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘যোগাযোগ’ উপন্যাসের কথাও। কুমুদিনীর বেনারসির সাজ দেখে ছোটলাটের স্ত্রী, মেমসাহেব প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ‘‘সমাজে নিজের অস্তিত্বকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যও মেয়েরা ভারী শাড়ি, ভারী গয়না দিয়ে সাজতেন তখন,’’ বলেন শ্রেয়সী। অন্দরমহলে থাকা নারীদের জন্য তখন বাইরের জগতের দরজা খোলা নেই। ঘরের ভিতরই জাঁকজমকপূর্ণ সাজে সেজে নিজেদের জাহির করার প্রয়োজন পড়ত।

১০ ১৫

সে সময়ের সঙ্গে এ সময়ের সমাজভাবনার যেমন ফারাক অঢেল, তেমন সাজেও এসেছে বদল। এ কালের সাজে সুস্মিতার খোলামেলা ভাব তা-ই প্রকাশ করে।

১১ ১৫

২০ শতকের প্রথমার্ধে সাজের কথা বলতে গেলে অনেকেরই মনে পড়বে গায়ত্রী দেবীকে। কোচবিহারের রাজকন্যা তথা জয়পুরের রাজমাতা। তাঁর শাড়ি পরার ধরন দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন ব্রিটিশেরাও। ফিনফিনে শিফন শাড়ি, সঙ্গে কনুই পর্যন্ত ব্লাউজ়। বব কাট চুল। গলায় হালকা হার। মুক্তোর হোক বা রত্নপাথরের। অল্প কয়েক গোছা চুড়ি আর হালকা কানের দুল। শাড়ির আঁচল ঘুরিয়ে আনা সামনে। কখনও গল্ফ খেলছেন, কখনও বা ঘোড়ায় চড়ছেন, কখনও আবার রাজনীতির মঞ্চে দেখা দিচ্ছেন। কাজের সঙ্গে তাঁর সাজের কথাও ছড়িয়ে পড়ে দিকে দিকে। শুরু হয় ব্যক্তিত্বময়ীদের ফ্যাশনের নতুন ধারা।

১২ ১৫

গায়ত্রী দেবীর মতো সেই সাজ তখনকার মহিলাদের কাছে ক্ষমতায়নের সমান। ধীরে ধীরে বহির্জগতের কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার স্বাদ পাওয়া বাঙালি নারীদের কাছেও তখন সাজের সংজ্ঞা বদলাচ্ছে।

১৩ ১৫

সুস্মিতা সেজেছেন সেই সময়ের মহিলাদের মতো করেই। ফিনফিনে সাদা অরগ্যানজ়া শাড়ি ও পেস্তা সবুজের সরু পাড়। সাদা গ্লাসহাতা ব্লাউজ়। গলায় ও এক হাতে মুক্তোর হালকা গয়না। কপালে ছোট্ট টিপ। ঢেউ খেলানো ছোট চুল। চোখে কখনও রোদচশমা, কখনও নয়।

১৪ ১৫

নিজের ব্যক্তিত্বকে নানা ভাবে প্রকাশ করতে এমন সাজের ক্ষেত্রে আঁচল হয়ে উঠত মূল চরিত্র। কখনও ঘুরিয়ে ডান কাঁধে ফেলা হত, কখনও বা হাতের কব্জির কাছে এলিয়ে থাকত। গয়নার ভার নেই শরীরে, কিন্তু ব্যক্তিত্বের ভার সাজ জুড়ে।

১৫ ১৫

নারীর ভূষণ যে তাঁর শক্তিই, তা তাঁর সাজ বিভিন্ন সময়েই প্রকাশ করেছে। তবে নানা সময়ে যে তাঁর শক্তির প্রকাশ বদলে বদলে যায়, তা দেখিয়েছে বদলাতে থাকা ফ্যাশন ভাবনা। সুস্মিতার সাজ তারই কয়েকটি দিক দেখাল।

ভাবনা, পরিকল্পনা: সুচন্দ্রা ঘটক, প্রয়োগ: সুচন্দ্রা ঘটক, তিস্তা রায় বর্মণ, পোশাক: হাউজ় অফ তনয়, গয়না: হাউজ় অফ তনয়, রূপটান এবং কেশসজ্জা: অভিজিৎ চন্দ, সাজ-ভাবনা: তনয় পাল, ছবি: উজ্জয়িনী ঘোষ, স্থান: রিজেন্টা অর্ক’জ় কলকাতা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement