বয়স ১৬ হোক কিংবা ৬০, দুর্গাপুজোর ক’দিন শাড়ি পরার শখ কমবেশি সব মহিলারই হয়। শাড়ির আবেদন এক এক মেয়ের কাছে এক এক রকম। কেউ পুজোতে সাবেকি কায়দার শাড়ি পরতে চান, কেউ আবার শাড়ি পরেই পুজোর ভিড়ে উষ্ণতা ছড়াতে চান। তবে কেবল শাড়ি পরলেই তো হল না, শাড়ির সঙ্গে চাই কায়দার ব্লাউজ়ও। শাড়ির রং মিলিয়ে ব্লাউজ় পরার চল পুরনো হয়েছে, এখন কনট্রাস্ট ব্লাউজ়ের যুগ। পুজো আসতে আর খুব বেশি দিন বাকি নেই, তাই দর্জির কাছে কায়দায় ব্লাউজ় বানানোর আর্জি নিয়ে গেলেও কোনও লাভ হচ্ছে না। অফিস, সংসার সামলিয়ে অনেকে এখনও ঠিক করে উঠতে পারেননি, সপ্তমীর সকালে, অষ্টমীর অঞ্জলিতে, নবমীর রাতে অথবা দশমীর বরণে ঠিক কোন ধরনের ব্লাউজ় পরবেন। শেষ মুহূর্তে ব্লাউজ় বাছাই করার আগে জেনে নিন কোন কায়দার ব্লাউজ় এ বছর ফ্যাশনে ‘ইন’। আনন্দবাজার ডট কমে পুজোর জন্য শেষ মুহূর্তের ‘সাজেশন’ সাজিয়ে দিলেন খ্যাতনামী সব বুটিকের পোশাকশিল্পীরা।
জর্জেট বেনারসি হোক বা গাছি তসর, সঙ্গে একটা জমকালো ব্লাউজ় পরে নিলে শাড়ির সৌন্দর্য বেড়ে যায় কয়েক গুণ। বেগনি রং এ বছর বেশ ট্রেন্ডিং। গোলাপি, সোনালি, আকাশি— যে কোনও রঙের শাড়ির সঙ্গে হাতে বোনা জারদৌসি কারুকাজের এমন বেগনি ব্লাউজ় কিন্তু দারুণ মানাবে। ব্লাউজ়টিকে আরও বেশি নজরকাড়া করছে ক্রিসক্রস ব্যাক ডিজ়াইন। শাড়ি জমকালো না হলেও সঙ্গে এমন একটি ব্লাউজ় পরে নিলেই হয়ে উঠবেন একেবারে ‘পুজো রেডি’। শহরের বিভিন্ন পোশাকশিল্পীর সম্ভারে এ বছর সিল্ক কাপড়ের উপর এমন সূক্ষ কারুকাজের নকশা বেশ চোখ পড়বে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে ‘এথনিক বুটিক’-এর একটি ব্লাউজ়।
ব্লাউজ় এমন হবে, যা ছিমছাম শাড়ির সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিতে পারে কয়েক গুণ। সাজগোজ নিয়ে একটু এক্সপেরিমেন্ট করতে পছন্দ করলে এ বারের পুজোয় কোমরখোলা এমন একটি হাকোবা ব্লাউজ় পরেই হয়ে উঠতে পারেন অনন্যা। অফলাইন হোক বা অনলাইন, আগের বারের মতো এ বছরও বাজারে হাকোবা ব্লাউজ়ের চাহিদা তুঙ্গে। ‘মোনরি’র কালো ঘটিহাতা হাকোবা ব্লাউজ়ে রয়েছে সাদা লেসের নকশা। কোমরের অংশে সরু দু’টি দড়িতে ঝুলছে রঙিন লটকন, হাতায় আর পিঠে রঙিন সুতোর জমকালো কারুকাজ। এমন ব্লাউজ়ের সঙ্গে লাল টুকটুকে একটা শাড়ি, অক্সিডাইজ়ড গয়না, ছোট একটা টিপ আর খোঁপায় ফুলেল সাজ— পুজোয় প্রিয়জনের নজর কাড়তে আর কী চাই?
এই ব্লাউজ় উল্টো পরে নিলেও ক্ষতি নেই। হাতকাটা ডিপ ভি নেকলাইনের ‘সুতা’র ‘আলাট পালাট জামুন’ ব্লাউজ়টি পুজো উপলক্ষে আপনার শপিং লিস্টে রাখতেই পারেন। ভাবুন তো, একটাই ব্লাউজ়ে কখনও কালো কলমকারি প্রিন্ট, আবার পাল্টে দিলেই জাম রঙের সুতির কাপড়ে জামদানির নকশা। ব্যাপারটা ঠিক এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো। পুজোর ষষ্ঠীর দিন ইচ্ছে হলে কলমকারি প্রিন্টের সঙ্গে একরঙা একটি শাড়ি পরে নিলেন, আবার নবমীর দিন জাম রঙের ব্লাউজ়ের সঙ্গে হলুদ শাড়ি দিয়ে জুটি বাঁধলেন। দুই দিন যে একই ব্লাউজ় পরেছেন, তা আপনি ছাড়া আর কেউই টের পাবে না। একে ‘বহুরূপী’ ব্লাউজ় বললেও মন্দ হয় না!
কালো জামদানির উপর রঙ্গন ফুলের নকশা, দুর্গাপুজোর ষষ্ঠী কিংবা সপ্তমীর রাতের সাজের সঙ্গে এমন একটি ব্লাউজ় কিন্তু দারুণ মানাবে। যাঁরা হাতকাটা ব্লাউজ় পরতে ভালবাসেন ‘পরমা’র ‘ব্ল্যাক রঙ্গন’-এর ডিজ়াইন তাঁদের মনে ধরবে। হ্যাল্ডলুম সিল্ক হোক বা কটন— এ রকম একটা ব্লাউজ়ের সঙ্গে মেলবন্ধন বেশ চোখে পড়ার মতো। ব্লাউজ়ের পিঠ জুড়ে ফুলেল নকশা— এ বার পুজোর বাজারে হিট। তবে হ্যাঁ, এমন ব্লাউজ়ের সঙ্গে খোঁপা কিন্তু মাস্ট! পিঠভর্তি নকশা লুকিয়ে রাখার কি কোনও মানে আছে?
আলমারিতে একটা মেরুন ব্লাউজ় থাকলে কিন্তু অনেক শাড়ির সঙ্গেই দারুণ মানিয়ে যায়। পুজো উপলক্ষে এমন একটি জাল এম্ব্রয়ডারি করা মেরুন ব্লাউজ় নিজের সম্ভারে রাখতেই পারেন। যাঁরা খোলামেলা ব্লাউজ় তেমন পছন্দ করেন না, অথচ একটু ভারী নকশা করা ব্লাউজ় খুঁজছেন, এই ব্লাউজ়টি তাঁদের জন্য ভাল বিকল্প হতে পারে। ‘এথনিক বুটিক’-এর কর্ণধার গার্গী সোনকার বলেন, ‘‘পিঠখোলা ব্লাউজ় তো আছেই, এ বছর কিন্তু কাঞ্জিভরম কিংবা অন্যান্য সিল্কের শাড়ির সঙ্গে বোটনেক ব্লাউজ়ের চাহিদাও বেড়েছে। স্মার্ট, ছিমছাম সাজতে যাঁরা পছন্দ করেন, তাঁরা পুজো স্পেশ্যাল এমন একটা ব্লাউ়জ় কিনে ফেলতেই পারেন।’’
দুর্গাপুজো মানেই একটা সাদা-লাল শাড়ি মাস্ট! অষ্টমী কিংবা দশমীর সাজ সম্পূর্ণ করতে সাদা-লাল শাড়ির সঙ্গে মানানসই সাবেকি ব্লাউজ় না হলেই নয়। পুরনো দিনের ফ্যাশন বার বার ফিরে আসে হালের ফ্যাশনে। লেসের কারুকাজ একটা সময়ে সেকেলে হলেও আবার ফিরে এসেছে সেই ট্রেন্ড। ‘মোনরি’র পুজো কালেকশনের হাতে বোনা জামদানি কটনের সাদা ব্লাউজ়টি অষ্টমীর সকালের সাজের জন্য হতে পারে একদম ফিট। দেখতে খানিকটা ক্রপটপের মতো। হাতায় ও ব্লাউজ়ের ধার বরাবর সাদা লেসের সূক্ষ্ম কারুকাজ ব্লাউজ়ের নকশায় সাবেকিয়ানার ‘টাচ্’ যোগ করেছে। সাবেকি সাজে পুজোর ভিড়ে নজর কাড়তে চাইলে এমন একটি ব্লাউজ় রাখতেই পারেন পছন্দের তালিকায়।
ব্লাউজ়ের সম্ভারে একটি কালো ব্লাউজ় না থাকলেই নয়। পুজোয় ভিড়ের মাঝেও উষ্ণতা ছড়াতে চাইলে কেমব্রিক কাপড়ের হাতকাটা এমন একটি ব্লাউজ় কিন্তু আপনার সম্ভারে রাখতেই পারেন। গা জুড়ে জরির কারুকাজ, দেখতে ছিমছাম হলেও বেশ নজরকাড়া এই ব্লাউজ়টির নাম ‘রবিন রজনীগন্ধা’। ‘সুতা’র নকশা করা ডোম নেকলাইনের এই ব্লাউজ়টি কিন্তু মুর্শিদাবাদি সিল্ক হোক বা তসর, টিস্যু হোক বা জামদানি— যে কোনও শাড়ির সঙ্গেই বেশ মানাবে।
আড়াল করলেও আড়াল হল কই? সাদা পিঠখোলা ব্লাউ়জ়ে ক্রিসক্রস স্টাইলে দড়ি বাঁধা, তার উপর অরগ্যানজ়ার জ্যাকেট। পুজোয় সবার চেয়ে আলাদা সাজতে চাইলে ‘পরমা’র এমন ‘মুমতাজ় জ্যাকেট ব্লাউজ়’ পরে নিলেই হল। জ্যাকেটের ধার বরাবর জারদৌসি ফুলেল কারুকাজ আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে ব্লাউজ়টিকে। পুজোয় সাবেকি কায়দায় সাজগোজ করতে চাইলে এমন একটি ব্লাউজ় কিন্তু সাজে আলদা মাত্রা যোগ করতে পারে। শাড়ির সঙ্গে জ্যাকেট ব্লাউজ়— এ বার পুজোয় এমন মেলবন্ধনে আপনার সাজ হতে পারে একেবারে চোখ ধাঁধানো।
তরুণ প্রজন্ম এখন ‘বডি হাগিং’ সুতির শাড়ির প্রেমে পড়েছে। মল কটন হোক বা কটন জামদানি, এ বছর বাজারে পেয়ে যাবেন সুতির শাড়ি ও ব্লাউজ়ের রকমারি নকশা। সপ্তমীর সকালে একটা আশমানি রঙের কটন জামদানির সঙ্গে সুইটহার্ট নেকলাইন ব্লাউজ়ের মেলবন্ধন হলে তো ‘কেয়া বাত’! ছিমছাম ব্লাউজ়টিকে নজরকাড়া করতে ‘মোনরি’র কর্ণধার পোশাকশিল্পী মোনালিসা পোদ্দার তার সঙ্গে যোগ করেছেন সাদা লেসের সূক্ষ কারুকাজ। পুজোর সাজগোজ মানেই জমকালো নয়, স্নিগ্ধ সাজেও মোহময়ী হয়ে উঠতে ব্লাউজ়ের এমন নকশা এ বছর পরে দেখতেই পারেন।
পুজোতে একটু ‘কোয়ার্কি’ সাজে সকলের নজর কাড়তে চান? সে ক্ষেত্রে ব্লাউজ় নিয়ে কিন্তু একটু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেই পারেন। শিফন কিংবা জর্জেটের একটা ফিনফিনে শাড়ির সঙ্গে পরনে থাকতে পারে সাদা অরগ্যানজ়ার পাফ হাতা ব্লাউজ়। ‘সুতা’র ‘লেডি মায়রা’ ব্লাউজ়টির নকশা খানিক ক্রপ টপের মতোই বটে। ইচ্ছে করলে ক্রপ টপ দিয়েও সুন্দর করে শাড়ি স্টাইল করে বেরিয়ে যেতে পারেন প্যান্ডেল হপিংয়ে। খুব বেশি সাজের প্রয়োজন নেই, শাড়ির সঙ্গে একটা ক্রপটপ, রোদচশমা, কানে দুল আর হাতঘড়ি— ব্যাস, পুজোয় ঘোরাঘুরির জন্য একেবারে তৈরি।
বয়স যা-ই হোক না কেন, এ বার পুজোয় জামদানি ব্লাউজ় বেশ মনে ধরছে মহিলাদের। আর যদি সেই ব্লাউজ় হয় ইন্ডিগো রঙের, তা হলে তো কথাই নেই। ‘পরমা’র পুজো সম্ভারে ইন্ডিগো জামদানি পিঠকাটা ব্লাউজ়ের নকশা কিন্তু বেশ ভিন্ন। পিঠের শেষপ্রান্তে দড়ির বাঁধন সাবেকিয়ানার সঙ্গে আধুনিকতার একটা মিশেল তৈরি করেছে। সুতির একটা শাড়ির সঙ্গে এমন একটা ব্লাউজ় পরলে খুব বেশি সাজগোজের প্রয়োজন নেই। মণ্ডপে নজর কাড়তে ব্লাউজ়ের পিঠের দিকের এই বাঁধনই যথেষ্ট।
এ বার পুজোর ফ্যাশনে কলারযুক্ত ব্লাউজ় বেশ ‘ট্রেন্ডিং’। একরঙা মেরুন শাড়ির সঙ্গে যদি পরে ফেলেন ধূসর রঙের ব্লাউজ়। ব্লাউজ়ের কলার জুড়ে ফুলেল নকশা, সঙ্গে লেসের কারুকাজ। হাতে বোনা এমন ব্লাউজ় বানাতে সময় লাগে প্রায় ২-৩ দিন। এমন ব্লাউজ়ের কালেকশন আলমারিতে থাকলে যে কোনও গাঢ় রঙের শাড়ির সঙ্গে দিব্যি মানিয়ে যাবে। ‘মোনরি’র স্টোর এবং ওয়েবসাইটেও পেয়ে যাবেন এমন ব্লাউজ়ের অজস্র সম্ভার। পুজোয় প্রিয়জনের সঙ্গে ঠাকুর দেখাই হোক কিংবা পুজো মণ্ডপে আড্ডা— হাতে বোনা এমন ব্লাউজ় পরনে থাকলে লোকের নজর এড়ানো মুশকিল!
এ বছর ব্লাউজ়ের ফ্যাশনে ঘটি হাতার বেশ রমরমা। সাদা ব্লাউজ়ের সঙ্গে যে কোনও রঙের শাড়ি বেশ ভাল মানায়। দুধ সাদা কাপড়ের উপর সোনালি চুমকি আর লেসের কারুকাজ ঘটি হাতা ব্লাউজ়টির সাজে বেশ চমক এনেছে। খুব বেশি চকমকে সাজগোজ যাঁদের পছন্দ নয়, তাঁদের পছন্দের তালিকায় থাকতেই পারে এমন একটি ঘটি হাতা ‘কানাই’ ব্লাউজ়। ‘সুতা’র পুজো সম্ভারেও পেয়ে যাবেন এমন ব্লাউজ়ের নানা নকশা। ছিমছাম হলেও আপনার সকালবেলার পুজো লুকের সঙ্গে এমন ব্লাউজ় কিন্তু বেশ মানাবে।
মুঘল যুগে তৈরি দুর্গের নকশা যদি ব্লাউজ়ের পিঠে ফুটে ওঠে, তা হলে কেমন হয়? সেই ভাবনা থেকেই পোশাকশিল্পী পরমা ঘোষ বানিয়ে ফেলেছেন ‘ফিরোজ়ি মোগলাই টাইল ট্রি’ ব্লাউজ়ের নকশা। ‘পরমা’র বোটনেক ব্লাউজ়ের পিঠে যে ফুলেল কারুকাজ, তা মুঘল আমলের দুর্গের গায়ের আঁকা নকশা থেকে অনুপ্রাণিত। খুব বেশি জমকালো নয়, হাতে বোনা এই ব্লাউজ়ের নকশা আর পাঁচটা ডিজ়াইনার ব্লাউজের থেকে বেশ আলাদা। এ বছর বাজারে বোটনেক ব্লাউজ়ের পিঠভর্তি কারুকাজ বেশ ট্রেন্ডিং। হাতকাটা ব্লাউজ়ে ভরাট এম্ব্রয়ডরি কারুকাজ চাইলে এমন ব্লাউজ় একটি কিন্তু শপিং কার্টে যোগ করতেই পারেন।