কেন জামাইষষ্ঠীতে আগ্রহ হারিয়েছেন, তার কারণ জানালেন রাজ। —ফাইল চিত্র।
আমার বিয়ের অনেকগুলো বছর কেটে গেল। সময়ের সঙ্গে পরিবার বড় হয়েছে। পেশাগত জীবন এবং পরিবারের সকলকে নিয়ে আমি খুব ভাল আছি। কিন্তু সত্যি বলতে কি, এখন আর আলাদা করে জামাইষষ্ঠী পালন করা হয় না। পালন করতে ইচ্ছাই করে না।
আমার শ্বশুর-শাশুড়ি বর্ধমানে থাকেন। মনে আছে, বিয়ের পর পর শুরুর দিকে জামাইষষ্ঠী করতে গিয়েছিলাম। আমার শাশুড়ি খুব ভাল রান্না করেন। নিজের হাতে আমাকে অনেক কিছু রান্না করে খাইয়েছিলেন। কিন্তু সেই এক বারই। এখন আর ব্যস্ততার কারণে আলাদা করে জামাইষষ্ঠী পালনের সময় হয়ে ওঠে না। তবে এই বিশেষ দিনটিতে শ্বশুর-শাশুড়ি দু’জনেই কলকাতায় আমাদের বাড়িতে চলে আসেন। সকলে মিলে খাওয়াদাওয়া হয়। এটুকুই।
এ কথা শুনলেও অনেকে ভাবতে পারেন, জামাইষষ্ঠীর দিন মানে বাড়িতে খাওয়াদাওয়ার এলাহি আয়োজন হয়। তা কিন্তু নয়। আমি সারা বছর বাড়িতে খুব সাধারণ খাবার খেতে পছন্দ করি। এই দিনেও সে রকমই ব্যবস্থা থাকে। আমার কড়া নির্দেশ, আমার জন্য কোনও বেশি আয়োজন করা চলবে না। শাশুড়িমায়ের স্বাস্থ্যও এখন খুব ভাল নেই। আমি জানি, এখনও তিনি আমার জন্য নিজের হাতে রান্না করতে চান। কিন্তু আমি তাঁকে এই কষ্টটা দিতে চাই না। সকলে মিলে একসঙ্গে বছরের আর পাঁচ দিনের মতোই আজও সাধারণ খাওয়াদাওয়া করব। তার বেশি কিছু নয়। সকলেই জানেন, কোনও রকম আয়োজনের বিষয় যদি টের পাই, তা হলে সকালে ঘুম থেকে উঠেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যাব!
দুই সন্তানকে নিয়ে রাজ এবং শুভশ্রী। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
কথাগুলো পড়ে মনে হতে পারে যে, আমি হয়তো এ সব কিছু বাড়িয়ে বলছি। সেটা কিন্তু নয়। আসল কথা হল, বয়সের সঙ্গে আমার মধ্যেও একাধিক পরিবর্তন এসেছে। নিজেকে কেন্দ্র করে কোনও উদ্যাপন আমার আর ভাল লাগে না। বিশেষ স্বস্তি পাই না। আমার জন্মদিন পালনের ক্ষেত্রেও এমনই হয়েছে। সকলে ওই দিনটি পালন করায় আগ্রহী থাকলেও, আমার আর আগ্রহ নেই। জামাইষষ্ঠীও সে রকম। কিন্তু যাঁরা পালন করছেন, তাঁদের নিয়ে আমার কোনও সমস্যা নেই। এর জন্য বাড়িতে মাঝেমধ্যে বকুনিও খাই। সমস্যাতেও পড়তে হয়। কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্ত সকলের কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছি। শুভও (শুভশ্রী) সেটা মেনে নিয়েছে।
একটা সময় ছিল, দামি গাড়ি চড়তে পছন্দ করতাম। প্রচুর কেনাকাটা করতাম। এখন সেগুলোও জীবন থেকে চলে গিয়েছে। নিজে ভেবেও দেখেছি। কিন্তু কোনও উত্তর পাইনি। অল্প কথায় বলতে গেলে, আর ভাল লাগে না। কাজ করতে খুব ভাল লাগে। কাজ থাকলে কোনও বিশ্রামের প্রয়োজন মনে হয় না। দিনের শেষে কাজ সেরে বাড়ি ফিরতে ভাল লাগে। পরিবারই এখন আমার কাছে সব কিছু। সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
বয়স বাড়ার সঙ্গে বুঝতে পেরেছি, আত্মকেন্দ্রিক হয়ে বেঁচে লাভ নেই। জানি, আমি সমাজে পরিচিত মুখ। আর সেটা আমার পেশাগত কারণেই। কিন্তু ব্যক্তিজীবনে আমি ততটাই লাজুক। মুখচোরা। নিজের কাজকে উদ্যাপন করতে ভালবাসি। সেখানেও লক্ষ করলে দেখা যাবে, সব সময়ে আমি ‘আমরা’ শব্দটা ব্যবহার করি। কারণ, আমি একতায় বিশ্বাসী। অর্থাৎ, আমার কাজ নয়, আমাদের কাজে বিশ্বাস রাখি। আমার অফিসের সরস্বতীপুজোটা নিয়ে আমার বিশেষ উত্তেজনা আছে। আমার পছন্দের কোনও মানুষের উদ্যাপনে প্রচুর আনন্দ করে বাড়ি ফিরে আসতে পারি। অন্য কারও ভাল উদ্যোগে শামিল হতে ভাল লাগে। কিন্তু নিজেকে নিয়ে কোনও উদ্যাপনে আমি আর নেই। জামাইষষ্ঠী যেহেতু আমাকে ঘিরেই হওয়ার কথা বাড়িতে, সেটাও আর আমার ইচ্ছা করে না পালন করতে। পরিবারেও সেটা এত দিনে সকলে বুঝে গিয়েছেন।
(সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত।)