মাথায় স্টেন্ট বসানো শুরু কলকাতাতেও

আচমকা হার্ট অ্যাটাকের ফলে ধমনীতে রক্ত জমাট বেঁধে গেলে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করে সেখানে স্টেন্ট বসানো হয়। এ ভাবে সরু হয়ে আসা ধমনীকে বাইরের একটি বস্তুর সাহায্যে চওড়া করে আবার রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে দেওয়াটা খুবই সাধারণ বিষয়। কিন্তু মাথায় রক্ত জমাট বেঁধে আচমকা স্ট্রোক হলে এ বার সেখানেও স্টেন্ট বসানোর কাজ শুরু হয়েছে কলকাতায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৫৭
Share:

সুস্থ হওয়ার পর চিকিৎসক জয়ন্ত রায়ের সঙ্গে সত্যজিৎ।—নিজস্ব চিত্র।

আচমকা হার্ট অ্যাটাকের ফলে ধমনীতে রক্ত জমাট বেঁধে গেলে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করে সেখানে স্টেন্ট বসানো হয়। এ ভাবে সরু হয়ে আসা ধমনীকে বাইরের একটি বস্তুর সাহায্যে চওড়া করে আবার রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে দেওয়াটা খুবই সাধারণ বিষয়।

Advertisement

কিন্তু মাথায় রক্ত জমাট বেঁধে আচমকা স্ট্রোক হলে এ বার সেখানেও স্টেন্ট বসানোর কাজ শুরু হয়েছে কলকাতায়। তার ফলে মস্তিষ্কের সরু হয়ে আসা ধমনীর ভিতরেও স্বাভাবিক হচ্ছে রক্ত চলাচল। হৃদপিণ্ডের স্টেন্ট যেমন যেখানে বসানো হচ্ছে, সেখানেই থেকে যায়, মস্তিষ্কের স্টেন্ট কিন্তু এক বার বসিয়ে আবার সরিয়ে নেওয়া সম্ভব। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মস্তিষ্কের ভিতরে মূলত রক্ত জমাট বেঁধে আটকে যায় ধমনী। বন্ধ হয়ে যায় রক্ত চলাচল। স্টেন্ট সেখানে পাঠিয়ে ধমনী চওড়া করার পরে সেই স্টেন্ট যখন সরিয়ে আনা হয়, তখন তার সঙ্গে বেরিয়ে আসা জমাট বাঁধা রক্ত। কলকাতার বাইপাসের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে গত ছ’মাস ধরে শুরু হয়েছে এই চিকিৎসা। ৬৫ বছরের এক মহিলার মস্তিষ্কে এ ভাবে স্টেন্ট বসিয়ে পরে তা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাঁর মস্তিষ্কে আবার রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গিয়েছেন তিনি।

স্নায়ু বিশেষজ্ঞ তৃষিত রায়ের কথায়, ‘‘হার্ট অ্যাটাক হলে মৃত্যু হতে পারে। কিন্তু স্ট্রোক হলে একজন সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন। এই ব্যবস্থা আরও জনপ্রিয় হওয়া উচিত। এই চিকিৎসার সুবিধা ছড়িয়ে দেওয়া উচিত।’’ সাধারণ ভাবে বলা হয়, মাথায় রক্ত জমাট বেঁধে যদি আচমকা স্ট্রোক হয়, তা হলে সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু সাড়ে চার ঘণ্টার বেশি দেরি হয়ে গেলে কী হবে?

Advertisement

অ্যাপোলো-র স্ট্রোক-বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জয়ন্ত রায় জানাচ্ছেন, স্ট্রোক হওয়ার পরে মস্তিষ্কের যে ভাগে রক্ত পৌঁছোয় না, সেখানে অক্সিজেনের অভাবে প্রতি সেকেন্ডে ৩২ হাজার কোষ মারা যেতে শুরু করে। ফলে, যত তাড়াতাড়ি রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসা যায়, ততই মঙ্গল। জয়ন্তর কথায়, ‘‘সাড়ে চার ঘণ্টার পরে আনলে এখন ক্যাথ-ল্যাবে স্টেন্ট বসিয়ে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করা যাচ্ছে। তবে যে স্ট্রোক রক্ত জমাট বাঁধার কারণে হয়, কেবল সে সব ক্ষেত্রেই তা কাজ করবে। রক্তক্ষরণের ফলে যে স্ট্রোক, সে ক্ষেত্রে কাজ করবে না। দুই, আট ঘণ্টার মধ্যে স্টেন্ট বসালে তবেই কাজ করা সম্ভব। তার চেয়েও দেরি হলে মুশকিল।’’

হাসপাতালের সিইও রূপালি বসু জানিয়েছেন, দু’বছর আগে হাসপাতালে আলাদা করে ‘স্ট্রোক সেন্টার’ খোলা হয়েছে। মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা হচ্ছে, যাতে স্ট্রোক হওয়ার সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যেই রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ওই সময়ের মধ্যে রোগী এলে চিকিৎসার আরও একটি পথ রয়েছে। একটি ইঞ্জেকশন, যা স্ট্রোক হওয়ার সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে দেওয়া হলে জমাট বাঁধা রক্ত তরল হতে শুরু
করে। গত দু’বছরে যত জন ওই সময়সীমার মধ্যে স্ট্রোক হওয়ার পরে হাসপাতালে এসেছেন, তাঁদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ রোগী আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পেরেছেন। সত্যজিৎ রায় (৩৯) তার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ। গত ১৮ মার্চ তাঁকে নিয়ে আসা হয় হাসপাতালে। ইঞ্জেকশনটি দেওয়ার পরে মাত্র তিন দিনের মধ্যে হাত-পা নাড়িয়ে সত্যজিৎ আবার বাড়ি ফিরে যান।

চিকিৎসক শঙ্কর লোহারুকা জানিয়েছেন, স্ট্রোক হওয়ার সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসাটা জরুরি। তবেই ইঞ্জেকশন কাজ করবে। শঙ্করের কথায়, ‘‘সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে আনলেই যে সব রোগীর ক্ষেত্রে ওই ইঞ্জেকশন কাজ করবে, এমনটা কিন্তু নয়। কারও যদি সেই সময়ে রক্তচাপ বেশি থাকে বা শরীরের অন্য কোনও সমস্যা হয়, তবে ইঞ্জেকশন না-ও কাজ করতে পারে।’’ ইদানীং সত্যজিতের মতো তরুণদের মধ্যেও স্ট্রোকের প্রবণতা বাড়ছে। তাঁদের ক্ষেত্রে ইঞ্জেকশন কাজ করার সম্ভাবনা বেশি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন