corona

কথায় কথায় রেগে যান? বিপদ ঠেকাতে এই সব মানতেই হবে

কোন কোন ঘটনায় রেগে যান তা বুঝে নিন। সে রকম পরিস্থিতি যাতে না হয়, চেষ্টা করুন। এর জন্য যদি একটু নত হতে হয় সেও ভাল।

Advertisement

সুজাতা মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২০ ১৪:১০
Share:

অতিরিক্ত রাগে ক্ষতি নিজেরই। ছবি: শাটারস্টক

কথায় কথায় রাগ হয় যাঁদের, তাঁদের শরীরে স্ট্রেস হরমোনের রমরমা। এর প্রভাবে হৃদস্পন্দনের হার অর্থাৎ হার্ট রেট ও রক্তচাপ যেমন বাড়ে, বাড়ে প্রদাহের প্রবণতাও। সবে মিলে হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়ে, কমে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা। কোভিডের এই মরসুমে রোগ প্রতিরোধক্ষমতার কমতি হলে ক্ষতি হতে পারে মারাত্মক।

Advertisement

বিপদ আছে আরও। মনোচিকিৎসক গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাগ তথা যাবতীয় নেতিবাচক আবেগ, যেমন, অ্যাংজাইটি, মানসিক অবসাদ ইত্যাদি যাঁদের বেশি তাঁরা সচরাচর খুব একটা স্বাস্থ্যসচেতন নন বলেও বিপদ বাড়ে। রুটিন মেনে চলা, অসুখ–বিসুখে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া তাঁদের ধাতে থাকে না। বরং ধূমপান, মদ্যপান বা অন্য নেশা করে, উল্টোপাল্টা খেয়ে ও শুয়ে–বসে জীবন কাটান। তার হাত ধরে প্রেশার–সুগার–কোলেস্টেরল ইত্যাদি বেড়ে প্রস্তুত হয় হৃদরোগের ক্ষেত্র। কোভিড হলে বাড়ে তার জটিলতা। কোভিডের আশঙ্কাও বাড়ে। তাই এখন আরও বেশি সংযত থাকতে হবে।’’

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ শিলাদিত্য মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘‘মারাত্মক রাগ এমন একটি জিনিস, যা মানুষকে একা করে দেয়। তার হাত ধরে বাড়ে মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা। কখনও প্রবল অবসাদ। শরীরের জন্য সবকটিই ক্ষতিকারক। অতএব যে কোনও মূল্যে রাগ নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার। যার পোশাকি নাম অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্ট।’’

Advertisement

আরও পড়ুন:অতিরিক্ত ঋতুস্রাবের সমস্যা? অবহেলায় ফল হতে পারে মারাত্মক

অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্ট

• আপনার যে রাগ বেশি সেটা বুঝুন। এর জন্য আপনি ছাড়া আর কেউ দায়ী নয়। যে ঘটনায় আপনি রেগে যান, তাতে অনেকেই মাথা ঠান্ডা রাখতে পারেন।

• এ বার ঠিক করুন রাগ কমাবেন এবং প্রস্তুতি নিয়ে কাজে নেমে পড়ুন।

• কোন কোন ঘটনায় রেগে যান তা বুঝে নিন। সে রকম পরিস্থিতি যাতে না হয়, চেষ্টা করুন। এর জন্য যদি একটু নত হতে হয় সেও ভাল।

• নত হতে হয়েছে বলে যদি খারাপ লাগে, ভেবে দেখুন এর বিনিময়ে আপনার শরীর, মানসিক শান্তি, সম্পর্ক সবই কিন্তু রক্ষা পেল।

দুশ্চিন্তা থেকে মানসিক অবসাদ গ্রাস করে সমস্যা আরও জটিল হতে পারে। ছবি: শাটারস্টক

• চেষ্টা করেও পরিস্থিতি এড়াতে না পারলে প্রতিজ্ঞা করুন, যাই ঘটুক আপনি শুধু শুনে বা দেখে যাবেন, রাগবেন না। এমন কথা বলবেন না যাতে পরিস্থিতি জটিল হয়।

• চেষ্টা বিফলে গেলে অস্থির হবেন না। অন্য আবেগের মতো রাগও খানিকক্ষণের মধ্যে কমতে শুরু করবে। ধৈর্য ধরুন। মুখ বন্ধ রাখুন। সম্ভব হলে সে জায়গা থেকে সরে হেঁটে আসুন কিছুক্ষণ, মাথায় জল ঢালুন, ঘরের কাজ করুন, কারও সঙ্গে কথা বলে মাথা ঠান্ডা করে নিন।

আরও পড়ুন:ভাত খেলেই কি মোটা? উপকার পেতে কতটা খাবেন, কেন​

• এ সব সম্ভব না হলে কাজে আসবে সুইচ অফ–সুইচ অন মেকানিজম এবং ভিজুয়াল ইমেজারি। এ হল পরিস্থিতির মাঝখানে বসে গভীরভাবে অন্য পছন্দের কিছু ভাবা যাতে মন চলে যায় অন্য কোনও জগতে। চিকিৎসকের কাছে শিখে ঘরে প্র্যাকটিস করলে বিপদের সময় কাজে লাগবে।

আরও পড়ুন:বাতের ব্যথায় কাবু? সুস্থ থাকতে কী কী মানতেই হবে​

• ডিপ বেলি ব্রিদিং, যোগাসন, মেডিটেশনে শরীর–মন ঠান্ডা থাকে। চট করে রাগ হয় না বা হলেও কমে যায়।

• অতিরিক্ত রাগে কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি চিকিৎসা করালে কাজ হয় ম্যাজিকের মতো। নিজেও চেষ্টা করে দেখতে পারেন। যার প্রথম ধাপ নিজের মনকে বুঝে নেওয়া।

অতিরিক্ত রাগে কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি করলে ফল পেতে পারেন। ছবি: শাটারস্টক

যেমন–

(ক) আপনার কি চাহিদা খুব বেশি?

(খ) আপনার কি ইগো খুব বেশি? হতাশা বা দুঃখ এলে তা মানতে পারেন না? তাকে রাগ দিয়ে ঢেকে রাখেন?

(গ) জীবনে যা ঘটছে তাকে সহজভাবে মেনে নিতে পারেন না?

(ঘ) সমস্যা সমাধান করতে না পারলে রাগ হয়ে যায়?

আরও পড়ুন:কোভিড রুখতে প্রধান হাতিয়ার মাস্কই, বলছেন চিকিৎসকরা​

এই চারটি প্রশ্নের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে রাগের কারণ। চাহিদা বেশি হলে তা না মিটলে রাগ হবে। ইগো বেশি হলে চাহিদা না মেটায় যে হতাশা বা দুঃখ হয় তা প্রকাশ করতে বা স্বীকার করতে লজ্জা হয়। ফলে তা চাপা পড়ে রাগের আড়ালে। প্রতিটি বিষয়কে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিলে হতাশা এবং দুঃখ পাওয়ার সম্ভাবনা প্রতি পদে। হতাশা এবং দুঃখ জমতে জমতে হয় তা রাগ হিসেবে দেখা দেয়, নয়তো মানসিক অবসাদ আসে। সমস্যা সামনে, কী করব জানা নেই, এই অবস্থাতেও সঙ্গী হয় রাগ বা মানসিক অবসাদ। এই সমস্যার মধ্যে কোনটা আপনার আছে ভেবে দেখুন। খুঁজে পেলে ভাবনা–চিন্তা করে তাদের সামলাতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের সাহায্য নিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন